Advertisement
Durga Puja 2019

কানাডায় প্রতিমা সাজাতে সাজাতে শিউলি ফুলের গন্ধ পাই

ধারণাই ছিল না যে মাত্র দু’লক্ষ বাসিন্দার এই শহরেও দুর্গাপুজো হয়!

উদয়ন রায়
সাস্কাটুন, কানাডা শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১২:৫৫
Share: Save:

প্রায় কুড়ি বছর দেশ ছাড়া। এর আগে কোপেনহাগেনে যখন থাকতাম, তখন সেখানে বিশেষ বাঙালি থাকতেন না। আমরা যারা ছিলাম, তারা সবাই মিলে শুধু একটা বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করতাম। আড্ডা-গল্প-গানবাজনা-ভূরিভোজ থাকত, তবে তাতে পুজোর কোনও গন্ধ থাকত না।

কানাডায় আসার পরে অবশ্য টরন্টোয় প্রবাসী পুজো দেখেছি। বেশ কয়েক বছর আগেই ওখানে পাঁচটা আলাদা আলাদা পুজো হত, যার মধ্যে কালীবাড়ির পুজো ধারে ও ভারে সব চেয়ে বড়। পুজোর মধ্যে এক শনিবার সকালে গিয়ে দেখি, প্রায় হাজার পাঁচেক মানুষের জমায়েত সেখানে। ভোগ প্রসাদের জন্য ঘণ্টা-পেরোনো লাইন। তা ছাড়া, বেদান্ত সোসাইটি-সহ আরও কয়েকটি পুজো দেখেছিলাম সে বছর।

দশ বছর আগে ‘কানাডিয়ান প্রেরি’র এই শহরে যখন আসি, তখন ধারণাই ছিল না যে মাত্র দু’লক্ষ বাসিন্দার এই শহরেও দুর্গাপুজো হয়! কোনও বাঙালি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হতেই ছ’মাস কেটে গেল। তার পরে পরিচয় হল এক পরিবারের সঙ্গে, তিনি সাস্কাটুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, কলকাতার মানুষ। তাঁর কাছেই শুনলাম, সাস্কাটুনেও দুর্গাপুজো হয়। এবং তা হচ্ছে বেশ কয়েক দশক ধরে।

এর পরে কেটে গিয়েছে দশ বছর। সাস্কাটুনে শিকড় গেড়েছি। জড়িয়ে পড়েছি এখানকার পুজোর সঙ্গেও। এখন প্রতিমা সাজাতে সাজাতে ছোটবেলার ইস্কুল-মাঠের সেই শিউলি ফুলের যেন গন্ধ পাই।

এখানে প্রচুর প্রবাসী ভারতীয় রয়েছেন, হিন্দু সোসাইটি রয়েছে আর মোটামুটি বড় একটা মন্দিরও আছে। আমাদের পুজো হয় সেই মন্দিরেই।দেবীপক্ষের কোনও এক শনিবারে, কলকাতায় দুর্গাপুজোর আগে-পরে। কপাল ভাল থাকলে পুজোর মধ্যেই শনিবার পড়ে, যেমন পড়েছে এ বছর। সাধারণত একদিনের মধ্যেই পুজো সারা হয়ে যায়। কম সময়ের দুঃখটা আমরা ভোলার চেষ্টা করি আমাদের আন্তরিকতা দিয়ে। পুজোর আয়োজন, রান্না, প্রতিমাও মন্দির সাজানো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান— সব আয়োজন আমরা কয়েকটি বাঙালি পরিবার মিলেই করে ফেলি। তাই পুজো একদিনের হলেও তার আগে-পিছে অনেক দিন ধরে আমাদের সকলের স্বেচ্ছাশ্রম থাকে।

আমাদের পুজো আক্ষরিক অর্থে সর্বজনীন। পুজোর দিন সকাল ও বিকেল মিলিয়ে ৩৫০-৪০০ জনের জন্য খাওয়ার আয়োজন করা হয়। রান্নাও করি আমরা নিজেরাই। সারা ভারতের প্রবাসী বন্ধুরা আমন্ত্রিত থাকেন।

এ বার আমাদের পুজোর সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ। পঞ্চাশ বছর আগে যাঁরা এই পুজো শুরু করেছিলেন, সেই বয়োজ্যেষ্ঠ বাঙালি সাস্কাটুনবাসীদের কয়েক জন এখনও আছেন আমাদের উপদেষ্টা হিসেবে। তাঁরা পুজোটি শুরু করেছিলেন বাড়ির পুজো হিসেবে। ক্রমে ক্রমে পুজো বড় হয়েছে, সর্বজনীন হয়েছে, জায়গা বদলে বদলে এখন হিন্দু সোসাইটির মন্দিরে স্থান পেয়েছে। কিন্তু যেটা হারিয়ে যায়নি, সেটা হল আন্তরিকতা আর আদ্যন্ত ঘরোয়া একটা পরিবেশ। যেহেতু এ বার পুজোর সুবর্ণজয়ন্তী, আমাদের আয়োজন তিন দিনের। অতিথি শিল্পী আসছেন কলকাতা থেকে। বাংলা গানের জলসা হবে রবিবার। প্রকাশিত হচ্ছে স্মরণিকা পত্রিকাও। খাওয়া দাওয়া চলবে তিন দিন ধরে। গুণীজন আর বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের সংবর্ধনার আয়োজনও করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE