ছোট পর্দায় তিনি নিজের কেরিয়ার গড়ার পাশাপাশি শত্রু নিধনে বেশ ব্যস্ত। ধারাবাহিকের হাত ধরে তিনি এখন বাঙালির ঘরের মেয়ে ‘ফুলকি’ হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে ধারাবাহিকের কাজ নিয়ে পুজোর মুখে বেজায় ব্যস্ত তিনি। তবে তার মাঝেই পুজোর পরিকল্পনা সারা দিব্যাণীর।
আরও পড়ুন:
গত বছর পুজোর সময় কলকাতায় ছিলেন না ফুলকি। তবে এ বারের পুজো আর মিস্ নয়! পুজোর পরিকল্পনা জানিয়ে আনন্দবাজার ডট কমকে দিব্যাণী বললেন, “আগের বছর কাশ্মীর ঘুরতে গিয়েছিলাম। এ বার এখানেই থাকব, কোথাও ঘুরতে যাচ্ছি না। আগের বছর খুব কষ্ট হয়েছে, যেখানেই যাচ্ছি দেখছি লোকজন নতুন জামা পরে ছবি দিচ্ছে। দশমীর দিন সবাই মিষ্টি খাচ্ছিল প্রচুর রকমের, সেগুলি মিস্ করেছি, আমি মিষ্টি খেতে খুব ভালবাসি। এ বছর কিচ্ছু মিস করব না। খাওয়া-দাওয়া করব, ঘুরব প্রচুর। অনেক ঠাকুর দেখব।”
দিব্যাণী জানালেন তিনি ইতিমধ্যেই ঠাকুর দেখা শুরু করে দিয়েছেন। হ্যাঁ, মহালয়াতেই তিনি টালা প্রত্যয়ের ঠাকুর দেখে ফেলেছেন। জানালেন, “আর দু’-তিনদিনের মধ্যে অনেকগুলি ঠাকুর দেখে ফেলব অনেকগুলি। মূল পুজোর সময় আমি অনেক খাওয়া-দাওয়া করব। অনেক ভাল ভাল ছবি আসছে, সেগুলি দেখব। আসলে দুর্গাপুজো মানেই কলকাতা বা বাড়িতেই থাকা। মোদ্দাকথা দুর্গাপুজোকে এক্সপিরিয়েন্স করা।”
তবে এখন কাজের ফাঁকে ঠাকুর দেখা চললেও স্টুডিয়ো পাড়ায় কিন্তু ষষ্ঠী অবধি ব্যস্ততা থাকবে। সে দিন অর্ধেক বেলা অবধি শ্যুটিং চলবে। বর্তমানে তাই শ্যুটিংয়ের ব্যস্ততার ফাঁকেই সেটে চলছে দেদার খাওয়া-দাওয়াও। অভিনেত্রী জানালেন, “আমি একটু ‘মেনটেন’ করছিলাম যাতে পুজোতে ভাল ভাবে খেতে পারি। কিন্তু এখন থেকেই সেটে শুরু হয়ে গিয়েছে।” কথায় কথায় বোঝা গেল ফুলকি বেজায় খেতে ভীষণ ভালবাসেন। তাই তো জানালেন, “বাঙালি খাবার খেতে আমার খুব ভাল লাগে। এখন অনেক জায়গাতেই নতুন নতুন বাঙালি রেস্তোরাঁ খুলেছে। সেগুলি ট্রাই করব পুজোর সময়। এর পর যখন যা ইচ্ছে হবে সেগুলি খাব, আগেই বললাম মিষ্টি খুব ভালবাসি তাই ওয়াফেল, কেক সব খাব। নরমাল মিষ্টি তো আছেই।” তবে তাঁর সব থেকে ভাল লাগে, ফুচকা। তাই দিব্যাণী অকপটেই বললেন, “রোজ ফুচকা খাব লঙ্কা দিয়ে। আমি যেহেতু নিরামিষাশী, চিকেন-মটন খাই না। তাই ওই পোলাও ভাল লাগে খেতে। পাড়ায় ঠাকুরের ভোগ হিসেবে যে পোলাও-আলুর দম দেয় ওটা ভীষণ ভাল লাগে। ওই পোলাও-আলুর দম কোথাও পাই না সারা বছর। আমার বাড়ির ওখানে, মানে মুর্শিদাবাদে ঠাকুরকে ভোগে লুচি আর সুজি দেয়। ওটা খুব মিস্ করি। ওখানে গেলে ওটা সবাইকে একটা করে দিত। গত ৩-৪ বছর যেহেতু অষ্টমীতে ওখানে থাকতে পারিনি তাই খেতে পারিনি। খুব মিস্ করি। মনে হয় আবার কবে পাওয়া যাবে।” এ ছাড়াও ভোগের পায়েস খুব ভালবাসেন বলেই জানালেন তিনি।
আরও পড়ুন:
দিব্যাণী এতই খেতে ভালবাসেন যে তাঁর কাছে যখন জানতে চাওয়া হল যে ছোটবেলার পুজোর স্মৃতি বলতে কী মনে পড়ে? কোন ঘটনা প্রকট? তাঁর জবাবে ঘুরে ফিরে উঠে আসে সেই ভোগের কথা-ই। সঙ্গে জানান, “বাবা-মায়ের সঙ্গে ছোটবেলায় দুটো দিন ফিক্সড থাকত, এক দিন এক দিকে যেতাম, আরেক দিন রাত্রিবেলায় বেরোতাম। মানে রাত ১টার দিকে বেরোতাম। কলকাতায় রাত একটা ভীষণ নরমাল, কিন্তু ওখানে তো সব ভীষণ চুপচাপ, নিস্তব্ধ হয়ে যায়। রাতে বড়রা ঘুরতে যায় বা বন্ধুদের গ্রুপ থাকলে তারা যায়। আমি যেতাম বাবা-মায়ের সঙ্গে। সব ঠাকুর দেখা যেত, খুব মজা হতো।” তবে কেবল আগে নয়, এখনও তিনি বাবা-মায়ের সঙ্গে ঠাকুর দেখেন বলে জানালেন। “এই বছরও বাবা-মায়ের সঙ্গে বেরোচ্ছি। বাবা-মায়ের সঙ্গে ঠাকুর দেখেছি, দেখব। ওরাও ঠাকুর দেখতে, ঘুরতে দেখতে ভীষণ ভালবাসে, এক সঙ্গেই যাব”, জবাব দিব্যাণীর।
পুজোর পরিকল্পনা যখন সারা, কলকাতাতেই যখন থাকবেন তখন নিশ্চয় কেনাকাটাও হয়ে গিয়েছে? প্রশ্ন শুনেই এক গাল হেসে ফুলকি জানান, “কেনাকাটা প্রচুর হয়ে গেছে। ৮-৯ জামা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মজার কথা শুনবেন? পুজোর জন্য যেগুলি অর্ডার করেছিলাম সেই জামাগুলিই আসেনি। আগে থেকে যেগুলি অর্ডার করেছিলাম সেগুলি এখন এসেছে, তাতেই এতগুলি হয়েছে। যদিও সব কটা জামাই ভীষণ গর্জিয়াস। ভেবেছি ওই জামাগুলি না এলে এগুলিই পরে ফেলব, ওগুলি কালীপুজোয় পরব। আমি তো ঘুরতে শুরু করি মহালয়ার পর থেকেই, যদিও আজ হবে না। তাই ওই আর কী মিলিয়ে মিশিয়ে হয়েই যায়।”
আর পুজোর প্রেম? খানিক আফসোস, খানিক মজা করেই দিব্যাণী জানালেন তিনি এখনও, “ওই সুন্দর জিনিসটা এক্সপিরিয়েন্স” করেননি।
প্রেম জীবনে না থাকুক, পরিবার ভাল থাক, হাত ভর্তি কাজ থাক এটুকুই চাওয়া তাঁর দেবীর থেকে। বললেন, “মাকে বলব, আমার পরিবার, দিদা, ভাই, আমার ‘কুটুলি’ মানে আমার পোষ্য যেন ভাল থাকে। আমি যেন ভাল থাকি। নিজের ভাল চাওয়াটাও খুব জরুরি। সব যেন ভাল হয়। আমি যেন আমি ভাল ভাল কাজ করতে পারি, যে বদল আসবে সেটা যেন ইতিবাচক হয়। আমি যেমন আছি তেমন যেন থাকতে পারি। আমি যেন আরও অনেক বেশি ভার্সেটাইল হতে পারি। যা পরিস্থিতি আসুক আমি যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারি, মা সেই শক্তি যেন আমায় দেন। মা তো বছরে এক বার আসেন, আগের বছর থাকতে পারিনি। সবটা যেন ভাল হয়।”
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।