প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

দুই-ই লক্ষ্মীর আরাধনা, তাও ফারাক কীসে কোজাগরী আর দীপান্বিতা লক্ষ্মীপুজোয়?

বাঙালির কাছে লক্ষ্মী ঘরের মেয়ে। মা দুগ্গা চলে গেলে খাঁ-খাঁ মনখারাপ নিয়ে শূন্য চালচিত্রের আঙিনায় পাতা হয় লক্ষ্মীর আসন। ধানের শীষ, পদ্মলতায় আঁকা হয় আলপনা।

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:৪৯
প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

বাঙালির কাছে লক্ষ্মী ঘরের মেয়ে। মা দুগ্গা চলে গেলে খাঁ-খাঁ মনখারাপ নিয়ে শূন্য চালচিত্রের আঙিনায় পাতা হয় লক্ষ্মীর আসন। ধানের শীষ, পদ্মলতায় আঁকা হয় আলপনা।

কোজাগরী পূর্ণিমার জোৎস্না ভরা রাতে প্যাঁচার পিঠে তিনি পৃথিবী প্রদক্ষিণ করেন। যে ঘরে আলো দেখেন, সে ঘরেই পড়ে তাঁর আলতা পায়ের দাগ।

কিন্তু দেবী লক্ষ্মী শুধু পূর্ণিমায় নয়, পূজিত হন অমাবস্যাতেও। গৌণ চান্দ্র কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে মানে দীপান্বিতা অমাবস্যার রাত্রে পূজিত হন ধনলক্ষ্মী।

শ্রী অষ্টলক্ষ্মী স্তোত্র অনুযায়ী, দেবী লক্ষ্মীর অষ্ট রূপের মধ্যে অন্যতম ধনলক্ষ্মী। তিনি ধনসম্পদ এবং সমৃদ্ধির দেবী। ঘর, ব্যবসা ও সংসারে প্রাচুর্য আনতে ধনলক্ষ্মীর উপাসনা করা হয়। তিনি প্রসন্ন হলে আয় বৃদ্ধি হয়।

ধনলক্ষ্মীর দুই রূপ। চতুর্ভুজা এবং ষড়ভুজা। দেবী রক্তবসনা, স্বর্ণবর্ণা। শ্বেত কিংবা গোলাপীও হয়ে থাকেন।

চতুর্ভুজা ধনলক্ষ্মীকে চক্র, পদ্ম, স্বর্ণমুদ্রা এবং অভয় মুদ্রায় দেখা যায়।

ষড়ভুজা ধনলক্ষ্মীর ছয় হাতে শঙ্খ, চক্র, তির-ধনুক, কলস, পদ্ম ও অভয় মুদ্রা। ষষ্ঠ হস্তে দেবী ধনবর্ষণ করেন।

স্বর্ণমুদ্রা এবং অভয় মুদ্রা তাঁর সম্পদ ও সমৃদ্ধি প্রদানের ক্ষমতাকে বোঝায়।

চক্র সময়, মনের পবিত্রতা এবং সুরক্ষার প্রতীক। শঙ্খ সৃষ্টির প্রতীক। ধনুর্বাণ বাধা বিপত্তি কাটিয়ে ওঠার প্রতীক। কুম্ভ জীবনের অমৃতের প্রতীক।

দেশের বেশ কিছু অংশে দেবী 'বৈভব লক্ষ্মী' নামেও পরিচিত।

বাংলার ঘরে ঘরে প্রতি বৃহস্পতিবার যে লক্ষ্মী পূজিত হন, তিনি কিন্তু দ্বিভুজা।

বাঙালির কাছে দেবী লক্ষ্মী আসলে আদরের কন্যা। তিনি 'ধনলক্ষ্মী'র চেয়েও বেশি ‘ধান্যলক্ষ্মী’। অতি ঘরোয়া, আটপৌরে।

বৃহস্পতিবারের পাঁচালিতে দেবী ধরাধামে আসেন গৃহস্থের বাড়ন্ত ভাঁড়ার ভরন্ত করতে। তিনি অন্নদায়িনী। ফুলে, ফলে, ধনে, মানে সংসারের শ্রীবৃদ্ধি ঘটান।

দুর্গোৎসবের পরে এক পক্ষকালের ব্যবধানে দু’বার লক্ষ্মীপুজো হয় - ‘কোজাগরী’ ও ‘দীপান্বিতা’। একটি পূর্ণিমায়, অন্যটি অমাবস্যায়। দুই পুজোই হয় রাতের বেলায়।

কার্তিক মাস ছাড়া বাংলার আর কোনও মাসে অমাবস্যায় লক্ষ্মীপুজো করা যায় না।

দীপান্বিতা লক্ষ্মী পুজো নিয়ে একাধিক কাহিনি প্রচলিত।

একটি গল্প এ রকম–

এক বার কোনও এক রাজার আদেশে কার্তিক অমাবস্যায় গোটা রাজ্য ছিল অন্ধকার। লক্ষ্মী দেবী প্যাঁচার পিঠে চড়ে রাজ্য পরিক্রমায় বেরিয়ে দেখেন, চার দিক অন্ধকার। শুধু ঘন বনের ভিতরে এক কুটিরে একটুখানি আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। সেই কুটিরেই নেমে এলেন দেবী। দেখেন এক দুঃখিনী রাজকন্যা প্রদীপ জ্বালিয়ে কাঁদছে। ঘরে যে বড় অভাব। প্রসন্ন হয়ে লক্ষ্মী বর দিলেন রাজকন্যাকে। তার দুঃখ ঘুচল। এ ভাবেই প্রচার পেল দীপান্বিতা রাতে লক্ষ্মীপুজোর কথা।

আরও একটি গল্প রয়েছে। সেই কাহিনি বলে, অর্থের গুরুত্ব নিয়ে এক বার অনর্থ বাধে বিষ্ণু ও পত্নী লক্ষ্মীর মধ্যে। কলহ সহ্য হয়নি বিষ্ণুপ্রিয়ার। তাই তিনি রাগ করে মর্ত্যে রাজকুমারী পদ্মাবতী হয়ে জন্মান। বৈকুণ্ঠ শ্রীহীন হলে বিষ্ণুও মর্ত্যগামী হন। গরীব কাঠুরিয়া জন্মে বনেতে তাঁর বাস। দু’জনের দেখাও হয়। কিন্তু লক্ষ্মীর দেখা পেয়েও তাঁকে ঘরে আনতে পারেননি বিষ্ণু। কারণ অর্থাভাব। শেষে যক্ষপতি কুবেরের কাছে ঋণ নেন। বহু বছর কেটে যায়, কিন্তু সেই ঋণ আর শোধ হয় না। শেষে লক্ষ্মীর কাছে হার মানেন। তাঁর কৃপাতেই কুবেরের ঋণমুক্ত হন বিষ্ণু।

আজও তিরুপতি মন্দিরে ভক্তরা দান করে কুবেরের ঋণ থেকে তাঁকে মুক্ত করার জন্য।

ধনলক্ষ্মী প্রসন্না হলে নানা উৎস থেকে আয় হয়। ধন-দৌলতের অধিকারী হয় মানুষ।

ঋগ্বেদ, পদ্মপুরাণ ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে লক্ষ্মী মূলত ধন, সৌভাগ্য ও ঐশ্বর্যের দেবী। বিষ্ণুর বক্ষলোকে তাঁর অবস্থান। গৃহস্থের ধনসম্পদ, ব্যবসার উন্নতি, গয়না, শস্যভাণ্ডার এবং ঐশ্বর্য ধনলক্ষ্মীর আধিপত্যক্ষেত্র।

তবে ধনলক্ষ্মী সম্পদদায়িনী হলেও শান্তি, স্থিতি, ধী, প্রজ্ঞা, মেধা ও সাহস দান করেন।

কোজাগরী লক্ষ্মীর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী প্যাঁচা। ধনলক্ষ্মীর সঙ্গে স্বর্ণবর্ষণকারী দুই শ্বেতহস্তীর দেখা পাওয়া গেলেও প্যাঁচা নিরুদ্দেশ।

ধনতেরস ও দীপাবলিতে ধনলক্ষ্মীর সঙ্গে পুজো পান গণেশ-কুবেরও।

দীপান্বিতা অমাবস্যায় ধনসম্পদ ও অতুল ঐশ্বর্যের কামনায় ধনের দেবীর আবাহন করে গোটা দেশ। বাঙালির কাছে লক্ষ্মী কিন্তু সেই অল্পে তুষ্ট দয়াময়ী। যিনি দুখীর ঘরে জমানো সিকি আধুলি, তিল পাটালি আর তাল ফোঁপরে সন্তুষ্ট হন। বছর বছর তাঁর পথের দিকেই তাকিয়ে থাকে বঙ্গবাসী।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy