প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

মা কালীর পাশে শিয়াল থাকে কেন?

মা কালী! যিনি সন্তানকে স্নেহভরে ভাত বেড়ে দেন, আবার দুষ্টুমি করলে দু’ঘা পাখার বাড়িও দেন। প্রশ্ন হল, এ হেন মায়ের পাশে শৃগাল কেন

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:১৬

‘‘চূর্ণ হোক্ স্বার্থ, সাধ, মান হৃদয় শ্মশান, নাচুক তাহাতে শ্যামা।’’

শ্যামা মা নামটি শুনলেই ভেসে ওঠে ভয়ঙ্কর-সুন্দর এক মাতৃমূর্তি। একই দেহে তিনি মায়ের শাসন, বারণ ও স্নেহ রূপে বিরাজমানা। রক্তাক্ত কৃপাণ, কর্তিত নরমুন্ড, লোলজিহ্বা, ভীষণ দৃষ্টি, আলুলায়িত কেশদাম অথচ বর ও অভয় মুদ্রা তাঁরই হস্তে।

এ তো সে-ই মা, যিনি সন্তানকে স্নেহভরে ভাত বেড়ে দেন, আবার দুষ্টুমি করলে দু’ঘা পাখার বাড়িও দেন। প্রশ্ন হল, এ হেন মায়ের পাশে শৃগাল কেন! আগে জানি মা কালীর কথা। তার পর নয়, এই প্রসঙ্গে আসব।

কালী! সৃষ্টির আদিলগ্নে দেবাসুরের ভীষণ সংগ্রামের দিনে দেবতাদের প্রার্থনায় আদ্যাশক্তি মাতা পার্বতীর দেহের কৃষ্ণ কোষ থেকে দেবী কৌষিকী আবির্ভূত হন। পক্ষান্তরে তখন দেবী কৃষ্ণ বর্ণ ধারণ করেন বলেই, তাঁর নাম কালী বা কালিকা। সে রূপভেদেই দেবী আবার চণ্ডিকা।

মহাভারতে ‘কালরাত্রি’ বা ‘কালী’ নামে আরও এক দেবীর উল্লেখ পাওয়া যায়। ইনি যুদ্ধে নিহত যোদ্ধৃবর্গ ও পশুদের আত্মা বহন করেন।

‘কাল শিবহ্। তস্য পত্নতি কালী।’ অর্থাৎ শিবই কাল বা কালবোধক। তাঁর পত্নী কালী। ( শব্দকল্পদ্রুম)

এক কথায়, কাল(সময়) কে কলন (রচনা) করেন যিনি, তিনিই (কাল+ঈ) কালী। অর্থাৎ কালের উপলব্ধি হল কালী।

তাহলে যে কোনও শব্দার্থ ধরেই যদি আমরা এগোই, সৃষ্টি বা বিনাশ দু’টিতেই তিনি বর্তমান। একজন মানুষের জীবন চক্র কিংবা একটি যুগের কাল অর্থাৎ ঘটমান সময় যেখানে শেষ হয়, যেখানে স্থুল দেহের নাশ হয় — তা হল শ্মশান। আর তাই কালিকা রূপের দেখা আমরা পাচ্ছি শ্মশানে। আর শ্মশান মানেই শৃগাল বা শিবা। তাই তো দেবী চণ্ডিকা রূপে যখন প্রথম আবির্ভূতা হচ্ছেন, সেখানে শৃগাল পরিবৃতা। সকলেই মৃত্যুর পথে পাড়ি দিয়েছে, কেবল শৃগালই বর্তমান।

আবার বলা হয় মা শৃগালের মধ্যে বোধ রূপে বর্তমান। তার কারণ, মায়ের খড়্গ মানুষকে বোধ দান করে। খড়্গে আঁকা চোখ অদেখার, অজ্ঞানতার অন্ধকার নাশ করে। তাই তো বুদ্ধিমানতম প্রাণী শৃগাল হল মায়ের বাহন। তাঁর শাবক।

শৃগাল কিন্তু কেবল বাহনই না দেবীর রূপভেদও বটে। বহু প্রাচীন প্রত্নলিপিতত্ত্বে আমরা কোকমুখা দেবী উল্লেখ পাই। যেখানে দেবী কোকমুখ, অর্থাৎ শৃগাল/ নেকড়ের মুখগঠন ধারণ করছেন। শ্মশানের ধ্বনি দিচ্ছেন। বহু স্থলে শ্মশান কালী মায়ের পূজার পূর্বে শিবা ভোগ দেওয়া হয়, যেখানে শৃগালকে তুষ্ট করাই উপাচার।

হরিবংশ ও বিষ্ণুপুরাণ— এ’ও দেবীর শিবা রূপ দেখা যায়। যমুনার অববাহিকা ধরে বসুদেব গোকুলের দিকে যাত্রা করলে মা তাঁকে শৃগালের রূপ ধরে পথ প্রদর্শন করছেন।

এক কথায় চণ্ড-মুণ্ড, শম্ভু-নিশুম্ভ প্রভৃতি ভীষণ ভয়াল দর্শন অসুরকে বধ করতে মা যে দিন পার্বতী, গৌরী রূপ ত্যাগ করে কালিকা বা চন্ডিকা রূপে আবির্ভূতা হলেন। সেদিন সে ভূমি শ্মশান ভূমিতে পরিণত হল এবং মায়ের এক মাত্র জীবিত সঙ্গী ছিল শিবাকুল। তাই, শিবা কিন্তু মায়ের বাহন নয়, বোধে এবং তত্ত্বে শিবাকুল-ই মায়ের সঙ্গী এবং শাবক।

ঋণ- ১. বাংলা পঞ্জিকা, ২. সুকুমার সেন প্রবন্ধাবলী (তৃতীয় খণ্ড), ৩. শ্রী শ্রী চণ্ডী, ৪. কালী কথা (শিবশংকর ভারতী)

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Myths and Beliefs Kali Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy