Inspirational Story of Tarunima

ছেলেবেলার ডানপিটে তরুণিমা এখন দক্ষ হাতে সামলান শিক্ষার্থীদের, সঙ্গে ব্যবসাও?

গল্পটা তরুণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর বেড়ে ওঠা রীতিমতো ডাকাবুকো মেয়েদের মতো। কখনও দেওয়াল টপকে খেলতে যাওয়া, কখনও চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করা, কখনও বা মারপিট — খেলনাবাটির ছাপোষা জীবন ছেড়ে ছেলেবেলা থেকে খানিক অন্য় ভাবেই বড় হয়েছেন তরুণিমা।

তরুণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়

তরুণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়

সংগৃহীত প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:২৩
Share: Save:

নিজের ছেলেবেলা কেটেছে, ‘যেন ডানপিটে ছোকরা’ হয়ে! আর বড় হয়ে সেই ডানপিটেদেরকেই দক্ষ হাতে সামলাচ্ছেন তিনি। গল্পটা তরুণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর বেড়ে ওঠা রীতিমতো ডাকাবুকো মেয়েদের মতো। কখনও দেওয়াল টপকে খেলতে যাওয়া, কখনও চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করা, কখনও বা মারপিট — খেলনাবাটির ছাপোষা জীবন ছেড়ে ছেলেবেলা থেকে খানিক অন্য় ভাবেই বড় হয়েছেন তরুণিমা। বর্তমানে তিনি পেশায় অধ্যাপিকা। দীর্ঘ দিন ধরেই শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। সঙ্গে সফল ব্যবসায়ীও বটে! অল্প সময়েই লাভের মুখ দেখেছে তাঁর সংস্থা।

সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়ে উঠেছেন তরুণিমা। বাবা ছিলেন পেশায় সরকারি চাকুরে এবং মা শিক্ষিকা। দুষ্টুমির জন্য স্কুলে পড়ার সময়ে অভিভাবকদের কাছে প্রায়ই অভিযোগ আসত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আমূল বদলে নিয়েছিলেন তরুণিমা। গতানুগতিক নিয়মের বেড়াজাল ভেঙে সমাজের নানা বাঁকা প্রশ্নকে এক ধাক্কায় উড়িয়ে দিয়ে পথ চলেছেন তিনি।

বর্তমানে শিক্ষাবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা তরুণিমা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডিও করছেন। তিনি মনে করেন, “জীবনে কোনও ব্যক্তির উপরে নির্ভরশীল না হয়ে, বরং প্রতিটি নারীর নিজের মতো করে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। আর তার জন্য দরকার আর্থিক সচ্ছলতা। তাই স্বনির্ভর হলে জীবন অনেকটাই দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে যায়।” তরুণিমার এই চিন্তাধারার নেপথ্যে রয়েছেন তাঁর মা। এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তরুণিমা বলেন, “আমি ঠিক আমার মায়ের মতোই। ছেলেবেলায় মা বলত, জীবনে টাকার জন্য অন্যের উপরে নির্ভর করবি না। আমি মায়ের সেই প্রতিটি কথা মেনেই এগিয়ে চলেছি।” নানা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যেও নিজের মতো করেই অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন তিনি।

অধ্যাপনা তো রয়েছেই। তার পাশাপাশি, সম্প্রতি তরুণিমা শুরু করেছেন নিজের ব্যবসা। নাম দিয়েছেন ‘রাপুঞ্জেল বিউটি’। ত্বক ও চুলের যত্নের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রসাধন সামগ্রী তৈরি করেন তিনি। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই তৈরি হয় এগুলি। ব্যবসা শুরু করার আগে এই বিষয় নিয়ে দু’বছর পড়াশোনাও করেছেন তরুণিমা।

অধ্যাপনা থেকে ব্যবসা — এই নিয়েই দিন কেটে যায় তরুণিমার। সকালে কলেজ থেকে পড়িয়ে বাড়ি ফিরে খানিক বিশ্রাম। তার পরেই আবার ব্যবসার কাজে লেগে পড়েন তিনি। তবে তরুণিমার ভাবনা খানিকটা অন্য রকম। কোনও বিষয় নিয়ে অনেক বেশি সময় অপচয় করায় বিশ্বাসী নন তিনি। বরং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যেতেই পছন্দ করেন। এই বিষয়ে তরুণিমার সাফ মত, “আমি ভেবেচিন্তে খুব একটা কিছু করি না। কোনও বিষয়ের প্রাথমিক পর্বটা ঠিক মনে হলেই এগিয়ে যাই। তার পরে সেই সিদ্ধান্তটা সঠিক করে তোলার জন্য মন-প্রাণ দিয়ে কাজ করি। মোদ্দা কথা, মানুষের পছন্দ হলেই হল।”

বর্তমানে এটাই জীবন তরুণিমার। ছেলেবেলার স্বপ্ন সত্যি হওয়ায় উচ্ছ্বসিত তিনি। হাতে মাত্র ১০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন তরুণিমা। খুব কম সময়েই ‘রাপুঞ্জেল বিউটি’কে সাদরে গ্রহণ করেছেন সাধারণ মানুষ। তরুণিমার অক্লান্ত পরিশ্রম আর অদম্য জেদের উপর ভর করে এই সংস্থা আজ বেশ জনপ্রিয়। তবে তাঁর সব কৃতিত্বের নেপথ্যে রয়েছে তাঁর মা ও বাবার ক্রমাগত সমর্থন ও অনুপ্রেরণা। তাঁদের দেখানো স্বপ্নকে সঙ্গী করে আগামীর পথে এগিয়ে চলেছেন তরুণিমা।

আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Inspirational story Women Entrepreneur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Share this article

CLOSE