পুজোর আগেই শহরে উঠতে চলেছে ব্যান্ড-ঝড়। একসঙ্গে ছ’ছটি বাংলা ব্যান্ড পারফর্ম করবে, আর সেই তালিকায় রয়েছে ‘পৃথিবী’ও। ৩১ অগস্ট, বিশ্ব বাংলা মেলা প্রাঙ্গণে— ‘ব্যান্ড স্টর্ম’-এর মঞ্চে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গাইবে শহরের সবচেয়ে প্রিয় ব্যান্ডরা। থাকছে ‘অঞ্জন দত্ত অ্যান্ড দ্য ইলেকট্রিক ব্যান্ড’, ‘ক্যাকটাস’, ‘ফসিল্স’, ‘ফকিরা’, ‘পৃথিবী’ ও ‘হুলিগানিজম’। উত্তেজনায় ভরপুর প্রস্তুতি চলছে ব্যাকস্টেজে, তারই ফাঁকে আনন্দবাজার ডট কম-এর এক্সক্লুসিভ আড্ডায় মেতেছিল ‘পৃথিবী’র গোটা টিম।
নিজস্ব চিত্র
'ব্যান্ড স্টর্ম' প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পৃথিবীর লিড ভোকালিস্ট কৌশিক চক্রবর্তী মুচকি হেসে বললেন, “কলকাতায় বৃষ্টি তো এখন নিত্যসঙ্গী। কিন্তু 'ঝড়'টা খুব একটা কলকাতা দেখেনি। আগের বার শুধু এলাকা কেঁপেছিল, এ বার হয়তো ধ্বংসও হতে পারে। সম্ভবনা বিপুল! ” পাশাপাশি গিটারিস্ট দেবাংশু ভট্টাচার্য যোগ করলেন, “এই লেভেলের ঝড় এর আগে হয়নি। তাই উত্তেজনা আকাশছোঁয়া।” অন্য দিকে, ড্রামার অনিরুদ্ধ মণ্ডলের মনে হচ্ছে যেন, “এক বিশাল ব্যান্ড মেলা বসেছে, যেখানে গান, হাসি, আড্ডা আর আনন্দের এক দারুণ মেলবন্ধন হবে।”
২৫ বছরের অভিজ্ঞতায় কৌশিকের উপলব্ধি, “আমরা, মানে বাঙালিদের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, আমরা ‘মৌলিক কাজ’ খুব কম শুনছি, এবং এই যে সময় নিয়ে শোনা, সেটা শুনছি আমরা অনেক কম, আমরা এখন দেখছি বরং বেশি। এবং দেখার সময়টাও অনেকটাই কমে গেছে। সেইখান থেকে দাড়িয়ে এই ‘ব্যান্ড স্টর্ম’-এর বিরাট গুরুত্ব হল যে, এটা একটা দরজায় কড়া নাড়ার মতো বিষয়।” তাঁর কথায়, “অনেকেই বলে থাকেন আমি, শুনি, বাংলা ব্যান্ড নাকি নেই আগের মতো। যদি না-ই থাকত তা হলে আজকের সব ‘লাইভ মিউজিক’ ব্যান্ড ফরম্যাটে হতো না। আজকের যা-ই লাইভ মিউজিক আমরা দেখছি , তার অধিকাংশটাই ব্যান্ড-এর ফরম্যাটে। দর্শক-শ্রোতাদেরও উদ্যোগী হতে হবে। ছোট ছোট পরিসরে হলেও মৌলিক গানকে জায়গা করে দিতে হবে।”
এতগুলি ব্যান্ড এক সঙ্গে, এক মঞ্চে, কি মনে হচ্ছে ? উত্তরে কৌশিক বললেন, “উত্তেজনা থাকবে, কারণ সামনে হাজার হাজার মাথা ঝাঁকানো দেখতে পাব। সবচেয়ে বড় কথা, সবার সঙ্গে দেখা হবে, আড্ডা হবে, যেটা বাংলা ব্যান্ড-এ এখন আর সচরাচর হয় না , আগে হতো। ওই আড্ডাটা খুব মিস করছি, ওইটা হলে একেবারে জমে যাবে। এখনও সাউন্ড চেক-এ সবাই ব্যস্ত, কিন্তু এই ব্যান্ডগুলি এক সঙ্গে , এক ঘরে বসে একটা আড্ডা দিতে পারলে, সোনায় সোহাগ হতো ব্যাপারটা। ” এই বিষয়ে বেসিস্ট দীপ ঘোষের ও একই মত। এবং তিনি যোগ করলেন, তাঁর কর্মজীবনের এটা একটা বড় শো, বহু বছর দর্শক হিসেবে অনুষ্ঠান উদযাপন করে, এই বার এই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে , একই মঞ্চে অনুষ্ঠান করার সুযোগ পেয়েছেন।
‘পৃথিবীর’ পুজোর প্ল্যান জানতে চাইলে, কৌশিক বলেন, “পৃথিবী এ বার পুজোয় কলকাতা শহরেই নেই। ‘পৃথিবী’ আমেরিকায় কাটাবে এক মাস। আমরা ২৩ সেপ্টেম্বর বেরিয়ে যাচ্ছি। ফিরছি ঠিক এক মাস বাদে। পুজো মিস করব। খুব হিংসে হয়, পুজোতে না থাকতে পারলে। কারণ কলকাতার বাঙালিরা যে ভাবে পুজো উপভোগ করে, পুজো নিয়ে মেতে থাকে, সেটা খুব মিস করব। সব চেয়ে খারাপ লাগে আমার নিজের ছেলের জন্য। কারণ ওর বাবা না থাকলে যেটা হয় আরকি, পুজোতে বেড়াতে যাওয়াটা হয় না সেই অর্থে। গল্প, আড্ডা, খেলাধুলো ঠিক হয় না। এইটা একটা আমার মিস করার জায়গা। হ্যাঁ, তবে বিদেশে একটা অন্যরকম পরিবেশ। সেখানে আমেরিকার বাঙালিরা নিজেরা পুজো করেন নিজেরা মিলে এবং সেই পুজোর মধ্যে দিয়ে যেন প্রত্যেকটা শহরই ‘বাংলা’ হয়ে ওঠে। প্রচুর মানুষ বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন, তাঁদের মধ্যে কেউ হয়তো অপরিচিত, কেউ হয়তো খুব পরিচিত, তাঁরা হয়তো তাঁদের কলেজ জীবনে ‘পৃথিবী’ শুনেছেন, এখন চাকরি সূত্রে বিদেশে এবং তাঁরা এখন আবার ‘পৃথিবী’কে সামনে থেকে দেখতে পারছে। এইটা একটা মারাত্মক ভাল লাগার জায়গা আমাদের জন্য।”
পাশাপাশি কিবোর্ড বাদক দীপায়ন মৈত্র মুচকি হেসে যোগ করে বলেন, “আমার বাড়িতেও একটা পুচকে আছে, ওর এ বার ৫ বছর হবে। ওর কিছু হলেই 'কাকাই কাকাই' করে বেরায়। ওর এ বারের ৫ বছরের জন্মদিনটা হয়তো মিস করব, কারণ সেটা আমাদের ‘ট্যুর’-এর মধ্যেই কেটে যাচ্ছে। কিন্তু ফিরে এসে আবার সবাই মিলে এক হয়ে আনন্দ হবে।”
সব মিলিয়ে ‘ব্যান্ড স্টর্ম’ যেন শুধু একটি শো নয়, পুজোর আগে বাঙালির সঙ্গীত-উৎসব। ঝড় উঠবেই, ‘উড়ে না গেলেই হল’!
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।