কাশ্যপ মুনি একুশগাছি দূর্বাঘাস নিবেদন করলেন দেব গণপতিকে। গণপতি স্থির হলেন। ভীষণ প্রদাহের উপশম হয়েছে। চোখ চেয়ে গণপতি বললেন, আজ থেকে আমার পুজোয় একুশগাছি দূর্বা যেন নিবেদন করা হয়। তা না হলে আমার পুজো হবে না।
সে এক সময়ের কথা , যমরাজা ও অপ্সরী তিলোত্তমার পুত্র অনলাসুর দারুণ তাণ্ডব শুরু করেছে। অনলাসুর মহাদেবের কাছে বর প্রার্থনা করে নিরবচ্ছিন্ন অগ্নিদৃষ্টির বর পেয়েছে। যে দিকেই সে তাকায়, সেইখানেই আগুন ধরে যায়।
সামনেই আসতে পারে না কেউ, দূর থেকে সবাইকে ভস্ম করে দেয় অনলাসুর। দেবতাদের যত সৈন্য-সামন্ত, সকলেই তার কাছে ভস্মীভূত হয়ে গেল। দেবরাজ ইন্দ্রকে স্বর্গ থেকে উৎখাত করে সে গিয়ে বসল স্বর্গের সিংহাসনে। অগ্নিদৃষ্টিতে অগ্নি বর্ষণ করে সমস্ত ভূমণ্ডলকে পীড়িত ও ব্যতিব্যস্ত করে তুলল।
সকল দেবতারা গেলেন গণপতির কাছে। কারণ, তিনি গণের পতি গণপতি। তিনি আশ্বাস দিলেন, অনলাসুরকে বধ করে তাঁদের উদ্ধার করবেন। কিন্তু এই ভয়ানক রাক্ষসের হাত থেকে কী ভাবে উদ্ধার করবেন জগৎকে? ভাবতে বসলেন গণপতি।
কিন্তু তিনিও যে গণপতি, তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির কথা সর্বজনবিদিত। উপায় বেরোল। নিজেকে ছোট করতে করতে একেবারে বিন্দুর মতো ক্ষুদ্র করে ফেললেন গণপতি। তার পরে দারুণ ক্ষিপ্র গতিতে আক্রমণ করলেন অনলাসুরকে। ক্ষুদ্র বিন্দুর ন্যায় শরীরটিকে অনলাসুর ভস্ম করবে কী! লক্ষ্য স্থির করে তবেই না বর্ষণ! কিন্তু অনলাসুর যে আক্রমণকারীকে ভাল ভাবে দেখতেই পায় না!
ক্রোধে নিজেই অগ্নিশর্মা হয়ে গেল অনলাসুর। অগ্নিবর্ষণ বন্ধ করে গিলে নিতে চাইল বিন্দুবৎ গণপতিকে। আর তখনই গণপতি আপনার স্বরূপে প্রকাশিত হলেন। মস্ত দেহ ধারণ করে উল্টে গিলে ফেললেন অনলাসুরকেই।
গিলে তো ফেললেন, কিন্তু এই অগ্নিযন্ত্রকে হজম করবেন কী উপায়ে? অনলাসুর গণেশ ঠাকুরের পেটের মধ্যে গিয়ে ক্রমাগত অগ্নিবর্ষণ করে তাঁর উদর-অন্ত্র দগ্ধ করতে লাগল। ভীষণ যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলেন গণপতি। মাতা পার্বতী সন্তানকে কোলে নিয়ে চন্দনের লেপে দেন। কিন্তু জ্বালা যে কমে না! মহাদেব পুত্রের উদরে শক্ত করে বেঁধে দেন বাসুকি নাগ, সর্পের শীতল শরীর স্পর্শে যদি জ্বালা কমে। বিষ্ণুদেব পদ্মপাত্রে শীতল জল এনে তার উদরে মুছিয়ে দেন। কিন্তু না, কিছুতেই সে প্রদাহ কমে না। এমন সময়ে মহামুনি কশ্যপ পূর্ণ ভক্তি ও সমর্পণে একুশ গাছি দূর্বা ছিঁড়ে অর্পণ করলেন তাঁকে। ভারী অদ্ভুত, ধীরে ধীরে স্থির হয়ে এল তাঁর শরীর।
কশ্যপ মুনিকে জিজ্ঞাসা করা হল, কী এই একুশ দূর্বার মাহাত্ম্য! মুনি বললেন, এই ২১ দূর্বা হল জাগতিক সমষ্টির নিবেদন। অর্থাৎ, পঞ্চ ভূত, পঞ্চ প্রাণ, পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়, পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় ও মন– মোট ২১টি দূর্বা তাদেরই প্রতীক।
এর অর্থ, অন্তর থেকে পূর্ণ মনপ্রাণ দিয়ে মর্ত্যের প্রতিটি প্রাণ দূর্বা নিবেদনের মাধ্যমে তাদের ঈশ্বরের সুস্থতার প্রার্থনা করেছে। তার চেয়ে বড় যে আর কিছুই নেই। সে দিন থেকে ২১গাছি দূর্বায় পুজো হয় গণপতির।
অন্য দিকে ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখুন, দূর্বা ভেষজ গুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ। দূর্বা শরীর শীতল করে, পিত্ত ও কফ নাশ করে এবং বহু রোগের উপশম করে।
দ্বিতীয়ত, কঠিন মাটিতে কঠিন পরিবেশেও দূর্বাঘাস টিকে থাকে। অর্থাৎ কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে যদি আপনি টিকে থাকেন, তবেই ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনো যায়। পৌঁছনো যায় পরম ব্রহ্মের কাছে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।