Advertisement
ananda utsav 2022

পুজোর সময় সান ফ্রান্সিসকো যেন হয়ে ওঠে এক টুকরো গ্রাম বাংলা

আর সেই তেরো পার্বণের মধ্যে অন্যতম বাঙালির দুর্গাপুজো। তাই প্রবাসে থেকেও বাঙালি দুর্গাপুজো করতে ভোলে না। প্রবাসে থাকা বাঙালির কাছে দুর্গাপুজো যেন ইচ্ছেপূরণ।

সান ফ্রান্সিসকোর পুজো

সান ফ্রান্সিসকোর পুজো

সোহিনী চৌধুরী, সান ফ্রান্সিসকো
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:৪৬
Share: Save:

এ কথা তো সবাই জানে যে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর সেই তেরো পার্বণের মধ্যে অন্যতম বাঙালির দুর্গাপুজো। তাই প্রবাসে থেকেও বাঙালি দুর্গাপুজো করতে ভোলে না। প্রবাসে থাকা বাঙালির কাছে দুর্গাপুজো যেন ইচ্ছেপূরণ। ছোটবেলার পুজোর দিনগুলোকে আবার ফিরে পাওয়া, সেই ভোগ খাওয়া, অঞ্জলি দেওয়া, ছোটবেলার করা সেই নাটক, নাচের আনন্দ যেন নিজের ছেলেমেয়েদের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে আবার ফিরে পায় প্রবাসী বাঙালি।

এই ইচ্ছাপূরণের স্বপ্ন নিয়েই সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়া ট্রাই ভ্যালিতে আগমনীর পথ চলা শুরু। ২০১৭ সালে হৈ হৈ করে আগমনী পুজোর সূচনা। তার পর থেকে আগমনী যেমন বেড়েছে সদস্য সংখ্যায়, তেমনই তার বিস্তার ঘটেছে ট্রাই ভ্যালির মানুষ জনকে নিয়ে সারা বছর ধরে চলতে থাকা নানান সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও সমাজসেবার কাজের মধ্যে দিয়ে। শুধু মাত্র বে এরিয়াতেই নয়, আগমনীর সমাজসেবার প্রচেষ্টা নানান সংস্থার মাধ্যমে আজ প্রসারিত হয়েছে সুদূর পশ্চিম বাংলা পর্যন্ত। মুক্তি নামক স্বয়ংসেবী সংস্থার হাত ধরে আর্থ সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা বিভিন্ন বর্গের মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে আগমনী। আগমনীর সাহায্যে পশ্চিমবাংলার সুন্দরবন এলাকায় খুলেছে আগমনী কিশলয় বিদ্যালয়। এছাড়া মুক্তি কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ফান্ডের সাহায্যে বহু গ্রামীণ মহিলার আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার সংস্থান যোগাচ্ছে আগমনী। আজ আগমনীর নাম ট্রাই ভ্যালিতে থাকা ভারতীয়দের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। নৃত্য মেলা, ডান্ডিয়া ইত্যাদি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতীয় অবাঙালি সম্প্রদায়কেও আগমনী পাশে পেয়েছে।

উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার ইস্ট বে’তে পাহাড়ে ঘেরা এক নয়নাভিরাম পরিবেশে আমাদের পুজো হয়। আমাদের দুর্গাপুজো এই বছর ষষ্ঠ বছরে পদার্পণ করল। প্রতি বছরের মতো এই বছরও আগমনী সবার কাছে নিয়ে আসছে নতুনত্বে ভরা নানান আকর্ষণের ডালি। পুরাতন একচালা প্রতিমার জায়গা এ বার নেবে কুমোরটুলি থেকে সদ্য নিয়ে আসা পাঁচ চালার ঠাকুর। কুঁড়ে ঘরের আদলে তৈরি করা পুজো মণ্ডপ দেখে মনে হবে যেন সান রামনের বুকে নেমে এসেছে এক ছটাক গ্রাম বাংলা। এই মিলন মেলায় থাকছে নানান ধরনের দোকানপাট আর সেখানে পাওয়া যাবে হরেক রকম বিকিকিনির সরঞ্জাম। এক দিকে যেমন গিন্নির জন্য আছে শাড়ি গয়নার সমাহার তেমনই গৃহকর্তার জন্য থাকছে অর্থনৈতিক প্ল্যানার, ইনসিওরেন্স কোম্পানির মতো স্টলও। ভোজনরসিক বাঙালির জন্য থাকছে প্রচুর পেট পুজোর আয়োজন। মাছের চপ, ডিমের চপ, রোল, কাটলেট, বিরিয়ানির গন্ধের চুম্বক শক্তিতে বিভ্রান্ত হয়ে আমরা নিজেদের বলব “নিয়ম, তোমায় দিলাম আজকে ছুটি”। ছোটদের জন্য থাকছে টয় ট্রেন, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মতো অনেক আনন্দ আয়োজন।

বিশাল মঞ্চ জুড়ে স্থানীয় কলাকুশলীরা দর্শকদের মোহিত করে রাখবেন নাচ,গান ও নাটক দিয়ে। গ্রাম বাংলার পরিবেশ পূর্ণতা পাবে দোহারের সুরের মূর্ছনায়। হ্যাঁ, কলকাতা থেকে বাংলা লোকসঙ্গীতের ধারক বাহক গানের দল, দোহার, এবার আসছে পুজোর আসর জমিয়ে তুলতে। এ ছাড়াও থাকছে বিভিন্ন গেমস, কুইজ আরও কত কিছু। বিসর্জনের বাজনা, সিঁদুর খেলা, “আসছে বছর আবার হবে” অঙ্গীকার শেষে মা দুর্গার ঘরে ফেরার পালা| বাপের বাড়ি থেকে মিষ্টিমুখ না করে কোন মেয়ে ফিরতে পারে? তাই আগমনী আয়োজন করেছে এক জমজমাট মিষ্টি উৎসবের| এই উৎসবের আমন্ত্রণ অবারিত| আমাদের সদস্যরা পরম যত্নে বাড়িতে বানানো মিষ্টির সম্ভার নিয়ে আসছে সকলের জন্য| থাকছে চেনা-জানা হরেক মিষ্টির সঙ্গে ঠাকুরমা দিদিমার হেঁশেলের স্মৃতিবিজড়িত কিছু সাবেকি মিষ্টান্নও| দিনের শেষে আনন্দ উৎসবের শেষবেলায়, মায়ের বিসর্জনের পালা। সমস্ত রোগ, পাপ, শোক তাপ দূর হোক, সকল মহামারি দূর হোক, দেশের দশের ভাল হোক, পৃথিবী থেকে সর্বব্যপী হিংসা দূর হোক — এই প্রার্থনা নিয়েই চোখের জলে মাকে বিদায় জানাবে আগমনীর সদস্যবৃন্দ।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE