'... হাট বসেছে শুক্রবারে
বক্শিগঞ্জে পদ্মাপারে।
জিনিস-পত্র জুটিয়ে এনে
গ্রামের মানুষ বেচে কেনে।'
স্কুলের সিলেবাসে পড়া এই লাইনগুলি কবিগুরুর অমর সৃষ্টি, বাঙালির নস্ট্যালজিয়া। যদিও, এর বাস্তব প্রতিরূপ আজ বড়ই ঝাপসা। কারণ, আজকাল আর হাট বসে না। এমনকী, প্রত্যন্ত গাঁ-গঞ্জেও সাপ্তাহিক হাট এখনকার দিনে অতীত। সেখানে থাবা বসিয়েছে ঝাঁ-চকচকে শপিং মল। বিশ্বায়নের এই আগ্রাসন কখনও কি আপনাকে ভাবায়? যে হাটবাজার সময়ের গতিতে হারিয়ে গিয়েছে, তাকে কি আপনার খুঁজতে ইচ্ছা করে? তা হলে এ বারের পুজোয় আপনাকে এক বার হলেও ঘুরে আসতেই হবে দমদম পার্ক সার্বজনীনের দুর্গাপুজো মণ্ডপে। ৭৪তম বর্ষে তাঁদের আয়োজনের থিম 'হারায়ে খুঁজি'!
থিম ভাবনা নিয়ে উদ্যোক্তাদের তরফে কথা বলেন সংশ্লিষ্ট পুজো কমিটির যুগ্ম সম্পাদক তথা দমদম পার্ক সার্বজনীন দুর্গাপুজো সমিতির সম্পাদক মলয় দে। তিনি জানান, তাঁদের এ বারের এই থিম মূলত শিল্পী ঋজু করের মস্তিষ্কপ্রসূত।
সংগৃহীত চিত্র।
একটা সময় ছিল, যখন স্থানীয় তথা আঞ্চলিক বাণিজ্য থেকে শুরু করে ঘরকন্নার যাবতীয় জিনিসপত্র কেনাবেচার প্রধান স্থান ছিল হাট। যে হাট সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বসত। মাছ, আনাজ থেকে শুরু করে শস্য, পোশাক, তৈজস - এমনকী গৃহপালিত পশুপাখিও এই সমস্ত হাটে বিক্রি করা হত। কিন্তু, এখন সে সবই অতীত। বস্তুত, বাংলার প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলগুলিতেও আজ আর হাট বসে না।
হারিয়ে যাওয়া সেই হাটবাজারের খোঁজই আপনি পাবেন দমদম পার্ক সার্বজনীনের এ বারের শারদ আয়োজনে। বাংলার হাট সংস্কৃতির একটি সমীক্ষানির্ভর উপস্থাপনা এ বারের পুজো মণ্ডপে করছেন তাঁদের উদ্যোক্তারা। এর জন্য গত ছ'মাস ধরে বিভিন্ন জায়গায় তথ্যতলাশ করা হয়েছে। সেই সব তথ্যই ছবির আকারে মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হচ্ছে। বাঁশ, চট, লোহার সাহায্যে গড়ে তোলা হচ্ছে মণ্ডপ। তাতে থাকছে গ্লাস পেন্টিং, ওয়াল পেন্টিং-সহ নানা ধরনের ইনস্টলেশন। যেখানে ফুটে উঠবে হারিয়ে যাওয়া হাটবাজারের ছবি।
সংগৃহীত চিত্র।
এরই পাশাপাশি সর্বক্ষণ মণ্ডপে ভেসে বেড়াবে মানানসই আবহসঙ্গীতের সুর। সঙ্গে বাংলার হাট সম্পর্কিত নানা তথ্য ভয়েস ওভারের মাধ্যমে শুনতে পাবেন দর্শনার্থীরা। এ বারের প্রতিমা নির্মাণ করছেন শিল্পী অভিষেক ভট্টাচার্য। প্রতিমা ও তার সমস্ত সাজসজ্জা তৈরি হচ্ছে মাটি দিয়ে। থাকবে রঙের ব্যবহার। উদ্যোক্তাদের আশা, তাঁদের এই প্রয়াসের মাধ্যমেই প্রত্যেক দর্শক বাংলার হারিয়ে যাওয়া হাটবাজার নতুন করে খুঁজে পাবেন!
এ ছাড়াও, এ বারের শারদোৎসবের খরচ বাঁচিয়ে মেধাবী ও দুস্থ কয়েকজন পড়ুয়ার হাতে আর্থিক সহযোগিতা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুজো কমিটি কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে, যাঁরা স্বেচ্ছায় ও নিঃস্বার্থে পথের কুকুরদের দেখভাল করেন, তাঁদের নানা ভাবে সাহায্যেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।