আজ থেকে দুর্গাপুজো শুরু। শ্রাবণ থেকে পৌষ হল দেবতাদের রাত্রিকাল, দেব-দেবীদের ঘুমোনোর সময়। তাই এ সময় পুজো করতে হলে দেবতাদের জাগাতে হয় যা বোধন নামে পরিচিত। বোধন শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল জাগ্রত করা। দেবী দুর্গার মোট সাত রকম কল্পারম্ভ রয়েছে। অর্থাৎ সাতটি তিথিতে দেবীর বোধন হয়। দেবী-বোধনের প্রথম তিথিটি হল কৃষ্ণ নবমী।
আরও পড়ুন:
আশ্বিন মাসে কৃষ্ণ পক্ষের অষ্টমীর পর দিন অর্থাৎ জিতাষ্টমীর পর দিন দেবীর বোধন হয়। নাম কৃষ্ণনবম্যাদি কল্পারম্ভ। কৃষ্ণ পক্ষের নবমী থেকে শুক্ল পক্ষের নবমী পর্যন্ত পুজো চলে, তার পর দশমীতে বিসর্জন। লোকজ প্রবাদে বলা হয়, জিতার ডালায় (জীমূতবাহনের পুজোর ডালি) বোধন আসে। জিতাষ্টমীই যেন দুর্গাপুজো নিয়ে আসে।
মল্ল রাজাদের হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন দুর্গা পুজো শুরু হয় এই তিথিতে। এ বছর ১,০২৯ বছরে পা দিল মল্লরাজাদের কুলদেবী মৃন্ময়ীর পুজো। কৃষ্ণ নবমীতে মুর্ছা পাহাড় থেকে কামান দেগে পুজোর অনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়। ঘটা করে মৃন্ময়ী মন্দিরে নিয়ে আসা হয় ‘বড় ঠাকরুণ’-কে। আদতে বড় ঠাকরুণ মহাকালীর পট। মাধব সায়রের ঘাটে হাতে লেখা রাজপরিবারের নিজস্ব, প্রাচীন বলিনারায়ণী পুঁথি পড়ে বিশেষ পুজো করেন রাজ পুরোহিতেরা। স্নান পর্ব সারেন। তার পর রাজ পুরোহিতেরা শোভাযাত্রা করে পটটি নিয়ে আসেন মৃন্ময়ী মন্দিরে। বড় ঠাকরুণকে মন্দিরে প্রবেশ করানোর সময় তিন বার গর্জে ওঠে কামান। মন্দির চত্বরে আরও এক বার পুজো করে বড় ঠাকরুণকে মূল মন্দিরে প্রবেশ করানো হয়।
আরও পড়ুন:
শোভাবাজার রাজবাড়ির ঠাকুরদালানে কৃষ্ণ নবমীতে রীতি মেনে চণ্ডী মণ্ডপ স্থাপন করা হয়। কৃষ্ণানবম্যাদি কল্পারম্ভ ও বোধনের পুজো আরম্ভ হয়। বোধনের ঘট স্থাপন করা হয়। আজ থেকে রাজবাড়ির পুজোও শুরু হয়ে গেল। ট্যাংরার শীল লেনের দাস বাড়িতে, বীরভূমের মল্লারপুরের দক্ষিণগ্রামের বাবুপাড়ার রায়বাড়ির দুর্গাপুজোয় কৃষ্ণনবমী তিথিতে দেবীর বোধন হয়।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।