প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

ইংল্যান্ডের ছোট্ট শহর ‘নরউইচ’, সারা শহরে হয় একটি মাত্র দুর্গাপুজো, পুজো করেন ‘হিন্দু প্রিস্ট’

শীতে বরফ ঘেরাই থাকে ইংল্যান্ডের ‘নরউইচ’। কয়েকজন বাঙালির উৎসাহে হয় দুর্গাপুজো। দেশে গেলে পুজোর উপাচার সংগ্রহ করে আনেন স্থানীয় বাঙালিরা। পুজো করেন ইংল্যান্ড-খ্যাত ‘হিন্দু প্রিস্ট’।

পৌলোমী মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪ ১৯:৩০
ছবি সংগৃহিত

ছবি সংগৃহিত

ইংরেজ পাড়ায় বাঙালির সেরা উৎসবের কোন চিহ্নই নেই। ঢাকের আওয়াজ, উৎসবের রোশনাই, পাড়ায়-পাড়ায় মাইকে গানবাজনা, ম্যাডক্স স্কোয়ারের আড্ডা, লাইন দিয়ে মাতৃমূর্তি দর্শন কিছুই নেই, তবু মনে হয় এ পৃথিবীর অনন্ত গভীরে কোথাও যেন শিকড়ে-শিকড়ে বয়ে চলেছে আনন্দবার্তা। তারই অনুরণন যেন সাত সমুদ্র পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বরফের দেশের আকাশে, বাতাসে, দীর্ঘ ওক, বার্চ আর ম্যাপেল গাছের পাতায় পাতায়। এখানে শরৎ ঋতু নেই। অবিরাম ঝরে পড়া গাছের পাতায়-পাতায়, পথে পড়ে থাকা অজস্র হেজেল নাটের ওপর শীতের আগমনী তার স্বরলিপি লিখে রেখে যাচ্ছে।

নরউইচ শহরটিতে একটি মাত্র দুর্গা পুজো হয়। ‘নরউইচ বেঙ্গলী অ্যাসোসিয়েশনের’ বারোয়ারি দুর্গা পুজো এ বছর ১৯ শে অক্টোবর হবে। বেঙ্গলী অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি শ্রী শুভদীপ দত্তগুপ্তর কাছ থেকে জানা যায় যে এই পুজো সম্ভবত ২০১৪ বা ২০১৫ সালে প্রথম শুরু হয়। কোভিডের জন্য ২০১৯ সালে পুজো বন্ধ হয়ে যায়। ২০২৩ সালে কয়েকজন উদ্যমী তরুণ-তরুণীর উৎসাহে আবার শুরু হয় ‘নরউইচ’-এর দুর্গাপুজো। নরউইচ-এর ‘টানস্টল’ নামক একটি জায়গায় একটি হিন্দু মন্দিরে, প্রতিষ্ঠিত দুর্গা প্রতিমার পুজো করা হয়। দুর্গা প্রতিমাটি তৎকালীন কয়েকজন বাঙালি অধিবাসী কলকাতা থেকে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁরা প্রায় সকলেই লন্ডন শহরে পাকাপাকিভাবে চলে যান, যাওয়ার আগে এই মন্দিরে প্রতিমা দান করে যান তাঁরা। মন্দিরটি ‘বৈদিক কালচারাল সোসাইটি (ইস্ট অ্যাংলিয়া)’ নামে একটি অবাঙালি সংস্থার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। পনেরদিনে একবার মন্দিরটি খোলা হয় এবং দেবী দুর্গাসহ অন্যান্য হিন্দু দেবদেবীর পুজো করা হয়।

ছবি সংগৃহিত

ছবি সংগৃহিত

আগামী বারো তারিখে মন্দিরের দরজা খোলার পালা। ‘নরউইচ বেঙ্গলী অ্যাসোসিয়েশন’ এই সংস্থাটির কাছ থেকে দুশো পাউন্ড দক্ষিণা দিয়ে একটি দিনের জন্য মন্দিরটি ভাড়া নিয়েছে। গতবছরের মতোই সারাদিন ধরে ষষ্ঠী থেকে দশমীর সিঁদূরখেলা, খাওয়াদাওয়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব পালন করা হবে।

লন্ডনের ‘হন্সলো’ থেকে বিখ্যাত পুরোহিত শ্রী তনয় মুখোপাধ্যায় আসবেন। সমস্ত ইংল্যান্ডে এঁকে সবাই ‘হিন্দু প্রিস্ট’ নামে এক ডাকে চেনে। পূজার উপাচারগুলি সংস্থার প্রতিনিধিরা যে যখন দেশে যান সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। বেলপাতা নিয়ে আসবেন স্বয়ং পুরোহিতমশাই। আগামী ১৯ তারিখে এই দুর্গোৎসবে ‘নরউইচ’ শহরের শেরিফ উপস্থিত থাকছেন। বেশ কিছু খাবারের স্টলেরও আয়োজন করা হয়েছে।

‘নরউইচ’-এ এটি আমার প্রথম দুর্গাপূজা। এর আগে যখন ইয়র্কশায়ারের ‘বেভারলি’-তে থাকতাম তখন ‘বার্নসলে’ নামে একটি জায়গায় ‘শেফিল্ড অ্যাণ্ড ডিস্ট্রিক্ট দুর্গোৎসব অ্যাণ্ড কালচারাল কমিটি’ আয়োজিত দুর্গাপূজায় থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল।

যেহেতু ‘বেভারলি’ একেবারেই ব্রিটিশ অধ্যুষিত এলাকা, তাই সেখানে দুর্গাপূজা হয় না। পুজো দেখার জন্য প্রায় দু’ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে অষ্টমীর দিন আমরা সবাই ‘শেফিল্ড’-এ গিয়েছিলাম। ওখানে কমিটির প্রতিনিধিরা পুজোর চারটি দিনই ছুটি নেন এবং ‘লিডস’ ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে এসে এই চারদিনই হোটেল ভাড়া করে থাকেন। স্থায়ী হলে দুর্গা প্রতিমা পুজো হয়। পুজো উপলক্ষ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে। শাড়ি ও অন্যান্য ক্ষুদ্র শিল্পের স্টল দেওয়া হয়। প্রায় পাঁচশো লোক এই চারদিন ধরে ভোগ খান ও আনন্দ উৎসবে সামিল হন।

বিলেতে দুর্গাপুজোর প্রথম এবং প্রধান খলনায়ক বা অসুর হলো আবহাওয়া। যুগপৎ শীত এবং বৃষ্টি শুম্ভ-নিশুম্ভের মতো সমস্ত আনন্দ মাটি করে দিতে চাইলেও বাঙালির প্রধান উৎসবের উদ্দীপনাকে নষ্ট করতে পারেনি কখনও। কারণ, আমার মনে হয়, শাস্ত্র নয়, উপাচার নয়, বাঙালির পুজোয় প্রধান উপকরণ হল ভক্তি এবং আন্তরিকতা।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Ananda Utsav 2024 Durga Puja 2024 NRI Puja England Norwich City
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy