শরতের দুর্গাপুজো হল মহাপুজো। পণ্ডিতেরা একে উৎসবের আখ্যা দিয়েছেন। মহাপুজোর অন্তিম তিথি হল নবমী। যা ‘মহা’ অভিধা পেয়েছে। এ দিনের মূল আকর্ষণ বলিদান। তাতে ছাগ থেকে শুরু করে মাছ, মহিষ ইত্যাদি নিবেদনের রেওয়াজ রয়েছে। এক কালে এক একটি রাজপরিবার নরবলি অবধি দেওয়া হত। শাক্ত আরাধনা মাত্রই বলিদানের রীতি এবং আরাধ্যের উদ্দেশ্যে কোনও না কোনও জীবকে উৎসর্গ করাই নিয়ম। একদা ব্রাহ্মণদের মধ্যে কেবল বলিদানের মাংস খাওয়ার চল ছিল। বলির মাংস ছাড়া অন্য মাংসকে বলা হতো ‘বৃথা মাংস’।
ধীরে ধীরে বাংলায় বৈষ্ণব ভাবধারার প্রভাব বেড়েছে। বলিদানে প্রাণী উৎসর্গের প্রচলনও তত কমেছে। ছাগ, মাছ ইত্যাদির অনুকল্প হিসাবে চালকুমড়ো, আখ ইত্যাদি বলি দেওয়া হয়। দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে কী কী যে বলি দেওয়ার রেওয়াজ আছে, তা কল্পনা করা যাবে না। বাতাবি লেবু, শশা, আদা গাছ, এমনকী গোলমরিচ অবধি বলি দেওয়া হয় দেবীর উদ্দেশ্যে!
মণ্ডাও বলি দেওয়া হয় দুগ্গার সামনে। হেতমপুর রাজবাড়ির পুজোয় মণ্ডার বলির নিয়ম আছে। সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীর দিন হয় মণ্ডা বলি। সপ্তমীর দিন এক কেজি ওজনের মণ্ডা, অষ্টমীতে দু’কেজি ওজনের মণ্ডা এবং নবমীতে এক কেজি ওজনের মণ্ডা বলি দেওয়া হয়। বাকতা গ্রামে দেবী দুর্গার উদ্দেশ্যে মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণে মণ্ডা বলি দেওয়া হয়। বর্ধমানের খাজা আনোয়ার বেড় এলাকার জমিদার ছিলেন ব্রজেন্দ্রলাল দাস। ব্রজেন্দ্রলালের বাড়ির পুজোয় বলিদানের চল ছিল। পাঁঠাবলি হতো সেখানে। কথিত আছে, ব্রজেন্দ্রলাল পশুবলি বন্ধ করার স্বপ্নাদেশ পান। সেই থেকে পশু বলি প্রথা বন্ধ, শুরু হয় মণ্ডা বলি দেওয়া।
পারিবারিক দুর্গাপুজোর এক আচার হল শত্রুবলি। বহু বনেদি বাড়ির পুজোয় এই রীতি রয়েছে।
কুমোরটুলি সেন পরিবার অর্থাৎ গঙ্গাপ্রসাদ সেনের বাড়িতে শত্রুবলি হয়। জলপাইগুড়ির নিয়োগী পরিবারের দুর্গাপুজায় ‘শত্রুবলি’র রীতি রয়েছে। এই রীতি প্রতীকী বলির নামান্তর মাত্র।
কলাগাছের থোড় কেটে, তার উপরে পিটুলি অর্থাৎ চালের গুঁড়ো দিয়ে মানুষের প্রতিকৃতি বানানো হয়। চুন-হলুদ দিয়ে তৈরি হয় রক্ত। বলিতে শত্রুকে দুই খণ্ড করে বাড়ির বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। দু’টি খণ্ড ছুঁড়ে দেওয়া হয় বাড়ির দুই প্রান্তে। তার কায়দাও রয়েছে। হাঁটুর নীচ দিয়ে শত্রুর দেহখণ্ড ছুঁড়ে ফেলা হয়। অনেকে মাটি দিয়েও শত্রু বানান।
আরও পড়ুন:
সুভাষগ্রামের অর্ধ-কালী দুর্গার পুজোতেও শত্রুবলির রেওয়াজ রয়েছে। পরিবারের কোনও সদস্য, সবার আড়ালে চালের গুঁড়ো দিয়ে মানুষ-রূপী পুতুল তৈরি করেন। পুতুলটি দু’টি কচুপাতার মধ্যে রেখে বলির জায়গায় রাখা হয়। তার উপরে সলতে জ্বালানো হয়। পরিবারের ছেলেরা সবাই মিলে ওই শত্রুরূপী পুতুল বলি দেয়। পা দিয়ে গুঁড়িয়ে মিশিয়েও দেয়। অর্থাৎ, পরিবার ও পৃথিবীর শত্রু নিধন হল।
‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।