দুর্গাপুজোর ঠিক এক মাস পর কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে পূজিত হন দেবী জগদ্ধাত্রী। বিভিন্ন তন্ত্র ও পুরাণ গ্রন্থ অনুযায়ী জগদ্ধাত্রী হলেন দেবী দুর্গার আর এক রূপ। উপনিষদে জগদ্ধাত্রীর নাম উমা হৈমবতী। কাত্যায়নীতন্ত্রে কার্তিকী শুক্লা নবমীতে দেবী জগদ্ধাত্রীর আবির্ভূত হওয়ার কথা আছে। জগদ্ধাত্রী পুজো তান্ত্রিক মতে হয়ে থাকে। পুজোর নিয়মটিও একটু স্বতন্ত্র।
জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রথম রূপ, মূর্তির বিবরণ, পুজো পদ্ধতি, ধ্যান, পুজো কাল সৃষ্টি করেন হরিপুর ব্রহ্ম শাসন অঞ্চলের সাধক চন্দ্রচুড় তর্কচূড়ামণি। আবার কারও মতে বঙ্গ তান্ত্রিক সিদ্ধপুরুষ কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশবংশীয় মহাপন্ডিত তন্ত্রজ্ঞ সিদ্ধসাধক কৌলাবধূতাচার্য্য রঘুনাথ তর্কবাগীশ মহাশয়। 'আগমতত্ত্ব বিলাস' মহাপুস্তকে জগদ্ধাত্রী পুজোর বীজ মন্ত্র, দীক্ষাবিধির বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন তিনি।
'কালবিবেক' গ্রন্থে পুজোর বিধান প্রসঙ্গে শূলপাণি লিখছেন:
কার্তিকোঽমলপক্ষস্য ত্রেতাদৌ নবমেঽহনি।
পূজয়েত্তাং জগদ্ধাত্রীং সিংহপৃষ্ঠে নিষেদূষীম্।।
যার অর্থ- ত্রেতাযুগের প্রারম্ভে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে সিংহপৃষ্ঠে সমাসীনা দেবী জগদ্ধাত্রীর পুজো করিবে।
দুই প্রথায় পূজিতা হন দেবী। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী – এই তিন দিন ধরে চলে পুজো। ষোড়শ উপাচারে দেবীর পুজো হয়। কোথাও কোথাও প্রথম বা দ্বিতীয়ার পুজোর পর কুমারী পুজোর আয়োজন করা হয়। এই পুজোয় বলিদানের নিয়ম রয়েছে। ছাগ বলির বদলে আঁখ বা চাল কুমড়ো বলিও করা হয়।
দুর্গাপুজোর মতোই জগদ্ধাত্রী পুজোতেও বিসর্জনকৃত্য বিজয়াকৃত্য নামে পরিচিত। এমনকী পুষ্পাঞ্জলি ও প্রণাম মন্ত্রসহ পুজোর অনেক মন্ত্রও দুর্গাপুজোর অনুরূপ।
তবে দুর্গাপুজোর সঙ্গে জগদ্ধাত্রী পুজোর সঙ্গে বহু মিল থাকলেও, নবপত্রিকার বিধি নেই। জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমীতেই মূলত দেবীর আরাধনা হয়। বছরের পর বছর ধরে বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মেনে এক দিনে পুজো হয় বেলুড় মঠেও। মানে নবমী তিথিতে সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীর পুজো হয়ে থাকে। তিনভাগে পুজোর আয়োজন করা হয়। পূর্বাহ্ন, মধ্যাহ্ন এবং অপরাহ্নে পুজো। তিন প্রহরের পুজোর পর হয় হোম, পুষ্পাঞ্জলি ও সন্ধ্যারতি। দর্পণে মায়ের বিসর্জন হবে। তার পর ওই একই দিনে সন্ধ্যায় হয় প্রতিমা বির্সজন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।