মৌসুমি কুণ্ডু
বলা হয়, সাধ্য না থাকলে নাকি স্বপ্ন দেখতে নেই! ছোট শহর থেকে উঠে আসা মানুষদের স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাঁদের আর্থিক ক্ষমতা! বাঁচার তাগিদে চলতে থাকে উপার্জনের খোঁজ। আর তার পরে একঘেয়ে দশটা-পাঁচটার জীবন। সেই পথে যদিও হাঁটেননি মৌসুমি কুণ্ডু। বরং নিজের মতো করে বাঁচতে শিখেছেন। জীবন ভরিয়ে দিয়েছেন সৃজনশীলতায়।
পড়াশোনার পাশাপাশি মৌসুমীও ভীষণ ভাবে একটা চাকরির খোঁজ করছিলেন। কিন্তু এটাও মাথায় ছিল যে সেই গতানুগতিকতা তাঁর জন্য নয়। বরং এমন কিছু প্রয়োজন, যেখানে থাকবে তাঁর নিজস্বতা। ছোট থেকেই রূপটানে শখ ছিল মৌসুমীর। অবসর সময়ে সুযোগ পেলেই মেকআপের কাজ করতে ছুটতেন। ইউটিউবে মেকআপের বিভিন্ন ভিডিয়ো দেখে এবং ব্লগ পড়ার সময়েই কনটেন্ট তৈরির প্রতি ভালবাসা জন্মায় মৌসুমির। ধীরে ধীরে সেই ভালবাসা বাড়তে থাকে। অভাব-অনটনের পরিবারে প্রথম প্রথমে কনটেন্ট তৈরির কাজকে স্রেফ বিলাসিতা বলেই ভাবতেন মৌসুমী। কিন্তু সেই ভাবনা ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকে। অনলাইনের কয়েকটি ভিডিয়ো দেখে নতুন করে কনটেন্ট তৈরির উৎসাহ পান। মৌসুমী বলেন, “সেই সময়ে আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম, পারতে আমাকে হবেই। হাতে যে ডিভাইসই থাকুক না কেন, আমি পারব। একটা অ্যান্ড্রয়েড ফোন নিয়ে ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে শুরু হয় আমার ভিডিয়ো তৈরির কাজ।”
মৌসুমীর প্রথম বেশ কয়েকটি ভিডিয়োর কমেন্ট বক্স ভরে গিয়েছিল স্রেফ নেতিবাচক মন্তব্যে। খানিকটা খারাপ লেগেছিল বটে! কিন্তু ভেঙে পড়েননি তিনি। ওই ভিডিয়োগুলিতেই বহু মানুষ মৌসুমীর কাজের প্রশংসা করেছিলেন। আর ঠিক তাঁদের জন্যই নতুন উদ্যমে চলতে থাকে মৌসুমীর কাজ। তাঁর কথায়, “ধীরে ধীরে ফ্রিল্যান্সিং কাজের টাকা জমিয়ে ক্যামেরা কিনলাম। মন দিলাম ভিডিয়ো তৈরিতে। স্বপ্ন যেন নতুন দিশা পাচ্ছিল।”
কনটেন্ট তৈরির প্রথম দিকে কোনও রোজগার ছিল না মৌসুমীর। এমনকি ভিডিয়ো বানানোর জন্য যে প্রোডাক্টের প্রয়োজন, তা-ও জোগাড় করতে পারছিলেন না। সেই সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর মা। মৌসুমী বলেন, “আমি রোজ কাঁদতাম। ভীষণ ভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। সেই সময়ে মা-ই আমাকে সান্ত্বনা দেয়। আর্থিক ভাবে না হোক, অন্তত কাঁধে হাত রেখে মা-ই প্রথম বলেছিল, তুই এগিয়ে যা।”
সময় নিজের খেয়ালে এগিয়ে চলে। হঠাৎ এক দিন একটি পেড ক্যাম্পেনের কাজ পান মৌসুমী। এর পরে আর ঘুরে তাকাতে হয়নি। ইন্টারনেটে পাওয়া একটি লেখার একটি লাইন মৌসুমীর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। লাইনটি ছিল, ‘ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ো না। বরং নিজেই ট্রেন্ড হয়ে যাও।’ প্রসঙ্গত, তার পরেই মৌসুমী সিদ্ধান্ত নেন বাংলা গানের ট্রানজ়িশন ভিডিয়ো বানানোর। সেই সময়ে বাংলায় বিউটি কনটেন্টের সংখ্যাটা বেশ কম। অন্য দিকে, বাংলা গানের ব্যবহারও তেমন হত না।
এই প্রসঙ্গে মৌসুমী বলেন, “প্রথমে অনেকেই বারণ করেছিল। বলেছিল, এমন ভিডিয়ো দর্শকেরা দেখবে না। কিন্তু আমি চেয়েছিলাম আমার কনটেন্টগুলিতে বাংলার সংস্কৃতি ফুটে উঠুক। ধীরে ধীরে ভালবাসাও পেলাম। আর এখন তো এটাই ট্রেন্ড। এখন বহু মানুষ আমায় নিয়মিত ফোন করেন, মেসেজ করেন, দেখা করতে চান। এর থেকে ভাল আর কী-ই বা হতে পারে!”
শুরুর সময়টা কঠিন হলেও আজ নেটমাধ্যমে মৌসুমি একটা বড় নাম। এই বছরেই ইউটিউবের ব্লগে মৌসুমির গল্প ঠাঁই পেয়েছে। এই বছরেই অংশগ্রহণ করেছেন ইউটিউব ফ্যান ফেস্ট-এ। সেই সমস্ত মানুষের সঙ্গে স্টেজ ভাগ করে নিয়েছেন মৌসুমি, একটা সময় যাঁদের কনটেন্ট দেখে তিনি কনটেন্ট তৈরির অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।
তবে এখানেই শেষ নয়। মৌসুমির স্বপ্ন আরও বড় হওয়ার। নিজের স্বপ্নকে লালন করে এগিয়ে যাওয়ার। সেই চেষ্টাতেই দিনরাত পরিশ্রম করছেন তিনি। মৌসুমির বিশ্বাস, আগামী দিনে তাঁর মায়ের হাসি আরও চওড়া হবে। তাঁর গর্বে মুখ উজ্জ্বল হবে গোটা বাংলার।
আরও অপরাজিতাদের গল্প জানতে ক্লিক করুন —অপরাজিতা ২০২৩
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy