প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

লক্ষ্মীপুজোর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আলপনা, জানেন তার রকমফের সম্পর্কে?

আলপনার সঙ্গে শুধু তত্ত্বকথা ও ইতিহাস নয়, জড়িয়ে আছে লৌকিক বিশ্বাস আর ভক্তিও।

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ১১:১৩
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

“শ্রীহরির বাক্য শুনি আনন্দিত মনে।

মর্তে চলিলেন লক্ষ্মী ব্রত প্রচারণে।

অবন্তী নগরে লক্ষ্মী হ’ল উপনীত।

দেখিয়া শুনিয়া হ’ল বড়ই স্তম্ভিত।”

লক্ষ্মী হলেন ঐশ্বর্যের নিয়ন্তা দেবী। বস্তু ধন-সম্পত্তি হোক বা অন্তঃশ্রী, সব কিছুরই অধিষ্ঠাত্রী তিনি।

▪️আশ্বিন পূর্ণিমার লক্ষ্মী পুজোটি হল কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো।

▪️কোজাগরী শব্দের অর্থ — কে জেগে আছ?

প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী, দেবী এই দিন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভক্তকে দর্শন দেন। তাঁর গৃহে শ্রী প্রদান করে আসেন। তাই বাড়ির দরজা খোলা রেখে দেবীর আসার অপেক্ষায় জেগে থাকতে হয়। এই লক্ষ্মীপুজো তাই কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো।

লক্ষ্মী পুজোর সঙ্গে দু’টি জিনিস অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। এক, নাড়ু আর দুই, আলপনা। আলপনার সঙ্গে শুধু তত্ত্বকথা ও ইতিহাস নয়, জড়িয়ে আছে লৌকিক বিশ্বাস আর ভক্তিও।

👣পদ-চিহ্ন আলপনা ~

দেবী লক্ষ্মী এসে দেখেন, কোন বাড়িতে তাঁর ভক্ত আলো জ্বেলে দরজা খুলে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে। সেই গৃহেই তিনি প্রবেশ করেন। সে কারণে আঁকা থাকে পদচিহ্নের আলপনা। ঠিক, যেমন বর্ষাকালে উঠানে পা ফেলার জন্য বিছানো থাকে ইট। তেমনই বিশ্বাস, ওই পদচিহ্ন ধরে দেবী প্রবেশ করেন ভক্তের ঘরে।

শ্রী আলপনা

আলপনা মানেই মাঙ্গলিক— অন্তরের সৌন্দর্য দিয়ে রেখার পর রেখা তুলে, তাতে সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করা। আলপনা মানেই স্থির একাগ্র চিত্তে অঙ্কন। অর্থাৎ কাজের প্রতি ভক্তি ও সমর্পণ।

মধ্যবর্তী শ্রী আলপনা বা মণ্ডলাকার বৃত্ত আলপনাটি তাই একাগ্রতা ও সমর্পণের প্রতীক; সাক্ষাৎ লক্ষ্মীশ্রী। অর্থাৎ গৃহস্থ একমনে, মনের সবটুকু ভক্তি ও সৌন্দর্য দিয়ে এই আলপনা আঁকছেন, তাঁর ঘরে লক্ষ্মী আসবে বলে।

এই মণ্ডলই আদতে মণ্ডপের দ্বিমাত্রিক রেখাচিত্র।

♣️মিথ ও ব্যবহারিক ব্যাখ্যা ~

আলপনা বিষয়টি ভীষণ রকম ব্যবহারিক। হরপ্পা, মেহেরগড়, মহেঞ্জোদারো থেকে সুমের, ক্রেট-এর বিভিন্ন অলঙ্কৃত নকশা এবং মৃৎপাত্র, সর্বত্রই প্রায় আলপনার নিদর্শন পাওয়া যায়। এক রৈখিক, সুষমামণ্ডিত চিত্রকলা বা স্কিম্যাটিক ডায়াগ্রাম গোছের।

▪️পদচিহ্ন আলপনার ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। পদচিহ্ন আলপনায় যেখানে দেবী লক্ষ্মীর আগমন সূচিত হচ্ছে, সেখানে আগুপিছু পা আঁকা থাকে। কারণ মানুষ ওই ভাবেই হাঁটে। আর ’জোড়া পা’ হলো লক্ষ্মীর স্থিতির লক্ষণ।

লক্ষ্মীর বিবিধ পাঁচালীতে গৃহে বধূর লক্ষ্মী ব্রত বা পুজোর কথা বলা হচ্ছে। অর্থাৎ অন্তরের বা অন্তঃপুরের লক্ষ্মীস্থিতির কথাই তাতে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিটি নারীলক্ষ্মীকে সূচিত করা হচ্ছে ওই জোড়া পা দিয়ে। তাঁরা ঘরেই থাকেন।

বিবিধ আলপনা

ধান্য আলপনা হল ধান গাছের রূপক। গোলাঘরে, ভাঁড়ার ঘরের চৌকাঠে এই আলপনা দেওয়া হয়। মা লক্ষ্মীর পদচিহ্নের পাশাপাশি ধান্য আলপনা সূচিত করে — শস্যসমৃদ্ধ অঙ্গন। অর্থাৎ ঘরের বধূ যখন খড়ায় করে ধান নিয়ে যান, দু’চারটি ধান ছড়িয়ে পড়ে তাঁর অঙ্গনে। সে ধান পরে তুলে নেওয়া হয় কিন্তু ওই ছবিটি শাশ্বত। ওইটিই পল্লিবাংলার প্রাচুর্যের ছবি। তাই প্রার্থনা করা হয়, ধান্যবতী হোক আমার অঙ্গন।

মৎস্য আলপনা

সুপ্রাচীন কাল থেকেই আমরা প্রকৃতিকে পুজো করে আসছি। বর্তমান দেবদেবীদের প্রায় প্রত্যেকের সঙ্গেই পুষ্টি, শস্য, রোগহর ছবিটি সংযুক্ত। মৎস্য বা মাছ হল পুষ্করিণীর শস্য। তাই লক্ষ্মীপুজোয় মৎস্যসূচিত অলঙ্করণ করা হয়, অর্থাৎ শস্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

ঠাকুর ঘরে আঁকা হয় শঙ্খ- পদ্ম- শাঁখা- পলা। অর্থাৎ, শঙ্খধ্বনিতে দেবীকে আবাহন করা হচ্ছে। পদ্ম হলেন সাক্ষাৎ দেবী বা বোধ। ঋগ্বেদ থেকে শতপথ ব্রাহ্মণ, সর্বত্রই দেবীর চতুর্দশাক্ষর তিনি। কাজেই প্রস্ফুটিত দল আদতে জাগ্রত বোধ তথা অন্তরের লক্ষ্মীশ্রী।

দেবী লক্ষ্মী বিষ্ণু বক্ষস্থলস্থিতাম, অর্থাৎ তিনি এয়োস্ত্রী। তা ছাড়া গৃহের প্রতিটি বধূনারীকেই লক্ষ্মী কল্পনা করা হয়, তাই শাঁখা-পলা দিয়ে তার চিরায়ত শৃঙ্গারকে সূচিত করা।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, আলপনা মানুষের সুন্দর কল্পনা। ঠিক তাই। মানুষ তার সুন্দর কল্পনা সবটুকু শ্রী, সৌন্দর্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মীকে নিবেদন করছে বলেই লক্ষ্মী পুজোয় আলপনার এত সমাহার।

সবশেষে একটাই কথা বলার। দেবী লক্ষ্মী হলেন বিষ্ণু বক্ষস্থলস্থিতাম অর্থাৎ হৃদয়ের সুকুমারী সৌকর্য হলেন তিনি। তেমনি গৃহস্থের বাসগৃহকে যদি ছত্রধর, পালক বিষ্ণু ধরা হয় তা হলে তার অন্তঃপুরে বাস করেন দেবী লক্ষ্মী। এই আলপনা হল তাঁর শৃঙ্গার বা স্ত্রী।

তথ্যসূত্র~

বাঙালীর ইতিহাস— নীহাররঞ্জন রায়

বাংলার ব্রত — অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বাগেশ্বরী— অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বাংলার ব্রত ও পার্বণ— লীলা বসাক

কেয়াপাতা সাপ্তাহিক পত্রিকা

‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Laxmi Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy