ধর্ম কেন তৈরি হয়েছিল? ধর্মাচরণ কখন কুসংস্কারের নামান্তর হয়ে যায়? এ নিয়ে বহু বহু লেখা আছে। কিন্তু বিষয়টি যেন আজও প্রাচীন হওয়ার নয়।
ইদানীং অনেকে মনে করে, এই যুগে ধর্মাচরণ একটি ব্যয়বহুল কুসংস্কার মাত্র।
তার হয়তো'বা একটি পক্ষের ব্যাখ্যা আছে। আবার আছে বিরুদ্ধের মতও। এই বার এখানে, একটি কথা খুব স্পষ্ট করা প্রয়োজন, ধর্মাচরণ কিন্তু তার জন্মগত জায়গা থেকে আদৌ 'কুসংস্কার' কে অবলম্বন করে উদ্ভূত হয়নি।
ধর্ম কথাটির অর্থ হল, একটি ধনাত্মক বিশ্বাস। যাকে আমি ধারণ করছি অর্থাৎ মহাজাগতিক যা কিছু ধনাত্মকতা, তাই হল ধর্ম। নারী অর্থাৎ যিনি মা, যিনি সৃষ্টি করছেন, তা কে আমাদের যদি সম্মান প্রদর্শন করতে হয়, তবে তাঁকে রক্ষা করা আমাদের দায়।এর সম্প্রসারণ ঘটিয়ে বলা যায়, দুর্গতের প্রতি সহানুভূতি ও সাহায্য, দুর্বলের পাশে দাঁড়ানো, ধর্ম এগুলিই শেখায়।।সমস্ত কার্যই ধনাত্মকতা। দেখবেন পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি ধর্ম গ্রন্থে কিন্তু এই ধনাত্মক জিনিসগুলিকেই জোর দেওয়া হয়েছে।এর দ্বারাই ষড়রিপুকে তাড়ন করা যাবে৷ তা হলে ধর্ম এক অর্থে ধনাত্মকতার আধার।
সেই কারণেই আদি লোকায়ত বিশ্বাসের মধ্যে প্রকৃতির একটা গভীর রূপক ছিল। "মা" ভাবে আমরা যে পূজা করি তার মধ্যে কিন্তু বারংবার প্রকৃতি শব্দটাকে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ গাছপালা ইত্যাদি যারা আমাদেরকে লালন করছে, তাদের। সেই প্রকৃতির গুরুত্ব অসীম। তিনিও এক অর্থে মা-ই। তেমনই, শক্তি!
মাতৃকা হলেন কর্মোদ্যম বা শক্তি। শক্তি বিনে শিব-শব। তাত্ত্বিক তো বটেই, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখুন তো, সুইচ টিপে বিদ্যুৎ তরঙ্গ ( শক্তি) প্রবাহিত না করলে আপনার পাখাটি চলবে কী? সে তো শব!
ধরুন, তুলসী মঞ্চ। হিন্দু ধর্মে তুলসী মঞ্চের মাহাত্ম্য অন্য রকম প্রত্যেক গৃহেই। এমনকি ফ্ল্যাট বাড়ির একটি কোণেও তুলসী মঞ্চ দেখতে পাওয়া যায়। তুলসী গাছের যেমন পৌরাণিক ব্যাখ্যা রয়েছে তেমনই ব্যবহারিক ব্যাখ্যাটি হল ; তুলসী গাছ ওষধি গুণসম্পন্ন একটি গাছ। তুলসী গাছ নরম, ঝাড়ে হয়। তাই, আগাছার সঙ্গে তুলসী গাছের নির্মূল হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। এই ধর্ম বিশ্বাস কিন্তু তুলসী গাছকে আলাদা করে আগলে নিল।
এ রকম কিছু বিশ্বাসেই অশ্বত্থ, বটের মতো বৃক্ষদেরও রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছিল।
কুসংস্কারও এক প্রকার অন্ধ বিশ্বাস। বলা যায়, পরগাছা বিশ্বাস এবং পূর্ণরূপে ঋণাত্মক , তার এমন কোনও ব্যবহারিক ভিত্তিই নেই। ধর্মের ফাঁকফোকর থেকে সে তার রসদ সংগ্রহ করে। ভাল ভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে, কুসংস্কার খানিকটা প্রক্ষিপ্ত। বহু ক্ষেত্রেই বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কুসংস্কারকে সম্পর্কিত করা হয়।
”অমুক মানুষটা ওই গাছটি কেটে ছিলেন বলে তার সঙ্গে এই বিপদ ঘটেছিল।” অর্থাৎ ধর্মের ধনাত্মকতার উপরেই বাড়তি একটা আচ্ছাদন হল কুসংস্কার। যা মূলতঃ ধর্মের গভীরতা এবং বিশ্বাসের বোধটি ছুঁতে দেয় না।যেমন, জপ বা ধ্যান হল এক ধরনের অভ্যাস। যা মনঃসংযোগ ও মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারার উৎকর্ষ প্রদান করে।
তাই তো, ধর্মাচারণের সাথে গভীর যোগ। কিন্তু কুসংস্কার একে অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করে। মোটামুটি মধ্যযুগ বা প্রাগ মধ্যযুগের যখন সামন্ততান্ত্রিক সময় এসে উপস্থিত হল, নানান স্বার্থান্বেষী মানুষ ধর্ম নিয়ে এক ধরনের 'খেলা' শুরু করে। তার ফল হিসেবে ধর্মাচরণ কখনও অন্য খাতে বয়। তখন থেকেই প্রকৃতিতন্ত্র, বাস্তুতন্ত্র বিষয়গুলি গুলিয়ে যায়। ব্যবহারিক জীবন নানারকম অযাচিত এবং ঋণাত্বক ব্যাপারস্যাপার ঢুকে পড়ে বা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
যাতে করে মানুষ জীবনের মৌলিক সমস্যার গভীরে সহজে পৌঁছাতে না পারে। কিন্তু দিনের শেষে তত্ত্ব ও বোধ বেঁচে থাকে, রূপ বদলে তাই ক্ষীণ প্রবাহিত ফল্গুধারা হলেও বোধ আমাদের মধ্যে এভাবেই প্রবাহিত।
তাই, গভীরে হাঁটুন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy