প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

উৎসবের ছুটিতে সাহিত্যের ছোঁয়া, কী ভাবে শুরু হয়েছিল প্রথম পুজো সংখ্যার সফর?

১৫০ বছরেরও বেশি আগে পুজো সংখ্যার সফর শুরু হয়েছিল। বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয়েছিল পত্রিকাটি কিনতেই হবে।

সৌভিক রায়

শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৫ ১৬:৫৭
প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

বাঙালির দুর্গাপুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হল শারদ পত্রিকা। হাল আমলে শত শত শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। উনিশ শতকে কিন্তু চিত্রটা মোটেই এমন ছিল না। কী ভাবে শুরু হয়েছিল প্রথম পুজো সংখ্যার যাত্রা? জানেন সেই কাহিনি?

প্রায় দেড় শতক আগে সফর শুরু করেছিল পুজো সংখ্যা। তবে তাকে নিছক পুজো-পত্রিকা বলা চলে না। কারণ, পুজোর ছুটিতে পড়ার জন্য অবসর বিনোদনের এক উপাদান হিসাবে তার জন্ম। দুর্গাপুজোকে ঘিরে কোনও বিশেষ লেখা তাতে ছিল না।

পুজো, বলা ভাল পুজোর ছুটি উপলক্ষে প্রকাশিত প্রথম পত্রিকার নাম ‘ছুটির সুলভ’। যদিও এটি কোনও স্বাধীন পত্রিকা নয়। ব্রহ্মানন্দ কেবশচন্দ্র সেনের ভারত সংস্কার সভার পত্রিকা ছিল ‘সুলভ সমাচার’। বাংলা ১২৮০ সনের দুর্গাপুজোয় সুলভ সমাচারের একটি বিশেষ সংস্করণ ‘ছুটির সুলভ’ নামে প্রকাশ পায়। পুজোর ছুটিতে পড়া হবে, তাই নাম ‘ছুটির সুলভ’। ব্রাহ্মসমাজের পত্রিকা, সেই কারণে একে পুরোদস্তুর শারদ সংখ্যা বলা যায় না।

১২৮০ সনের ১০ আশ্বিন বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছিল ‘ছুটির সুলভ’। দাম রাখা হয়েছিল এক পয়সা। সত্যিই সুলভ! পত্রিকাটি দারুণ সাড়া ফেলেছিল। জটায়ুর ভাষায় বলতে হয়, ‘সেলিং লাইক হট্ কচুরিজ্!’ পত্রিকার এ হেন কাটতির কারণ ছিল প্রচার। আজকের ভাষায় ‘প্রোমোশন’। দেদার বিজ্ঞাপন, জোর প্রচার চলেছিল পত্রিকা প্রকাশের আগে।

১২৮০ বঙ্গাব্দের ১ আশ্বিন মঙ্গলবার সুলভ সমাচার পত্রিকায় ছুটির সুলভের প্রথম বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। বিজ্ঞাপনে লেখা ছিল, ‘ছুটির সুলভ! আগামী ছুটি উপলক্ষ্যে সুলভের একটি বিশেষ খণ্ড বাহির হইবে। উত্তম কাগজ, উত্তম ছাপা। দাম কিন্তু এক পয়সা। মজা করে পড়িতে পড়িতে ঘরে যাও। একটা পয়সা দিয়ে সকলের কিনিতেই হইবে। দেখ যেন কেউ ফাঁকি পড়ো না। বাড়িতে যেমন ভিয়েন বসে, আমাদের ছুটির সুলভেরও ভিয়েন বসিয়াছে। এবার ভালো-মন্দ, নীতি, তামাসা, নানারকম ছবি, কিছু কিছু ধর্মের কথাও বাহির হইবে। ছেলে, বুড়ো, যুবা সকলে যেন এক-একটি পয়সা দক্ষিণা দিয়া ইহার পূজা করেন। ১৮ অক্টোবর শনিবার ইনি অবতীর্ণ হবেন। পথে ঘাটে বাজারে সুলভের দর্শন। রেলওয়েতেও ইহাকে দেখিতে পাইবেন।’

