প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

মহিষমর্দিনী দশভুজা মা যোগাদ্যা আসলে কে, কী-ই বা তাঁর উপাখ্যান?

বর্ধমান মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রাম এমন এক গ্রাম, যেখানে শত শত বছর ধরে দুর্গাপুজোর সময়ে কেবলমাত্র নবপত্রিকাতেই দেবীর পুজো সমাপন হত। গ্রামের কোনও মণ্ডপেই দেবীমূর্তি থাকত না।

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১১:২২
প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

‘কলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী ব্রাহ্মণী, কচুর কালী, হরিদ্রার দুর্গা, জয়ন্তীর কার্তিকী, বেলের শিবা, ডালিমের রক্তদন্তিকা, অশোকের শোকরহিতা, মানকচুর চামুণ্ডা ও ধানের লক্ষ্মী। সমবেত ভাবে নবপত্রিকার অধিষ্ঠাত্রী দুর্গা। নবপত্রিকায় এই সমস্ত দেবী পূজিত হইয়া থাকেন।' (হিন্দুর আচার অনুষ্ঠান, চিন্তাহরণ চক্রবর্তী)

এই নবপত্রিকাকেই কলাবউ। কেউ নদী বা পুষ্করিণীতে, আবার কেউ মণ্ডপেই উষ্ণোদক বা হালকা গরম জলে স্নান করিয়ে দেবীকে স্থাপন করেন গণেশের পাশে। কাঠের সিংহাসনে আসীন দেবী পুজো পান, দুর্গাপ্রতিমার সঙ্গেই।

কিন্তু বর্ধমান মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রাম এমন এক গ্রাম, যেখানে শত শত বছর ধরে দুর্গাপুজোয় কেবলমাত্র নবপত্রিকাতেই দেবীর পুজো সমাপন হত। গ্রামের কোনও মণ্ডপেই দেবীমূর্তি থাকত না। নবপত্রিকাই সেখানে দেবীর প্রতিভু স্বরূপ। দেবীর মূর্তি বা প্রতিমায় পুজো হয় কেবল বছরের নির্দিষ্ট কয়েকটি দিন। কারণ দেবী সেই দিনগুলিতে যোগাদ্যা রূপেই অবস্থান করেন। মা যোগাদ্যা দেবী দুর্গারই আর এক নাম, যোগ এবং আদ্যার সন্ধিতে।

মা যোগাদ্যা পীঠ শক্তিপীঠ। পুরাণ মতে, দেবীর ডান পায়ের বুড়ো আঙুল পড়েছিল এখানে। প্রাচীন কাহিনি বলে, অতীতে এখানে দেবীর পুজোয় নরবলি হত। প্রতি বছর বিভিন্ন ঘর থেকে পালা করে সন্তান নেওয়া হতো তার জন্য। এক বছর পালা পড়েছিল এক প্রবীণ ব্রাহ্মণ দম্পতির। তারা দেবীর কাছে কেঁদে পড়ে শেষমেশ সন্তান নিয়ে পালিয়ে যায়। পথে দেবী তাদের দর্শন দেন এবং নরবলি মহিষবলিতে পরিণত হয়। দুর্গা হলেন সাক্ষাৎ দেবী মহিষমর্দিনী।

দেবীর প্রাচীন মূর্তিটি হারিয়ে যায়। পরে পুকুর থেকে মূর্তি উদ্ধার হয় এবং সেই থেকে ছ’টি বিশেষ দিন ছাড়া মায়ের পুজো কখনওই মূর্তিতে হয় না। মা যোগাদ্যার প্রাচীন মূর্তি কিন্তু আদি দশভুজা, মহিষমর্দিনী দুর্গা। প্রাচীন যে দেবীমূর্তিটি হারিয়ে গিয়েছে, সেটির বয়স ১২০০ সনের বেশি বলে অনুমান করা হয়।

কথিত, এই গ্রামেরই ঘাটে বধূ বেশে শাঁখা পরেছিলেন উমা। তাই দেবীকে শাঁখা পরানো হয় বৈশাখ উৎসবে। দশভূজা, মহিষাসুরমর্দিনী মহেশ্বরী দুর্গার প্রাচীন রূপ, যেখানে চার সন্তান নেই এবং মহিষকে দলন ও দমন করছেন দেবী।

ভাষ্য মতে, দেবী এখানে রাবণ পূজিতা মহীরাবণ পূজিতা পাতাল ভৈরবী। তাই সারা বছর থাকেন জলের নীচে। বছরের মধ্যে কয়েকটি নির্দিষ্ট দিন তাঁকে জল থেকে তুলে পুজো করা হয়। তার মধ্যে একটি দিন বৈশাখ সংক্রান্তি। ওই দিন দেবীকে তোলা হয় এবং সন্ধ্যায় তিনি পুনরায় জলশয্যা নেন। জ্যৈষ্ঠের চতুর্থ দিন দুর্গা পুনরায় ভূমিতে অবস্থান করেন।

নবপত্রিকা ও শাকাম্ভরী কল্পনার কারণে মূল মন্দিরে বৈশাখ উৎসবের আগে ও পরে কৃষিকাজ, কর্ষণ বন্ধের রীতি ছিল। যোগাদ্যা দুর্গা সাক্ষাৎ শাকাম্ভরী রূপ। তাই তিনি কৃষিকাজের দেবী হিসেবে পূজিতা। এবং কৃষি কাজের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বলেই দুর্গাপুজোর পাঁচ দিন তাঁর নবপত্রিকায় পুজো হয়। নবপত্রিকা অর্থাৎ মাতৃছায়া, ফসল, ছড় প্রজনন (কলার কাঁদি) ও উর্বরতার প্রতীক।

আর এ ভাবেই লৌকিক দেবী যোগাদ্যা আর দুর্গা মিলেমিশে গেছেন অঙ্গাঙ্গী ভাবে, লৌকিক দর্শনের হাত ধরে।

তথ্যসূত্র —

যোগাদ্যা কথা / যোগাদ্যা বন্দনা

উইকিপিডিয়া প্রতিবেদন

স্মৃতির পূজা- শ্রীপান্থ

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

Goddess Durga
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy