প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

মহালয়ার সঙ্গে নিবিড় যোগ রয়েছে মহাভারতের! জানেন মৃত্যুর পরে কর্ণ কেন তর্পণ করতে বাধ্য হন?

কর্ণ পূণ্য যা করেছেন, তা ভীষণ রকমের বস্তুতাত্ত্বিক। অর্থাৎ তিনি গরিবকে অর্থ দিয়েছেন। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে গয়না দিয়েছেন।

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:৪৬
প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

পুনর্জন্ম এবং কৃতকর্মের হিসাবনিকাশ কালের জন্য স্বর্গের দরজায় অবস্থান করছেন কর্ণ। সূক্ষ্ম শরীর হলেও এই সময়ে প্রায় জাগতিক নিয়মেই ক্ষুধা-তৃষ্ণা পায়। এ দিকে তাঁকে দেওয়া হল স্বর্ণ, মুক্তা, মুদ্রা! এ সব তো আর খাওয়া যায় না।

এক দিন কাতর হয়ে ধর্মরাজের কাছে প্রার্থনা করলেন তিনি। আমার অপরাধের সাজা দিন, কিন্তু এমন করে ক্ষুধায়, তৃষ্ণায় দগ্ধ করবেন না।

ধর্মরাজ কর্ণকে তার অবস্থান দর্শান। তিনি এতকাল দানধ্যান করে এসেছেন। আপাতত সেই দানধ্যানের পূণ্যই তিনি ভোগ করছেন। এর পরে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণকালে নীরব থাকা, চক্রব্যূহের মধ্যে নিরস্ত্র অভিমন্যুকে বধ প্রভৃতি পাপের হিসাব হবে।

তবে কর্ণ পূণ্য যা করেছেন, তা ভীষণ রকমের বস্তুতাত্ত্বিক। অর্থাৎ, তিনি গরিবকে অর্থ দিয়েছেন, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে গহনা দিয়েছেন, কাউকে জমি দিয়েছেন। কিন্তু নিজের পিতৃপুরুষকে কখনওই অন্ন-জল দান করেননি। তাই তিনিও অন্ন-জল পাচ্ছেন না।

তর্পণ হল জল অর্পণ। ঊর্ধ্বতন পুরুষ জল না পেলে মৃত্যুর পরে তাঁদের অধঃস্তন পুরুষ কী ভাবে জল পেতে পারে?

অসহায় কর্ণ ধর্মরাজকে বলেন, তিনি তো জানেন না তাঁর পিতৃপুরুষ কারা? তা হলে কী ভাবে অন্ন-জল দান করবেন? ধর্মরাজ অনড় থাকেন। তাঁর কাজ সমস্ত জাগতিক হিসাব তুলাদণ্ডে বিচার করা।

কিন্তু কর্ণ এ ভাবে থাকেন কী ভাবে? সমস্ত পাপ-পুণ্যের বিচার হয়ে তার পরে তাঁর স্বর্গারোহণ এবং পুনর্জন্ম। কর্ণ প্রতিদিন ধর্মরাজের কাছে প্রার্থনা করেন। অগত্যা ধর্মরাজ শর্ত দেন, পিতৃপক্ষ অর্থাৎ ভাদ্র মাসের পূর্ণিমার পরদিন থেকে আশ্বিনের অমাবস্যা পর্যন্ত ১৫ দিন মর্ত্যলোকে সূক্ষ দেহে অবস্থান করে শুদ্ধাচারে তাঁকে প্রতিদিন অন্ন, তিল এবং জল দান করতে হবে। পিতৃপুরুষ তুষ্ট হলে তবেই তিনি পুনরায় আহার্য পাবেন। এবং ফিরে এসে তাঁর বাকি পাপের বিচার হবে।

কর্ণ সম্মত হলেন। মর্ত্যলোকে ফিরে এসে তিনি তর্পণ ও অন্ন-জল দান করলেন। তার পরে ফিরে গেলেন পুনরায়। স্বর্গলোকের পূর্বেই পিতৃলোকের দুয়ার। তাঁরা তুষ্ট হলে তবেই এগিয়ে যাওয়া। বুঝতেই পারছেন, সেই সময়টা এই মহালয়া তর্পণ কাল।

নিয়ম মতো, কেবলমাত্র মহালয়ার দিনটি তর্পণের দিন নয়। পূর্ণ আচার এবং নিষ্ঠায় তর্পণ করতে হলে এই ১৫টি দিন ধরেই তর্পণ করতে হয়। তিল, জল, অন্ন, পিণ্ড বা কাঁচা পিণ্ড সহযোগে পিতৃপুরুষকে তুষ্ট করার চেষ্টা করা হয়।

এই তর্পণের কথা আলোচনা করতে গেলে মহাভারতের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের কথা মনে পড়ে— ভীষ্ম তর্পণ। সকলেই জানেন, ভীষ্মের শরশয্যা হয়েছিল। মৃত্যুকালে জল না পেয়ে তিনি স্থুল দেহ ত্যাগ করতে পারছেন না। এ দিকে কারও হাতে তিনি জল খাবেন না। শেষমেশ অর্জুন ভূমিতে শরনিক্ষেপ করেন এবং মাতৃদুগ্ধসম গঙ্গাবারি নির্গত হয়ে তাঁর মুখে পড়ে। ভীষ্ম যেহেতু গঙ্গাপুত্র, তাই গঙ্গাজল তাঁর কাছে মাতৃদুগ্ধসম। সেই থেকে গঙ্গাজল অর্থাৎ কোনও প্রবাহিণীর জলেই তর্পণের নিয়ম চিরায়ত হল। এবং এ ভাবে অর্জুনও তাঁর ঊর্ধতন পুরুষ ভীষ্মের প্রতি তাঁর তর্পণকার্য সমাধা করেছিলেন।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Mahalaya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy