প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

বাবুদের বাড়ির ঠাকুরদালান থেকে আমজনতার আঙিনায়, দুর্গাপুজোর ‘সর্বজনীন’ হয়ে ওঠার সাক্ষী ইতিহাস

রাজবাড়ি, জমিদারবাড়ির ঠাকুরদালানের পুজো থেকে ‘বারোয়ারি’ উৎসব, সুদীর্ঘ সফরে মিশে ইতিহাস, ঐতিহ্য। বিত্তবানদের বাড়িতে কেন শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো? আঠেরো শতকে কয়েক জন বন্ধুর উদ্যোগ কী ভাবে খোলনলচে বদলে দিল বাংলার শ্রেষ্ঠ উৎসবকে?

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৫ ১০:০৫
প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

বাংলা ও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। পুজোর ধর্মীয় আচার, পৌরাণিক কাহিনি পেরিয়ে দুর্গাপুজো হয়ে উঠেছে দুর্গোৎসব। রাজা, জমিদারদের বাড়ির উঠোনে, ঠাকুরদালানে শুরু হয়েছিল দেবী দুর্গার আরাধনা। কালের নিয়ম আজ দুর্গাপুজো সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বঙ্গদেশে কী ভাবে সর্বজনীন উৎসব হয়ে উঠল দুর্গা আরাধনা?

জনশ্রুতি অনুযায়ী, ১৫০০ সাল নাগাদ মালদহ দিনাজপুরের মহারাজ দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজোর প্রচলন করেন। কারও কারও মতে তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ দুর্গাপুজো শুরু করেন। আকবরের রাজত্বকালে ১৫৮০ নাগাদ জাঁকজমকপূর্ণভাবে পুজো করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন বাংলার বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম কংসনারায়ণ। রাজা কংসনারায়ণই পুত্র-কন্যা সহ দেবী উমার পুজোর করেছিলেন। আর একটি মতে, মনুসংহিতার টীকাকার কুলুকভট্টের পিতা উদয়নারায়ণই প্রথম দুর্গাপুজো আরম্ভ করেছিলেন। কংসনারায়ণ ছিলেন তাঁর পৌত্র। বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের দুর্গাপুজোর বয়স হাজার বছরের বেশি। আজও মল্লভূমিতে পটের দুর্গা পুজো পান।

ইতিহাস বলছে, ১৬০১ সাল নাগাদ নদিয়ায় প্রথম দুর্গাপুজোর সূচনা শুরু করেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদার। পলাশীর যুদ্ধের পরবর্তী সময় রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে উৎসবের চেহারা নেয় দুর্গাপুজো।

ব্রিটিশ ভারতে কোম্পানির নানা বন্দোবস্তের দৌলতে হঠাৎ করেই জমিদার, বাবু শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। বিপুল টাকাকড়ি থাকলেও এরা কেউই বনেদি বড়লোক ছিলেন না। তাই বিত্ত-বৈভব দেখাতে তথা মেকি আভিজাত্য প্রদর্শনের মাধ্যম হয়ে ওঠে দুর্গাপুজো। এককথায় সামাজিক কৌলীন্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিল বাবুদের বাড়ির দুর্গাপুজো। সাহেবদের তুষ্ট করতে বিত্তবানেরা দুর্গাপুজোর আয়োজন করতেন। তখনও বাবুদের বাড়ির পারিবারিক অনুষ্ঠান পরিচয়েই আটকে ছিল দেবীর আরাধনা। চিরদিন কারও সমান যায় না। কালের নিয়মে হুগলির গুপ্তিপাড়া এমনই এক বাবু আর্থিক সংকটে পড়েন। ১৭৯০ সাল নাগাদ বন্ধ হয়ে যেতে বসে তাঁর বাড়ির বিন্ধ্যবাসিনী পুজো। পুজো বন্ধ হয়ে যাবে? এগিয়ে এলেন স্থানীয় বারোজন। তাঁরাই চাঁদা তুলে পুজোর আয়োজন করলেন। ১২ জন ‘ইয়ার’ বা ‘বন্ধু’ থেকেই ‘বারোয়ারি’ শব্দের উৎপত্তি। এভাবেই শুরু হয় ‘বারোয়ারি’ তথা সর্বজনীন দুর্গাপুজো। শ্রীপান্থ লিখে গিয়েছেন, ‘‘সেকালের সাংবাদিকেরা এই পুজো সম্পর্কে লিখতেন বার-এয়রি। হুতোম বলতেন বারোইয়ারি।’’

কলকাতায় বারোয়ারি দুর্গাপুজোর শুরু কী ভাবে?

ইতিহাসবিদদের মতে, ১৬১০ সালে বরিষার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের আটচালা মণ্ডপে কলকাতা শহরের প্রথম দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ আমল থেকে কলকাতার জমিদার বাড়িগুলিতে মহাধুমধাম করে দুর্গাপুজো আয়োজিত হচ্ছে। লালমুখো সাহেবরাও তাতে অংশগ্রহণ করতেন। ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ বাংলার আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একাধিক বদল এনেছিল। সেই বছরই শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজো আরম্ভ হয়। শোনা যায়, দুর্গাপুজোয় শোভাবাজার রাজবাড়িতে রাজা নবকৃষ্ণদেব সাহেবদের আমন্ত্রণ করে আমোদ-আহ্লাদে বিপুল অর্থ ব্যয় করতেন। রবার্ট ক্লাইভকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল রাজবাড়ির পুজোয়। ক্লাইভের আপ্যায়নে কোনও ত্রুটি রাখেননি নবকৃষ্ণ। জমিদার বাড়ির পুজোগুলিতে রীতিমতো প্রধান অতিথির পদ অলংকৃত করতেন সাহেবরা।

কলকাতায় বারোয়ারি পুজো আরম্ভ হয়েছিল বিংশ শতকের গোড়ায়। ১৯১০ সালে ভবানীপুরের বলরাম বসু ঘাট স্ট্রিটের ‘সনাতন ধর্মোৎসাহিনী সভা’ আনুষ্ঠানিকভাবে খাস কলকাতার বুকে প্রথম বারোয়ারি পুজো করে। এর বছর দশেকের মধ্যে বাগবাজারেও শুরু হয় সর্বজনীন দুর্গাপুজো। সময়ের দাবি মেনে ধীরে ধীরে শহরে বারোয়ারি দুর্গাপুজোর দাপট বাড়তে থাকে। পারিবারিক থেকে ‘সর্বজনীন’ হয়ে ওঠে বাংলার দুর্গাপুজো। মান্যের পুজো হয় সর্বজনের উৎসব।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Durga puja history Durga Puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy