সালটা ১৯৫৬। সাত দশক সেই শুরু মানকুণ্ডুর নতুনপাড়ার জগদ্ধাত্রী পুজোর। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল এতগুলো বছর। ঐতিহ্য জিইয়ে রেখে ২০২৫ সালে এই উদযাপন পা রাখল সত্তরে। এমন দীর্ঘ পথচলাই বলে দেয়, এই পুজো কেবল উৎসব নয়, এ যেন এক নিবিড় স্নেহের বন্ধন।
নতুনপাড়ার পুজো মানেই চন্দননগর-মানকুণ্ডু জগদ্ধাত্রী পরিক্রমার এক চেনা, আন্তরিক ছবি। শহর জুড়ে যখন আলোর ঝলকানি আর সাউন্ড বক্সের দাপাদাপি, নতুনপাড়া তখন হাঁটে অন্য পথে। তাদের এ বারের থিম— 'মনের মানুষ'। ভাবনার গভীরতা আর ভালবাসার ছোঁয়ায় মণ্ডপ গড়ে উঠেছে একেবারে সাধারণ টিনের পাত দিয়ে। ঝাঁ-চকচকে জাঁকজমক নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের চেনা ছাঁদ, যা মনে করায় আমাদের চারপাশের সাদামাটা মানুষগুলির বেঁচে থাকার গল্প।
ভিতরের দিকে চোখ রাখলে মন জুড়িয়ে যায়। আওয়াজের উচ্চগ্রাম নেই, আছে কেবলই কোমল এক শব্দস্রোত। সেই স্রোতে গা ভাসিয়ে আড্ডার মেজাজে বসে লোকগানের ছোট ছোট আসর। বাউল-ফকিরের সুরের টানে ভিড়ের চাপ যেন কখন শান্ত এক দর্শনের অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে, তা বোঝাই যায় না। কমিটি চাইছে, দর্শনার্থীরা যেন দেবী প্রতিমার সামনে এসে একটু দাঁড়ান, একটু দম নেন। উৎসবের উন্মাদনার মধ্যেও যেন এক টুকরো আত্মিক শান্তির খোঁজ পান এখানেই।
পুজো চলে সাধারণত অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের শুরু পর্যন্ত। ষষ্ঠী থেকে বিসর্জন পর্যন্ত মণ্ডপে থাকে মানুষের ভিড়। হাওড়া থেকে লোকাল ট্রেনে মানকুণ্ডু নেমে অথবা জিটি রোড ধরে হেঁটে যাওয়া সহজ। প্রতি বছরই এই মণ্ডপটি থাকে মানকুণ্ডু পরিক্রমার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।