মনের কথা সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা হোক কিংবা ছবিতে বদল আনা, অথবা বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরের হদিশ– সবের জন্যই ইদানীং মুশকিল আসান এ যুগের সিধু জ্যাঠা, ওরফে চ্যাটজিপিটি। তাই বলে রোজকার জীবনে কোন ডায়েট মানবেন, কী খাবেন, কী খাবেন না সেটাও কি জানতে চাইছেন তার কাছেই? সেখান থেকে পাওয়া পরামর্শ মানছেনও? অজান্তে নিজের বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
সম্প্রতি অ্যানালস অব ইন্টারনাল মেডিসিন ক্লিনিকাল কেস জার্নালে একটি কেস প্রকাশিত হয়েছে, সেখান থেকেই জানা গিয়েছে এই নতুন প্রযুক্তি-নির্ভর অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এক ব্যক্তি ডায়েট চার্ট বানিয়েছিলেন। সেটা নিয়মিত মেনেও চলছিলেন। আর তাতেই ঘটেছে বিপত্তি। চ্যাটজিপিটি-র 'বুদ্ধি'তে তিনি রোজের খাবার থেকে নুন পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেন। ৩ মাস ধরে বিন্দুমাত্র নুন অর্থাৎ সোডিয়াম খাননি বা ব্যবহার করেননি কোনও খাবারে। পরিবর্তে ব্যবহার করেছেন সোডিয়াম ব্রোমাইড। বর্তমানে তিনি হ্যালুসিনেট করছেন। মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে সেই ব্যক্তির। রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, সেই ব্যক্তির শরীরে বেড়ে গিয়েছে ক্লোরাইডের মাত্রা। আপনিও কি এই একই রকমের ভুল করছেন? তা হলে জেনে নিন কী বলছেন বিশেষজ্ঞ।
ডায়েট-বিশেষজ্ঞ অর্পিতা রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, এ ভাবে চ্যাটজিপিটি বা এআইয়ের থেকে বুদ্ধি ধার করে চললে লিভার, কিডনির সমস্ত প্যারামিটার গড়বড় হয়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়, হতে পারে মাল্টি অর্গ্যান ফেলিওর। তাঁর কথায়, “দীর্ঘদিন ভুল ডায়েট মেনে চললে ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টসের পাশাপাশি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসেরও ঘাটতি দেখা দিতে পারে শরীরে।”
অর্পিতার কথায়, “কেবল ওজন বৃদ্ধি বা কমানোর ক্ষেত্রে নয়, অসুখ-বিসুখ অনুযায়ীও ডায়েট মেনে চলার প্রয়োজন হয়। কোন রোগে কী খাওয়া বারণ, কী খেতে হয়– এই পরামর্শ কিন্তু সঠিক ভাবে এআই কখনওই দিতে পারবে না। এক জন ব্যক্তির ওজন, উচ্চতা, কী কী শারীরিক কসরত করেন তিনি, ব্যায়াম করেন কি না-সহ আরও একাধিক বিষয়ের ভিত্তিতে ডায়েটিশিয়ান তাঁর নির্দিষ্ট খাওয়াদাওয়ার চার্ট বানিয়ে দেন। ফলে এক ব্যক্তির ডায়েট চার্ট কিন্তু আর এক জনের সঙ্গে মিলবে না। সেটাও এআই বা চ্যাটজিপিটির পক্ষে নিখুঁত ভাবে তৈরি করে দেওয়া সম্ভব নয়।”
অনেকেরই অভ্যাস থাকে কোনও রোগ বা উপসর্গ দেখা দিলেই সেটা নিয়ে গুগলে সার্চ করা, অকারণ আতঙ্কিত হওয়া। এখন তার সঙ্গে যোগ হয়েছে চ্যাটজিপিটি। এটা যেমন উপকারী, তেমনই অন্য দিকে কখনও কখনও বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই স্বাস্থ্য বা কোনও জরুরি বিষয় সংক্রান্ত কিছু জানার থাকলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।