প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

আটলান্টার পুজো! তিনদিন ফুসফুসে ভরে দেবে সারা বছরের দম

১৯৭৯-তে আটলান্টার প্রথম পুজোর শুরু হয়েছিল এক বাড়ির গ্যারেজে। সেই পুজো ৩৭ বছরের সুদীর্ঘ পথ। এ বছরের পুজোর থিমের বিষয় ‘কলকাতা’।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:১৬

১৯৭৯-তে আটলান্টার প্রথম পুজোর শুরু হয়েছিল অশোক ভট্টাচার্য ও সুমিত্রা ভট্টাচার্য-র বাড়ির গ্যারেজে। সব আটলান্টাবাসীকে নিয়ে। কয়েক বছর পর এর নামাকরণ হয় ‘আটলান্টা দুর্গা পুজা কমিটি’ । পরবর্তী কালে, ১৯৮৬-তে ‘পুজারি’ র পুজো তার বর্তমান রূপ ও নাম নিয়ে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করেছে।

পুজো শুরু হয় জুলিয়া রবার্টসের স্মার্না শহরে ‘কুপার লেক রোড’-এ ‘ইন্ডিয়ান আমেরিকান কালচারেল এস্যোসিয়েশন’-এর আই.সি.আর.সি. বিল্ডিং-এ। স্টেজের ওপর পুজোমণ্ডপ, দেবীর পাশেই মঞ্চ, অনুষ্ঠান।

সেই পুজোতে হয়েছিল নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা নাটক ‘ভাড়াটে চাই’য়ের অভিনয়। অভিনয়ে ছিলেন অমিতাভ সেন-মছারাতুল হক আখমল সহ অন্যান্যরাও। এ ছাড়াও অন্য রাজ্য থেকে আসা ক্লেমসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পরিবেশিত গণসঙ্গীত এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান।

পুরুতমশাই আট্লান্টার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। না ছিল কোনও কার্যনির্বাহী কমিটি, তাই না ছিল কোন ‘পদ’ বা ‘পদাধিকারী’। আয়োজনকারী নিজেরাই খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করতেন।

পুজোয় অনুদান গ্রহণ করলেও কোনও নির্দিষ্ট চাঁদা ধার্য ছিল না। তখন পুজো ছিল দু’দিনের। প্রায় শতাধিক দর্শক সত্বেও ঘরোয়া আতিথেয়তার সুনামে সর্বজনবিদিত ছিল সে পুজো। অবার্ন, বার্মিংহাম, অগাস্টা, টেনেসি, সাউথ ক্যারলিনা, নর্থ ক্যারোলিনা ইত্যাদি জায়গায় কোনও পুজো তখন না হওয়াতে নানা রাজ্য থেকে আসতেন অতিথিরা।

আজ পেরিয়ে এসেছে সেই পুজো ৩৭ বছরের সুদীর্ঘ পথ। পুজারি-র এই পুজো নিয়ে শুভশ্রী নন্দী (আটলান্টা) জানাচ্ছেন, এ বছরের পুজোর থিমের বিষয় ‘কলকাতা’। আটলান্টার ‘পুজারি’ সংস্থা তাই সাজসজ্জার ঘটা ব্যাপক। রিকশ, ট্রাম, বাস, হাওড়া ব্রিজ, দক্ষিণেশ্বর, নন্দন —এই সব ‘ত্রি মাত্রিক আকার’ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পুজোর আঙিনা দেখেই ‘হাঁ’ হয়ে যাবে সবাই! কল্পনায় ফিরে পাবে কলকাতা-জীবন!

পুজোকমিটি-র পাঁচশো নারকেলের নাড়ু-সন্দেশ গড়া হাতগুলিই, ক্লান্তিকে সরিয়ে আবার ভোর চারটেয় উঠে ভোগের প্রসাদ রান্না করে পৌঁছে যাবে পুজোর আয়োজনে। দুর্গা থেকে কলা-বৌ সকলকে শাড়ি পরিয়ে কিছুক্ষণ বাদে বাদেই পুরুত মশাইয়েরর নির্দেশে উলুধ্বনি দেবে, নবমী পুজোর অঙ্গ হিসেবে নতুন ছুরি দিয়ে এক কোপে চালকুমডো কাটার জন্য টেনশন করবে। হরিতকি, কর্পুর থেকে একশো আটটি পদ্ম— এদের সকলেরই এই দুর্গাপুজো সুবাদে ‘জাহাজ’ বা ‘উড়োজাহাজ’ চড়া হয়ে গেল।

এখানকার মাটির গুণের অভাব মেটাতে কলকাতার ‘দশকর্মা ভাণ্ডার’ থেকে আনা হয় পুজোর অনুসঙ্গ— ধান, কুশ, যব, মহাস্নানের তেল-জল সহ দশ রকমের মৃত্তিকা। পুজো কমিটির ললাটে প্রতি বছরই পুজোর হইচইয়ের তুলনায় ‘কৃচ্ছ্বসাধন’-ই বেশি। পুরোহিতেরা ‘সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার‘ হলেও বা কী এসে গেল, নিষ্ঠাভরে পুজো সম্পাদনার দায়িত্বপালনে মাছ-মাংসের অমোঘ ডাককে অগ্রাহ্য করেন তিন দিন অবলীলায়।

ভোর হতেই এঁদের পুজোর আয়োজন শুরু হয়। সকাল আটটার আগে, সবাই হাজির হওয়ার আগেই উপস্থিত হন এঁরা। ষষ্ঠীর ‘বোধনে’ মা-কে আহ্বান করতে গিয়ে গণেশ ও কলা বৌ-কে বিয়ে দিতে এগিয়ে যান। মেতে ওঠেন পাঁচ ‘এয়ো’ মিলে শাড়ি পরানোর আচারে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ‘পুরুষদের পোশাক প্রতিযোগিতা’ থাকে। ‘ফ্যাশন প্যারেড’-এর নাম রাখা হয়েছে ‘রূপং দেহি’। পুজারি সংস্থার প্রত্যেকটি সভ্য পরিবারের একজন নিদেনপক্ষে যেমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন, তেমনই মঞ্চ ব্যবস্থাপনার লোকেরা সময়মতো ঠিকঠাক ভাবে যাতে একটার পর একটা অনুষ্ঠান হয় সে জন্য তৎপরতায় প্রতিটি ‘মিনিট’ বাঁচিয়ে ‘কার্পণ্যে চ্যাম্পিয়ন’ হন।

এ বছরের খাদ্য তালিকায় বিশেষ পদ, কচিপাঠার মাংস। পুজোর এই তিন দিন এক হেঁশেলের রান্না খাবে এক পাড়া। যখন তখন গলা ভেজানোর জন্য হাতের নাগালে থাকবে গরম চায়ের সঙ্গে নোন্তা ও ক্রিম বিস্কুট। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ‘বিরতি’-র সময়েও অপেক্ষা করবে সবার জন্য শস্যের তেল, ধনেপাতা, চাটমশলা-কাঁচালঙ্কা-কুঁচো পেঁয়াজ দিয়ে শিঙাড়া সমেত বাটিভর্তি মুড়ি মাখা এবং তৎসহযোগে গরম চা। যার দায়িত্বে পুজারির পুরুষ সভ্যরা।

পুজারির পুজোসংখ্যা ‘অঞ্জলি’-র পাতায় লেখার সঙ্গে জড়ো হচ্ছে বিজ্ঞাপন। কলকাতা থেকে দুই শিল্পী যাচ্ছেন, তাঁদের অনুষ্ঠানের টিকিট-চাহিদা তুঙ্গে।

পুজোর দিনগুলোতে মা দুর্গার সামনের আসনের তিনটি সারি আলো করে থাকবেন ‘বৃদ্ধাশ্রম’-এর সুরকে ‘বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ’ দেখিয়ে দেশ থেকে আসা এবং এখানে থাকা বাবা-মায়েরা। এঁদের খাবারের লাইনে যাতে দাঁড়াতে না হয়, সে জন্য স্বেচ্ছ্বাসেবীরা এনে দেবেন তাঁদের হাতের কাছে খাবার। ‘শৃঙ্খলা’ প্রবাসের পুজোব্যবস্থাপনার এক অনন্য মন্ত্র। সেই জন্যই পুষ্পাঞ্জলির ফুল দেবীপদে অবিন্যস্ত না ছুঁড়ে সংগ্রহ করা হবে বাটিতে।

সংগঠকরা জানাচ্ছেন, ‘‘এই তিনদিন ফুসফুসে ভরে দেবে সারা বছরের দম। তিথির বাঁধ ভেঙে প্রবাসের এই অ-তিথি কেন্দ্রিক পুজোর এই বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত, গোঁড়াদের চোখে বালখিল্য দেখালেও, মনে রাখবেন যে, বাঙালির জাতীয় উৎসবকে হালের রাষ্ট্রসংঘের অনেক আগেই প্রবাসীরা করেছিল ‘আন্তর্জাতিক’।’’

ছবিঃ সমরেশ মুখোপাধ্যায়, কল্লোল নন্দী, অমিতাভ সেন

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

NRI Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy