Inspirational Story

শৈল্পিক সত্ত্বা থেকে সৃজনশীলতায় গড়ে তোলা ব্যবসা, স্রোতস্বিনীর গল্প জোগাবে অনুপ্রেরণা

শিল্পকে কী ভাবে যত্ন ও ভালবাসা দিয়ে লালন করা যায়, তা জন্মের পর থেকেই শিখেছে স্রোতস্বিনী। বিভিন্ন ধরনের পোশাকের প্রতি গভীর ভালবাসা ছিল ছোট থেকেই। ভালবাসতেন রং। ফ্যাশন, বাড়ির অন্দরমহল সাজানো, গ্রাফিক্স ডিজ়াইনিং, আঁকা, মূর্তি তৈরি-- এই সমস্ত কিছু শিখতে শিখতেই বড় হওয়া স্রোতস্বিনীর।

স্রোতস্বিনী মজুমদার

স্রোতস্বিনী মজুমদার

সংগৃহীত প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০২:৪৮
Share: Save:

শিল্পের হাত ধরেই বড় হয়ে ওঠা স্রোতস্বিনী মজুমদারের। তাঁর দাদুর সূত্রে ধরে পরিবারের প্রায় সমস্ত সদস্যের মধ্যেই রয়েছে শিল্পী সত্ত্বা। শিল্পকে কী ভাবে যত্ন ও ভালবাসা দিয়ে লালন করা যায়, তা জন্মের পর থেকেই শিখেছে স্রোতস্বিনী। বিভিন্ন ধরনের পোশাকের প্রতি গভীর ভালবাসা ছিল ছোট থেকেই। ভালবাসতেন রং। ফ্যাশন, বাড়ির অন্দরমহল সাজানো, গ্রাফিক্স ডিজ়াইনিং, আঁকা, মূর্তি তৈরি-- এই সমস্ত কিছু শিখতে শিখতেই বড় হওয়া স্রোতস্বিনীর।

সৃজনশীল কাজকর্মের সঙ্গে সঙ্গে পড়াশোনাতেও ছিলেন তুখোড়। আর সেই কারণেই কোন পেশা তাঁর উপযুক্ত, তা নিয়ে খানিকটা দ্বন্দ্বেই পড়তে হয় স্রোতস্বিনীকে। তবে ভেবেই নিয়েছিলেন কোনও ভাবেই ময়দান ছাড়বেন না। অর্থাৎ, যা কিছু ভালবাসার, তা ছাড়াটা একেবারে নৈব নৈব চ। শুধুমাত্র শৈল্পিক সত্ত্বার প্রতি ভালবাসা কিংবা সাহিত্যের নম্বর যে কারও জীবন নির্ধারণ করে দিতে পারে না, তা কৈশোরেই বুঝতে পেরেছিলেন স্রোতস্বিনী। তাই ভালবাসার জায়গাকে প্রাধান্য দিয়ে পেশাগত ভাবেই বেছে নেন ফ্যাশনের দুনিয়া।

কী ভাবে নিজের সৃজনশীলতাকে গোটা বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা যায়, শুরুতে তা কিন্তু একটা বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্রোতস্বিনীর কাছে। একেবারে শূন্য হাতে সবটা শুরু করেছিলেন। সঙ্গে ছিল শুধু শৈল্পিক মনোভাব। প্রচুর ভাবনা এবং কাজ করার প্রবল ইচ্ছা। সে সব সম্বল করেই গড়ে উঠল স্রোতস্বিনীর নতুন ব্র্যান্ড ‘স্টোর নম্বর সিক্স’। নিজের হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করতে শুরু করলেন নানা ধরনের গয়না। সেই গয়না বাজারের বাকি গয়নার থেকে এতটাই আলাদা যে, তা সাদরে গ্রহণ করলেন সাধারণ মানুষ। গয়নার জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল। খানিকটা গুছিয়ে নেওয়ার পরে নিজের কষ্টার্জিত পুঁজি দিয়ে ব্যবসাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেন স্রোতস্বিনী।

বুদ্ধি খাটিয়ে এক একটি ডিজ়াইন তৈরি করতে কেটে যেত একটা গোটা রাত। গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করার জন্য, তাঁদের ভাল জিনিস উপহার দেওয়ার জন্য কোনও কিছুতেই খামতি রাখেননি স্রোতস্বিনী। তাই শুধু গয়নার চাহিদা মেটানোর কথা না ভেবে, ক্রেতাদের হৃদয়ের কাছে পৌঁছতে চেয়েছেন সব সময়েই। আর এই লড়াইয়ে সর্বদা সঙ্গে পেয়েছেন মাকে। স্রোতস্বিনীর কথায়, “বাড়িতে বসে একা হাতে সমস্ত সামলানো এতটা সহজ হত না যদি না আমার মা আমার পাশে থাকত। সেই ছোট্ট ব্যবসা এখন কিন্তু আর ছোট নেই। বড় আকার নিয়েছে।”

আগে যে কাজ তিনি একা হাতে সামলাতেন, বর্তমানে সেই কাজই সমান ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর দলের সুনিপুণ কর্মচারীরাও। বাচ্চা যে ভাবে বড় হয়ে ওঠে, ঠিক সে ভাবেই একটু একটু করে বড় হয়ে উঠেছে স্রোতস্বিনীর ‘স্টোর নম্বর সিক্স’।

স্টোর নম্বর ৬’ সম্পূর্ণটাই দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাসের জোরে। স্রোতস্বিনীর মতে, “একটা ব্র্যান্ড তৈরি করা মুখের কথা নয়। বর্তমানে কোন পোশাকের সঙ্গে কোন গয়না ট্রেন্ডে রয়েছে, কী ধরনের ডি‌জ়াইন মানুষ বেশি পছন্দ করছে, তা সম্পূর্ণটা জেনে বুঝে তবেই তৈরি হয় এক একটি পিস অফ আর্ট।” এ ছাড়াও গ্রাহকদের পকেটে টান না যাতে না পড়ে সেই বিষয়টাও খেয়াল রেখে কাজ করে চলেছেন স্রোতস্বিনী। অর্থাৎ সেরার সেরা ডিজ়াইনের জিনিস মানুষ কিনতে পারছেন নিজের সাধ্যের মধ্যে। এমন ভাবেই এই গয়নার সাম্রাজ্যকে তিনি তৈরি করেছেন, যা খুব সহজেই সাধারণ মানুষের হাতের মুঠোয় যেতে পারে। কিন্তু তাই বলে কি ফ্যাশনের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে? উত্তরে স্রেফ মুচকি হেসে বললেন, “একেবারেই নয়।”

ব্যবসাকে আরও ফুলে ফেঁপে গড়়ে তোলার জন্য এবং একইসঙ্গে নিজের সৃজনশীলতা সকলের সামনে আরও বড় আকারে তুলে ধরার জন্য খুব শীঘ্রই সরাসরি একাধিক মেট্রো শহরে তাঁর সম্ভার নিয়ে হাজির হতে চলেছেন স্রোতস্বিনী। মূলত নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে যাতে সাবেক সাজের সঙ্গে বিভিন্ন নতুন ধরনের পোশাক মিলিয়ে ফ্যাশনের একটা আলাদা মাত্রা তুলে ধরা যায়, সেই দিকটা প্রাধান্য দিচ্ছেন তিনি। তাঁর কথায়, “বর্তমানে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আমাদের কালেকশন পৌঁছে দিয়েছি। আর শুধু পৌঁছে দেওয়া নয়, এই সংক্রান্ত সমস্ত রকম প্রয়োজন, যেমন অনলাইন পেমেন্ট, অনলাইনে সাইজ় কী ভাবে বুঝবেন, বিদেশে ডেলিভারির ক্ষেত্রে কী কী করতে হতে পারে-- সবেতেই সহায়তা করি আমরা। আমাদের ওয়েবসাইটে এখনকার ট্রেন্ডের কথা মাথায় রেখে ছোট থেকে বড়, যে কোনও মাপের জিনিসপত্র পাওয়া যায়। চেষ্টা করি, জীবনের বিশেষ দিনটা স্মরণীয় করে তোলার জন্য মানুষ যেন ‘স্টোর নম্বর সিক্স’কে বেছে নিতে পারেন চোখ বন্ধ করে।” তিনি আরও জানান, “ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় আলাদা করে নজর কাড়তে চলেছে ‘স্টোর নম্বর সিক্স’। যার কাছে মানুষের সমস্ত রকম চাহিদা মেটানো এবং পাশাপাশি ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে প্রত্যেক দিন নতুন নতুন চমক এনে মানুষের হৃদয়ের আরও কাছে পৌঁছে যাওয়াই মূল লক্ষ্য।”

আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Women Entrepreneur Inspirational story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE