Inspirational Story Of Anjali Gandhi

বিজ্ঞানের বাইরে ক্যারিশ্মা! অসম্ভবকেও সম্ভব করেছেন অঞ্জলি গান্ধী

সমস্যা শারীরিক হোক বা মানসিক, বিজ্ঞানের হাতে সমাধানের রাস্তা যখন বন্ধ হতে থাকে, তখনও খুলে যায় মহাজাগতিক দরজা। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সেই পথেই হেঁটে অগুনতি মানুষের সমস্যার সমাধান করেছেন অঞ্জলি গান্ধী।

অঞ্জলি গান্ধী

অঞ্জলি গান্ধী

সংগৃহীত প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:৫৩
Share: Save:

জীবন মানেই চড়াই, উৎরাইয়ের গল্প। নানা ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হতে থাকে জীবন। সেই চলার পথে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির মুখোমুখি হই আমরা। নিয়মিত উপায়েই সমাধান খুঁজে নিই। কিন্তু এমন অনেক সময় আসে, যখন সমাধানের পথ বন্ধুর হয়। সেই সমস্যা শারীরিক হোক বা মানসিক, বিজ্ঞানের হাতে সমাধানের রাস্তা যখন বন্ধ হতে থাকে, তখনও খুলে যায় মহাজাগতিক দরজা। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সেই পথেই হেঁটে অগুনতি মানুষের সমস্যার সমাধান করেছেন অঞ্জলি গান্ধী

অঞ্জলি একাধারে হিলার এবং বাস্তু বিশেষজ্ঞ। ক্রিস্টালের মাধ্যমে বিভিন্ন আলোর সাহায্যে নিমেষে সারিয়ে দেন বহু মানুষের জটিল, কঠিন রোগ। পাশাপাশি, তিনি এক জন হিলার! যে কোনও শারীরিক, মানসিক সমস্যার নিরাময়ের জন্য বর্তমানে বহু মানুষ সাহায্য নিয়ে থাকেন এমন চিকিৎসার।

অঞ্জলি পিঙ্ক লাইট এক্সপার্টও বটে! ফ্লোরিডা থেকে এই বিষয় নিয়ে কোর্সও করেছেন তিনি। তার পরেই শুরু হয় তাঁর প্র্যাকটিস। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত অঞ্জলি। তাঁর এমন চর্চার সুখ্যাতি রয়েছে বহু মানুষের মুখেই। অনেকেই বলেন, তাঁর ক্যারিশ্মায় বহু অসম্ভবও সম্ভব হয়ে গিয়েছে। গত এক দশকে এমন উদাহরণও রয়েছে প্রচুর। অঞ্জলি বলেন, “বহু মানুষ তাঁদের জীবনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমার কাছে আসেন। চেষ্টা করি তাঁদের প্রত্যেককে পথ দেখানোর।” সেই গুণের জন্যই নিয়মিত বহু মানুষ ভিড় জমান তাঁর কাছে। অনলাইন ও অফলাইন, দুই জায়গাতেই পরামর্শ দিয়ে থাকেন অঞ্জলি। তাঁর হাত ধরেই জীবনের দিশা ফিরে পেয়েছেন বহু মানুষ।

কী কী অসম্ভবকে সম্ভবকে করেছেন তিনি? উত্তরে অঞ্জলি বলেন, “এমন ঘটনা অনেক রয়েছে। আমি ফোর্থ স্টেজ ক্যানসারের রোগীকে সারিয়ে তুলেছি। যেখানে চিকিৎসকরাও প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। আর এক বার এক মহিলা আসেন আমার কাছে। তিনি কোনও মতেই মা হতে পারছিলেন না। চিকিৎসকেরা সে কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ আমার হাত ধরেই ওই মহিলা ৪১ বছর বয়সে এক ফুটফুটে সন্তানের জন্ম দেন।” পিঙ্ক লাইট এক্সপার্ট ছাড়াও অঞ্জলি ‘ল অফ অ্যাট্রাকশন’-এর শিক্ষিকা। এক জন বাস্তু বিশেষজ্ঞও। বাড়ির যাবতীয় সমস্যার সমাধান এক পলকে করতে পারেন তিনি।

বর্তমানে চেম্বারে রোগীর ভিড় থাকলেও, একটা সময়ে ছবিটা অন্য রকম ছিল। অতিমারির আগে অঞ্জলির ক্লায়েন্টদের প্রায় ৯৫ শতাংশই ছিলেন বিদেশের। সেই সময়ে কলকাতা থেকে হাতে গুনে তিন চার জন মানুষই তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরই মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে একটি গ্রুপ তৈরি করেন অঞ্জলি। যার নাম ‘দ্য হুইল অফ মোমেন্টাম’। এই গ্রুপে ফলোয়ার্সের সংখ্যাই বলে দেয় তাঁর জনপ্রিয়তা ঠিক কতখানি। কী ভাবে ইতিবাচক ভাবনার মাধ্যমে নিজের মন ভাল রাখা যায়, নিজেকে সুস্থ রাখা যায়, সমস্ত দুর্বলতাকে কাটিয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়, সেই বার্তাই এই গ্রুপের মাধ্যমে দেন অঞ্জলি। তবে অতিমারি আমাদের সকলের জীবনকেই অনেকটা বদলে দিয়েছে। অঞ্জলিও এর বাইরে নন। তাঁর কথায়, “করোনার আগে আমার শুধু ইন্টারন্যাশনাল ক্লায়েন্ট ছিল। তবে অতিমারি কেটে গিয়েছে। বর্তমানে কলকাতা থেকেই প্রায় ৫০,০০০ মানুষ আমার ক্লায়েন্ট। যার মধ্যে রয়েছেন টলিউডের বহু নামী তারকা ও ব্যবসায়ীরা।”

বর্তমানে এজেসি বসু রোডে রয়েছে অঞ্জলির চেম্বার। যদিও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার মূল মাধ্যম হল ফোন। সপ্তাহে ৩ দিন, সোম-বুধ-শুক্র দুপুর ৩টে থেকে ৪টে অঞ্জলির সঙ্গে যোগাযোগ করার সময়। অঞ্জলি জানালেন, “সপ্তাহে ৩ দিন এই ১ ঘণ্টার মধ্যে আমার কাছে প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ ফোন আসে। আর সেই সমস্ত ফোনের উত্তর দিতে দিতেই রাত গড়িয়ে যায়। তবে ফোনের সংখ্যা কোনও দিনই ৩০০-র কম হয়নি।”

এই সমস্ত কিছুর পাশাপাশি অঞ্জলি দুই কন্যার মা। এক মেয়ে বিবাহিত। তবে সাফল্যের পথ প্রশস্ত করতে গেলে সকলকেই জীবনে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। অঞ্জলিও তার এই সাফল্যের পথ সুগম করতে গিয়ে পাননি বাপের বাড়ির সঙ্গ। উল্টে বাপের বাড়ির মানুষদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে তাঁর। তা ছাড়াও এক কালে তুমুল অবসাদে ভুগেছেন অঞ্জলি। খেতে হয়েছে একাধিক ওষুধ। আর ঠিক সেই সময়েই সামাজিক মাধ্যমে ফ্লোরিডার একটি গ্রুপের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। সেখানেই খুঁজে পান তাঁর পথপ্রদর্শককে। তাঁর হাত ধরে ২ বছর চলে প্রশিক্ষণ। ভাল থাকার এবং ভাল রাখার ট্রেনিং। যা শেষ হলে সেই গ্রুপেই ল’ অফ অ্যাট্রাকশন পড়াতেন অঞ্জলি। এর পরে কোনও রকম অসুখই আর তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এক তুড়িতে সমস্ত অবসাদকে জীবন থেকে মুক্তি দিয়েছেন তিনি। জুগিয়েছেন ভাল থাকার রসদ। এমনকি, উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যাও তাঁর শরীর থেকে ছুটি নিয়েছে বলেই জানান অঞ্জলি। তাঁর মূল লক্ষ্য ভাল থাকা এবং ভাল রাখা। সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছেন। তাঁর বিশ্বাস, আজীবন এ ভাবেই কাটিয়ে দিতে পারবেন।

আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Inspirational story Women Entrepreneur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE