প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

‘মহিষাসুর’-এর সঙ্গেই সুখের সংসার ‘দুর্গা’র

সাইকেলে চলেছেন ‘মহিষাসুর’। পিছনে বসে ‘দুর্গা’। সামনে বসে লক্ষ্মী।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮ ১৭:২৮
‘মহিষাসুর’-এর সঙ্গেই সুখের সংসার ‘দুর্গা’র।ছবি: উদিত সিংহ।

‘মহিষাসুর’-এর সঙ্গেই সুখের সংসার ‘দুর্গা’র।ছবি: উদিত সিংহ।

হুগলি সীমানা ঘেঁষা মাধবডিহির কাইতি গ্রামে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন শিশির মণ্ডল। পুজোর আগে তাঁদের এক সাইকেলে যেতে দেখে অমন কথাই বলছিলেন গ্রামের মানুষ। গ্রামের ছৌ-দলের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ পালায় যে মহিষাসুরের অভিনয় করেন শিশির। আর দুর্গার ভূমিকায় থাকেন তাঁর স্ত্রী শিলা। দুর্গা-মহিষাসুরের চার হাত এক অবশ্য সহজে হয়নি। পরিজনদের আপত্তি রুখে, পুলিশের সাহায্যে ঘর বেঁধেছেন তাঁরা।

গ্রামের ছৌ-দলে ১২ জন মহিলা-সহ ৩৫ জন সদস্য রয়েছেন। প্রশিক্ষক হিসেবে রয়েছেন বিশ্বরূপ বেজ। কেউ ১০০ দিনের কাজ করেন, কেউ চালকলে ধান শুকনো করেন, আবার কেউ কলেজে পড়েন। তাঁদের দাবি, পুরুলিয়ার ছৌ-এর সঙ্গে তাঁদের ছৌ-এর কিছু ফারাক আছে। নাট্যরূপের আঙ্গিকে মহিষাসুরমর্দিনী পরিবেশন করেন তাঁরা। মহালয়ার পরিবেশ তৈরি করা হয়। পুরো সময় ধরে চলে ‘জাগো দুর্গা, জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী...’ গীত।

মহিষাসুরমর্দিনীর ‘কার্তিক’ সুদীপ্ত সাঁতরা, ‘সিংহ’ স্বদেশ মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘গোড়ায় আমাদের প্রশিক্ষণের জায়গা ছিল না। ছৌ-এর অন্যতম আকর্ষণ হল ভল্ট। সে জন্য আমরা সাইকেলে ১৩ কিলোমিটার দূরে একলক্ষ্মী গ্রামে দ্বারকেশ্বর নদীর বালির চরে অনুশীলন করতে যেতাম। দু’বছরের বেশি সময় ধরে ওই চরই ছিল আমাদের প্রশিক্ষণের একমাত্র জায়গা।’’ ২০০১ সালে বিশ্বভারতীর শিক্ষক হীরালাল চক্রবর্তীর অনুপ্রেরণায় ব্রতচারী থেকে ছৌ-এ মনোনিবেশ করেন বিশ্বরূপবাবু-সহ চার জন। তা ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের প্রান্তরে। বিশ্বরূপবাবু বলছিলেন, ‘‘প্রথম দিকে কেউ এগিয়ে আসতেন না। মহিলারা এলে পরিজন-পড়শি কটাক্ষ করতেন। এখন অবশ্য যত সদস্য আছেন, দু’তিনটি দল তৈরি করে দেওয়া যায়।’’

আরও পড়ুন: স্বামী ব্রহ্মানন্দের বাড়ির পুজোয় জাগে নিদ্রাকলস​

আরও পড়ুন: ভিড়ে চোখ টানতে ভরসা বুটিকের শাড়ি​

সাইকেল বা গরুর গাড়িতে চড়ে পালা করতে তাঁরা যান রায়নার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হুগলির আরামবাগ-গোঘাট। উত্তরবঙ্গেও গিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের ছৌ দেখেছে ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশের নানা এলাকাও। বর্ধমানে একশোতম প্রশাসনিক সভায় তাঁদের শিল্প প্রশংসা পেয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

গ্রামে একটি বাড়ির মাটির দেওয়ালে সার দিয়ে দুর্গা, কালী, সিংহ, অসুরের মুখোশ ঝুলছে। এ বছর নতুন মুখোশ পরে তাঁরা যাবেন খানাকুল, বাঁকুড়া, মেমারির বাগিলায়। অনুষ্ঠান সেরে রাতবিরেতে বাড়ি ফিরতে সমস্যা হয় না? ‘কালী’ পুতুল মণ্ডল বলেন, ‘‘তা আবার হয় না! এই তো বিশ্বকর্মা পুজোর দিন মেমারি বাসস্ট্যান্ডে অনুষ্ঠান সেরে ফিরছি, মাঝপথে কয়েকজন মদ্যপ অশালীন আচরণ শুরু করে দেয়।’’ এক বার কাটোয়ায় ছিনতাইবাজদের কবলে পড়েছিলেন বলেও জানান তাঁরা।

এ বারের প্রস্তুতি চলছে জোরদার। দুর্গা ত্রিশূল দিয়ে বধ করছেন মহিষাসুরকে। বাড়িতেও কি মাঝে-মধ্যে ‘যুদ্ধ’ বাধে? মুচকি হেসে ‘দুর্গা’ বলেন, ‘‘সেই ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়ে অসুরের প্রেমে মজেছি। পালায় অসুর, বাড়িতে শিশিরের মতো স্নিগ্ধ।’’ হা-হা করে হেসে ‘মহিষাসুর’ বলেন, ‘‘স্বর্গে ত্রিশূল দিয়ে বিঁধেছে, মর্ত্যে মুখের বুলি দিয়ে!’’

Durga Puja Celebration 2018 Durga Puja Special Durga Puja Nostalgia Kolkata Durga Puja Durga Puja Preparations
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy