দশমীর বিকেল নামলেই শোভাবাজার ছোটো রাজবাড়ির উঠোনে ভিড় জমে। ক্যালেন্ডার বলছে ২০২৫-এর দশমী শেষ, শহরে শুরু হয়ে গিয়েছে বিজয়ার চিরন্তন যাত্রা। প্রতি বছরের মতো এ বারও শোভাবাজার ছোট রাজবাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য লরি আনা হয়নি, বরং বেহারাদের কাঁধে চেপে প্রতিমা আসে বাগবাজার/ঘাটমুখী পথে। কিন্তু এ বাড়ির বিসর্জন মানে তো কেবল গঙ্গায় প্রতিমা নামিয়ে দেওয়া নয়, এ হলো আঠারো শতকের এক জমকালো আখ্যানের শেষ অধ্যায়—গঙ্গাবক্ষে দেবীর রাজকীয় বিদায়।
সিঁদুর দান, দর্পণ দর্শনের রীতি সাঙ্গ হতেই ঢাকের তালে বেরিয়ে পড়ে প্রতিমা। ভাসানের যাত্রা যেন শুধু একটা আচার নয়, ইতিহাসের পাতায় লেখা এক জীবন্ত ছবি। ১৭৫৭ সালে রাজা নবকৃষ্ণ দেবের হাত ধরে যে পুজোর শুরু, ভাগ হয়ে গেলেও ছোট রাজবাড়ির প্রথা তার পুরনো চালচিত্র ধরে রেখেছে অত্যন্ত যত্নে। অন্য বাড়ির মতো গঙ্গা তীরে বিসর্জন নয়, ছোট রাজবাড়ির প্রতিমা যাত্রা করে মাঝনদীর দিকে। দুটি নৌকার মাঝে কাঠের পাটাতনে মাকে স্থাপন করা হয়, শুরু হয় এক জলপথের লীলা। গঙ্গাবক্ষে সাতপাক ঘোরেন মা দুর্গা, সেই দৃশ্য দেখতে দশমীর দিনে ঘাটে উপচে পড়ে মানুষের ভিড়। এই সাতপাক যেন দেবী ও তাঁর ভক্তদের মধ্যে শেষ আলিঙ্গন, এর পর পাটাতন সরিয়ে নিতেই প্রতিমা জলে পড়ে।
এক সময় দশমীর দিন এই বাড়িতে সত্যিকারের নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হতো। লোকবিশ্বাস, এই পাখিই কৈলাসে মহাদেবকে উমার নিরাপদে ফিরে যাওয়ার বার্তা দেয়। কিন্তু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের কারণে এখন আর সেই পাখি ওড়ানো হয় না। তবে প্রথা থেমে থাকেনি, বরং নিয়েছে এক মন ছুঁয়ে যাওয়া নতুন রূপ। ছোট রাজবাড়ির সদস্যরা এখন নীলকণ্ঠ আঁকা প্রতীকী ফানুস ওড়ান—একটি ওড়ে রাজবাড়ির দালান থেকে, আর দ্বিতীয়টি ঠিক বিসর্জনের মুহূর্তে মাঝনদীর নৌকা থেকে, যা ভাসতে ভাসতে যেন কৈলাসের দিকেই উড়ে যায় বলেই বিশ্বাস করা হয়। নীলকণ্ঠের সেই প্রতীকী বার্তা, গঙ্গাবক্ষে নৌকায় মায়ের সাত বার প্রদক্ষিণ—সব মিলিয়ে শোভাবাজার ছোট রাজবাড়ির এই বিসর্জন কেবল একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি কলকাতার এক চলমান ইতিহাস।
‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।