সিদ্ধিদাতা গণেশকে নিয়ে তাঁর ভক্তদের মনে যেমন ভক্তির কোনও অন্ত নেই, তেমনই তাঁকে নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতূহলেরও কোনও শেষ নেই। তাঁর জন্মবৃত্তান্ত থেকে শুরু করে নানা কীর্তি, সবেতেই রয়েছে রোমাঞ্চ! গণপতির ছবি বা মূর্তি দেখলেই যে জিনিসটি প্রথমেই নজর কাড়ে, তা হল তাঁর একদিকের একটি ভাঙা দাঁত! কিন্তু, সেটি ভাঙা কেন? তা নিয়ে প্রচলিত রয়েছে পৌরাণিক কাহিনি। আবার এই ভাঙা দাঁতের উপস্থিতি বিশেষ বার্তাবাহী বলেও মনে করা হয়।
গণেশের কোন দাঁত ভাঙা এবং কেন?
গণেশের ভাঙা দাঁতটি হল - তাঁর ডান দিকের দাঁত। এই দাঁত ভাঙার পিছনে কয়েকটি পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। যার মধ্যে দু'টি বহুল প্রচলিত:
১. পরশুরামের সঙ্গে যুদ্ধ: একবার পরশুরাম শিবের সঙ্গে দেখা করতে কৈলাসে গিয়েছিলেন। কিন্তু গণেশ তাঁকে বাধা দেন। এতে পরশুরাম রাগান্বিত হয়ে তাঁর কুঠার দিয়ে গণেশকে আঘাত করেন। সেই কুঠার ছিল শিবের দেওয়া। তাই, গণেশ তাঁর পিতার দেওয়া অস্ত্রের সম্মান রাখতে আঘাতটি প্রতিহত না করে নিজের একটি দাঁত দিয়ে সেটি গ্রহণ করেন। ফলে তাঁর একটি দাঁত ভেঙে যায়।
২. মহাভারত রচনা: মহর্ষি বেদব্যাস যখন মহাভারত রচনা করার জন্য একজন লিপিকার খুঁজছিলেন, তখন গণেশ সেই দায়িত্ব নেন। কিন্তু, তিনি একটি শর্ত দেন যে বেদব্যাসকে একটানা শ্লোক বলে যেতে হবে এবং তিনি কোথাও থামতে পারবেন না। এদিকে, মহাভারত রচনা করার সময় গণেশের কলম ভেঙে যায়। কিন্তু, শর্ত অনুযায়ী তিনি লেখা থামাতে পারছিলেন না। তাই, তিনি নিজের একটি দাঁত ভেঙে, তাতে কালি ব্যবহার করে মহাভারত লেখা সম্পন্ন করেন।
গণেশের ভাঙা দাঁতের তাৎপর্য কী এবং এটি কীসের প্রতীক?
১. ত্যাগের প্রতীক: মহাভারত রচনার জন্য গণেশের নিজের দাঁত ভেঙে ফেলার কাহিনিটি আসলে ত্যাগ এবং নিঃস্বার্থ সেবার প্রতীক। জ্ঞান এবং সৃষ্টির স্বার্থে তিনি ব্যক্তিগত আরাম বা অঙ্গহানিকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছিলেন।
২. জ্ঞান ও প্রজ্ঞার প্রতীক: গণেশের এই রূপটি জ্ঞানের দেবতা হিসাবে তাঁর পরিচয়কে আরও দৃঢ় করে। ভাঙা দাঁতটি বোঝায় যে জ্ঞানের পথে চলতে গেলে মাঝে মাঝে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয় এবং এর জন্য ব্যক্তিগত ক্ষতিও স্বীকার করতে হতে পারে।
৩. অপূর্ণতার স্বীকৃতি: এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে স্বয়ং দেবতা হয়েও গণেশ নিখুঁত নন। তাঁর ভাঙা দাঁতটি অপূর্ণতাকে গ্রহণ করার প্রতীক। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, পূর্ণতা কেবল শারীরিক সৌন্দর্যে নয়, বরং তা জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং কর্মের মধ্যে নিহিত থাকে।
বাস্তব জীবনের প্রতি বার্তা:
১. বাধার মোকাবিলা: জীবনের পথে বাধা আসা স্বাভাবিক। গণেশ যেমন পরশুরামের অস্ত্রের আঘাত নিজের দাঁত দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলেন, তেমনই আমাদেরও বাধা এলে ধৈর্য্য এবং সাহসের সঙ্গে তার মোকাবিলা করা উচিত।
২. লক্ষ্য অর্জনে দৃঢ়তা: মহাভারত লেখার কাহিনি থেকে আমরা শিখি যে কোনও বড় লক্ষ্য অর্জনের জন্য যদি আমাদের সামান্য কিছু ত্যাগ করতে হয়, তবে তা করা উচিত। নিজের লক্ষ্যপূরণের জন্য আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং অবিচল থাকতে হবে।
৩. অপূর্ণতাকে গ্রহণ: আমাদের সকলের জীবনেই কিছু অপূর্ণতা থাকে। গণেশের ভাঙা দাঁত আমাদের শেখায় যে এই অপূর্ণতাগুলিকে লজ্জা বা দুর্বলতা হিসাবে না দেখে সেগুলিকে আমাদের শক্তির উৎস হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। কারণ - আমাদের অন্তরের শক্তি, প্রজ্ঞা এবং গুণাবলীই হল আসল পরিচয়।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।