প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

ভূতচতুর্দশীতে চোদ্দ-শাক খান, জানেন মঙ্গলকাব্য, মহাভারতেও রয়েছে শাকের কথা?

কালীপুজোর আগের দিন অর্থাৎ ভূতচতুর্দশীতে চোদ্দ রকম শাক খাওয়ার রেওয়াজ আছে। বাঙালির শাক খাওয়ার শিকড় কোথায়?

সৌভিক রায়

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৩৪
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

বাঙালির মধ্যাহ্নভোজের প্রথম ব্যঞ্জন ছিল শাক, এমনকী নিমন্ত্রণ বাড়িতেও আগত অতিথিদের প্রথম পাতে শাক পরিবেশনের চল ছিল। কালে কালে শহুরে মানুষ শাক থেকে দূরে সরেছে। পাতে শাক পড়লে এখন অনেকেই ভ্রু কুঁচকান।

শাক খাওয়া কমে যাওয়ার একটা কারণ অবশ্য সদা ব্যস্ত জীবন। দ্রুত গতিতে ছুটছে জীবন, শাক বেছে-কেটে রাঁধার সময় নেই। শাক দিয়ে ভাত মেখে খাওয়ারও সময় নেই। মাঠ-ক্ষেত-জলা কমছে, কোথায় জন্মাবে শাক? কলমি, পালং, পুঁই, লাল শাক, কচুর শাক ছাড়া আস্তে আস্তে অন্য শাকগুলি অমিল হয়ে পড়ছে। তবে শাক খাওয়ার এক বিখ্যাত তিথি রয়েছে বাঙালির। কালী পুজোর আগের দিন অর্থাৎ ভূত চতুর্দশীতে চোদ্দ রকম শাক খাওয়ার রেওয়াজ আছে। ওল, কেউ, বেতো, কালকাসুন্দে, নিমপাতা, জয়ন্তী, সর্ষে, সাঞ্চে, হিলঞ্চা, পলতা, শুল্কা, গুলঞ্চ, ঘেঁটু ও শুষনি– এই চোদ্দ প্রকার শাক খাওয়ার রীতি রয়েছে। তবে স্থানভেদে শাকের কিছু রকমফের দেখা যায়।

বলা হয়, ঋকবেদের যুগে বাস্কল বা শাক দ্বীপীয় ব্রাহ্মণরা ভূত চতুর্দশীতে চোদ্দ শাক খাওয়ার রীতি প্রচলন করেছিলেন। পণ্ডিত রঘুনন্দন ভূত চতুর্দশীতে চোদ্দ শাক খাওয়া সম্পর্কে লিখে গিয়েছেন– ‘ওলং কেমুকবাস্তুকং সার্ষপঞ্চ নিম্বং জয়াং।/ শালিঞ্চিং হিলমোচিকাঞ্চ পটুকং শেলুকং গুড়ুচীন্তথা।/ ভন্টাকীং সুনিষণ্ণকং শিবদিনে যদন্তি যে মানবাঃ/ প্রেতত্বং না যান্তি কার্তিকদিনে কৃষ্ণে চ ভূতে তিথৌ।’

শাকের ভেষজ গুণ রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কালীপুজো হেমন্তের উৎসব অর্থাৎ ঋতু বদলের সন্ধিক্ষণে আসেন শ্যামা মা। ঋতু পরিবর্তনের সময় রোগ-সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়। মরশুমি রোগ-বালাই থেকে রক্ষা পেতে ভূতচতুর্দশীতে চোদ্দ শাক খাওয়ার রীতিটির প্রচলন হয়েছে। কেবল একটি তিথি নয়, বাংলা তথা পূর্ব ভারতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে শাক। বাঙালি মা দুগ্গাকেও দশমীতে কচুর শাক-পান্তা ভাত খাইয়ে কৈলাসে পাঠায়।

মহাভারত থেকে মঙ্গলকাব্যে বারে বারে এসেছে শাকের প্রসঙ্গ। মহাভারতে, বকরূপী ধর্মরাজ যখন যুধিষ্ঠীরকে জিজ্ঞাসা করছেন ‘সুখী কে?’, তখন জেষ্ঠ্য-পাণ্ডব জানাচ্ছেন, ‘দিন শেষে যে শাকান্ন ভোজন করতে পারে, সে-ই সুখী।’

প্রায় ৭০০ বছর আগে লেখা ‘প্রাকৃতমঙ্গল’-এ নলিতা অর্থাৎ পাট শাক দিয়ে ভাত খাওয়ার বিবরণ রয়েছে। দ্বিজ বংশীদাস ও বিজয় গুপ্তরা ‘মনসামঙ্গল’-এ শাক রাঁধার কথা লিখে গিয়েছেন। বিজয় গুপ্ত লিখছেন– ‘সাজা ঘৃত দিয়া রান্ধে গিমা তিতা শাক।’

কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ‘চণ্ডীমঙ্গল’-এ নানাবিধ শাক খাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। মুকুন্দরাম লিখেছেন–‘নটে রাঙা তোলে শাক পালঙ্গ নলিতা/তিক্ত ফল তার শাক কলতা পলতা।’ বৃন্দাবন দাস ‘চৈতন্য ভাগবত’-এ জানিয়েছেন নদীয়ার নিমাইয়ের অন্যতম প্রিয়পদ ছিল শাক। প্রায় কুড়ি রকম শাকের উল্লেখ করেছেন বৃন্দাবন দাস। যুগে যুগে সাহিত্যে শাক খাওয়া ও রাঁধার উল্লেখ রয়েছে। যা প্রমাণ করে শাকের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক অতিনিবিড়।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Kali Puja 2025
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy