আজ কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। এ দিন বাঙালির ঘরে ঘরে ধনদেবীর আরাধনা করা হবে। এই পুজোয় নৈবেদ্যের থালা হরেক রকম ফল, মিষ্টি, নাড়ু, মোয়া প্রভৃতিতে ভরে ওঠে। এই বিপুল আয়োজনের মধ্যে একটি পদ প্রায় আবশ্যিক — তা হল ভোগের খিচুড়ি! অনেকেই মনে করেন, লক্ষ্মীপুজোয় খিচুড়ি ভোগ ছাড়া যেন আরাধনা সম্পূর্ণ হয় না। কিন্তু কেন এই খিচুড়ি ভোগ এতটাই 'আবশ্যিক' বলে মনে করা হয়? এর নেপথ্যে কী কারণ রয়েছে? আসুন, সেই প্রাচীন ঐতিহ্য ও পৌরাণিক কাহিনি জানার চেষ্টা করা যাক।
ভোগের খিচুড়ি কেন আবশ্যক?
কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর ভোগে খিচুড়ি দেওয়া একটি সুপ্রাচীন রীতি। এই রেওয়াজ বাংলার ঘরে ঘরে প্রচলিত। যদিও ভোগের সামগ্রী অঞ্চল ভেদে সামান্য ভিন্ন হতে পারে। যেমন - কোথাও ইলিশ মাছের ভোগ দেওয়া হয়। আবার, কোথাও সম্পূর্ণ নিরামিষ রান্না করা হয়। এই খিচুড়ি শুধু মাত্র একটি সাধারণ রান্না বা পদ নয়। এর সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর!
প্রতীকী চিত্র।
ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের প্রতীক: লক্ষ্মী হলেন ধন, শস্য ও সমৃদ্ধির দেবী। খিচুড়ি মূলত চাল ও ডাল-এর মিশ্রণ দিয়ে তৈরি হয়। চাল হল শস্যের প্রতীক, যা জীবনের মূল ভিত্তি। ডাল ও সবজি যুক্ত এই একান্নবর্তী ভোগ প্রাচুর্য ও ফসল-এর আগমনকে নির্দেশ করে। এটি দেবী লক্ষ্মীকে সন্তুষ্ট করে এবং গৃহস্থের ঘরে ধন-সম্পদ ও ফসলের ভরা থাকার প্রার্থনা বহন করে।
সারল্য ও সাত্ত্বিকতা: লক্ষ্মীপুজোর ভোগ সাধারণত সাত্ত্বিক হয়। অর্থাৎ, তাতে পেঁয়াজ ও রসুন ব্যবহার করা হয় না। খিচুড়ি এমনই একটি সহজ-সরল অথচ পুষ্টিকর পদ, যা পবিত্রতা ও ভক্তি-র প্রতীক হিসেবে দেবীর কাছে নিবেদন করা হয়।
একতার প্রতীক: চাল, ডাল এবং বিভিন্ন সবজির মিশ্রণে তৈরি খিচুড়ি ঐক্য ও সংহতি-র ভাবনা তুলে ধরে।
খিচুড়ি ভোগের নেপথ্যে পৌরাণিক কাহিনি:
লক্ষ্মীপুজোয় খিচুড়ি ভোগ প্রচলনের পিছনে একটি প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। যা মূলত রামায়ণের ঘটনা কেন্দ্র করে আবর্তিত।
পুরাণ মতে, দশেরা বা দশমীর দিন রাবণকে বধ করে সীতাকে নিয়ে শ্রীরামচন্দ্র যখন অযোধ্যায় ফেরেন, তখন ছিল দীপাবলির সময়। এই সময়েই সীতার চরিত্র নিয়ে অযোধ্যায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়। কথিত আছে, লক্ষ্মীপুজোর দিন সীতা যখন তাঁর সখীদের কাছে রাবণের ছবি এঁকে তাঁর সম্পর্কে কিছু কথা বলছিলেন, ঠিক সেই সময়েই রামচন্দ্র সেই ঘরে প্রবেশ করেন।
প্রজাদের মনের সন্দেহ ও কৌতূহল দূর করতে শ্রীরামচন্দ্র সেই সময় সীতাকে 'এক পাকে তৈরি খিচুড়ি' খাইয়ে মহর্ষি বাল্মিকীর আশ্রমে পাঠিয়ে দেন। এই এক পাকে তৈরি খিচুড়ি পদটি এক দিকে যেমন সীতার সারল্য বোঝায়, তেমনই এটি ছিল লক্ষ্মীর মতো শুদ্ধতা ও ধৈর্য্যর প্রতীক।
আরও পড়ুন:
সেই থেকে বিশ্বাস করা হয় যে লক্ষ্মীপুজোর ভোগে খিচুড়ি ও পায়েস রাখলে পরিবারে সমৃদ্ধি ও কল্যাণ আসে। এই ভোগ নিবেদনের মাধ্যমে ভক্তেরা যেন সেই প্রাচীন শুদ্ধতা ও ঐক্যের বার্তাই স্মরণ করেন।
তাই, শুধু রান্নার রেওয়াজ নয়। এই খিচুড়ি ভোগ আসলে প্রাচুর্য, ঐক্য ও পবিত্রতার এক সুমধুর প্রতীক। যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাংলার লক্ষ্মী আরাধনায় আবশ্যিক হয়ে উঠেছে।
‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।