প্রতি বছরই দুর্গাপুজোর আগে একটি বিষয় নিয়ে বেশ আলোচনা হতে দেখা যায়, দেবী দুর্গা এ বার পুজোয় কীসে চড়ে মর্ত্যে আসছেন, আর কীসে চড়েই বা তিনি ফিরছেন। কিন্তু জানেন কি কী ভাবে নির্ধারণ করা হয় যে দেবী কোন বছর কোন বাহনে চড়ে মর্ত্যে আসছেন বা কৈলাস ফিরছেন?
দেবী কোন বাহন চড়ে মর্ত্যে আসবেন বা কৈলাস ফিরে যাবেন এটা নির্ধারণ হয় সপ্তমী এবং দশমী, এই তিথি দুটো সপ্তাহের কোন দিন অর্থাৎ কোন বারে পড়েছে তার উপর। এই বিষয়ে শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, 'রবৌ চন্দ্রে গজরূঢ়া ঘটকে শনি ভৌময়োঃ।/ গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং নৌকায়াং বুধবাসরে।' অর্থাৎ সপ্তমী তিথি যে যে বছরগুলিতে রবিবার বা সোমবার পড়ে সেই বছরগুলি দেবী গজে আসেন। আর দশমী যদি রবি বা সোমবার পড়ে তাহলে গজে ফিরে যাবেন দেবী। একইভাবে সপ্তমী বা দশমী যদি শনি বা মঙ্গলবার পড়ে তাহলে দেবী মর্ত্যে আসবেন বা ফিরে যাবেন ঘোটকে, মানে ঘোড়ায়।
বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার যদি সপ্তমী পড়ে তাহলে দোলায় চড়ে দেবী মর্ত্যে আসবেন, আর এই দু’দিনের এক দিন দশমী পড়লে দোলায় ফিরবেন তিনি। আর বুধবার সপ্তমী বা দশমী পড়লে দেবীর বাহন হবে নৌকা।
এই চারটিই হল দেবী দুর্গার বাহন, যেগুলি কিন্তু আদতে প্রতীকী রূপ, যা দেখে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে সেই বছর কেমন যাবে, বা কী ঘটবে। যেমন দেবীর গজ বা হাতি বাহন সম্পর্কে বলা হয়েছে 'গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা।' এই কথার অর্থ হল দেবীর গজে আগমন ঘটলে সেটা শুভ, এতে পৃথিবী শস্যপূর্ণ হয়, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আসে। আসলে যুগ যুগ ধরেই গজ বা হাতি রাজকীয় মর্যাদা পেয়ে এসেছে, এখানেও তার অন্যথা হয়নি।
ঘোটক বা ঘোড়ায় আগমন বা ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে 'ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে', মানে অশান্তি, বিশৃংখলা, অরাজকতার পরিবেশ তৈরি হবে। অর্থাৎ অশুভ ইঙ্গিত। তবে নৌকার ক্ষেত্রে কিন্তু শুভ, অশুভ দুটো অর্থই বোঝানো হয়। দেবীর এই বাহনের জন্য শাস্ত্রে বলা হয়েছে 'শস্যবৃদ্ধিস্তুথাজলম', মানে ভারী বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা, আশঙ্কা বন্যারও। আবার একই সঙ্গে নৌকায় দেবীর এই আগমন এবং গমন ঘটলে শস্যশ্যামলা হয় বসুন্ধরা, এমনটাই মনে করা হয়।
আর দেবীর সর্বশেষ বাহন দোলাও অশুভ ইঙ্গিত দেয়। এতে দেবীর আগমন এবং গমন হলে মড়ক, মহামারী হয় বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ প্রাণহানি। এই বিষয়ে শাস্ত্রে বলা হয়েছে 'দোলায়াং মড়কাং ভবেৎ।' কিন্তু কেন এমন ভাবা হয়? আসলে দোলা অর্থাৎ পালকিতে যাত্রা করলে তাতে স্থিরতা কম থাকে, তা সর্বদা দোদুল্যমান। এতেই বিপদের ইঙ্গিত মেলে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।