১। পুজোর আসর মানেই বাঙালির হেঁশেলে তুমুল তোড়জোড়। কুটনো কাটা, বাটনা বাটা থেকে বাড়ির কড়াইয়ে ভাজাভুজির ছ্যাঁকছোক বলে দেয় উৎসব এসে গিয়েছে। সেই আবহে এক অদ্বিতীয় পদ— চিতল মাছের মুইঠ্যা। নাম শুনলেই যেন জিভে জল!
২। ‘মুইঠ্যা’ শব্দটি এসেছে ‘মুঠো’ থেকে। এক মুঠো চিতলের মাংস, আলুর সঙ্গে মিশে তৈরি হয় অনন্য এই পদ। মুইঠ্যা আসলে এক ধরনের ফিশ-কাবাব বা বড়া, যা দেখতে হাতের মুঠোর মতো। বড় আর লম্বাটে চিতল মাছের পিঠের অংশ এর জন্য উপযুক্ত। কারণ সেই অংশেই ছোট ছোট কাঁটা বেশি থাকে, যার জন্য কাঁটা বেছে খাওয়ার চেয়ে ছাড়িয়ে নেওয়া সহজ।
৩। পুরনো দিনের বাঙাল ঘর থেকে এ রান্না আজ বাংলার প্রায় সব উৎসবের পাতেই জায়গা করে নিয়েছে।
৪। চিতল মাছ দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে পাওয়া যায়। তবে বাঙালি হেঁশেলে এর আলাদা কদর। ছোট চিতল খেতে কষ্টকর। তাই বড় চিতল থেকে মাছ কুরোনো হয়।
৫। পিঠ থেকে খসখসে চামড়া ছাড়িয়ে চামচ দিয়ে আস্তে আস্তে কুরোনো হয় মাছ। কাঁটা ফেলে রাখা হয় শুধু নরম গাদা।
৬। সেই মাছের সঙ্গে মেশে সেদ্ধ আলু, আদা-জিরে-লঙ্কার ঝাঁঝ আর স্বাদ মতো নুন-মশলা। একেবারে আঠালো মণ্ড হয়ে ওঠে।
৭। মুঠোর চাপে সেই মণ্ড থেকে সসেজের মতো আকার দেওয়া হয়।
৮। এর পরে সেই টুকরোগুলোকে গরম জলে ফুটিয়ে নেওয়া হয়। এই সেদ্ধ করার সময়েই মুইঠ্যা প্রথমে ডুবন্ত অবস্থায়, পরে সেদ্ধ হয়ে ভেসে ওঠে।
৯। সেদ্ধ হওয়ার পরে মুইঠ্যার টুকরোগুলো একটু ঠান্ডা করে মোটা মোটা করে কাটা হয়, দেখতে অনেকটা মাছের পেটির মতো লাগে। ঠান্ডা হলে সেই মোটা টুকরো সরষের তেলে সোনালি করে ভাজা হয়।
১০। অন্য দিকে, গ্রেভি বানাতে লাগে ভাজা পেঁয়াজ, টোম্যাটো, আদা-রসুন, শুকনো লঙ্কা, তেজপাতা, দারচিনি-লবঙ্গের ফোড়ন। আলুর টুকরো দিয়েই ঘন করা হয় ঝোল।
১১। শেষে সেই ঝোলে ছাড়তে হয় ভাজা মুইঠ্যা। ফুটতে ফুটতে আলুর সঙ্গে মিশে যায় মাছের গন্ধ। উপরে সামান্য গরম মশলার ছিটে দিলেই জমে ওঠে আসল স্বাদ।
১২। পুজোর দুপুরে লুচি, ভাত বা পোলাওয়ের সঙ্গে এই পদ যেন পরিবারের হাসি-খুশি মুহূর্তগুলোকে আরও আনন্দময় করে তোলে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।