এক সপ্তাহ পরে ৮ আশ্বিন তারিখে দ্বিতীয় বিজ্ঞাপন বেরোল। তাতে লেখা হল, ‘আগামী বৃহস্পতিবার ছুটির সুলভ বাহির হইবে। কেমন সুন্দর কাগজ, কেমন পরিষ্কার ছাপা, কেমন মজার ছবি, অথচ সস্তা দাম। ছেলে, বুড়ো, যুবা সকলেই মজা করিয়া ছুটির সুলভ পড়ো। দেখ যেন কেউ ফাঁকি পড়ো না। ...কত মজার মজার কথা।’

গল্প, প্রবন্ধ, ধাঁধা, ফ্যাশন, কমিক্স, ছড়া, ব্যাঙ্গাত্মক পত্র, বিজ্ঞান বিষয়ক ফিচার... কী না ছিল পত্রিকায়! বাসন্তী রঙের মলাটে দু’পাতা জুড়ে ছবি। তাতে এক বালক সাবানের ফেনার বুদবুদ ওড়াচ্ছে। কোনও এক গ্রামের মাতাল জমিদার ছেলের বিয়ে দিতে গিয়ে কী কী কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন, ছিল তার কাহিনিও। বর, কনে আর কনের এক মামা ছাড়া পাত্র ও পাত্রী উভয় বাড়ির সব্বাই মাতাল। মাতালদের মাতলামি পেরিয়ে কী ভাবে চার হাত এক হল; তা নিয়েই গপ্পো।

পুজো উপলক্ষে অশ্লীলতা, অনাচার, ব্যাভিচার বিরোধী লেখাও ছিল। মদ্যপানে দেশ রসাতলে যায় বলেও পাঠককে সতর্ক করা হয়েছিল। রায়বাহাদুর খেতাব লোভীদের ঠুকেও লেখা হয়েছিল ‘ছুটির সুলভ’-এ। খোঁচা থেকে রেহাই পাননি সাহেব সাজতে মরিয়া বাঙালিরাও।

‘রেলওয়ে কোম্পানির নূতন আইন’ নামের এক প্রবন্ধে রেলকে সমালোচনায় বিদ্ধ করা হয়েছিল। বিভিন্ন শ্রেণির যাত্রীদের প্রতি রেল কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক আচরণের কথা উল্লেখ ছিল তাতে। তদানীন্তন সময়ে লেখকের নাম দেওয়ার চল ছিল না। ফলে রচনাটি কার, তা জানার উপায় নেই।

বিজ্ঞানভিত্তিক ফিচার ছিল, মার্কিন মুলুকের গরফু নামের এক পাখির জীবনচক্রকে উপজীব্য করে লেখা। রচনার শিরোনাম ছিল ‘পাখির শহর’। ফ্যাশন বিষয়ক লেখাটির নামকরণ করা হয়েছিল ‘কাচের চুল’। ছড়ার ছড়াছড়ি ছিল ‘মুষ্টিযোগ’ শীর্ষক এক বিভাগে। সবই সশ্লেষে লেখা। রঙ্গ-তামাসা গোছের। ছবি নামে ছিল কৌতুক কার্টুনের বিভাগ। আর ছিল ‘মজার কথা’, যা ধাঁধা গোত্রের। আজকের বঙ্গ সন্তানেরা যাকে ‘গুগলি’ বলে চিহ্নিত করেন। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে, ‘এমন নিরাকার জিনিস কী আছে যাতে আকার দিলে মানুষের টাকা হয়। উত্তর টাক।’ হালকা চালের পত্রিকা হলেও সমাজ দর্পণের ভূমিকা পালনের কর্তব্যকে এড়িয়ে যায়নি ‘ছুটির সুলভ’।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

তথ্যঋণ: পুজো সংখ্যার সেকাল-একাল, সন্দীপ কুমার দাঁ।

স্মৃতির পুজো, শ্রীপান্থ

Durga Puja Magazine
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy