দুই শতকের প্রাচীন বিশ্বাস বহাল আজও। শ্মশান ঘেরা পরিত্যক্ত গ্রামে আলোহীন পুজো শালকো কালীর।
আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ২৩:২৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১০
দীপাবলি মানেই আলোর উৎসব। শহর থেকে গ্রাম– সব জায়গাই তখন ঝলমল করে ওঠে আলোয়। কিন্তু পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের শালবনের গভীরে আছে এমন এক জায়গা, যেখানে আলোর বদলে অন্ধকারই সাক্ষী হয় ভক্তির। এই অমাবস্যাতেই সেখানে হয় শালকো কালীর পুজো— যে পুজো চলে গভীর রাত জেগে, বিদ্যুৎবিহীন পরিবেশে, শ্মশানের নীরবতায়।
০২১০
পুজোয় কোনও বৈদ্যুতিক আলো ব্যবহার করা হয় না– এটাই রীতি।
০৩১০
এই নীরব আরাধনার পিছনে লুকিয়ে আছে প্রায় ২০০ বছর আগের এক গ্রামের করুণ কাহিনি।
০৪১০
এক সময়ে এই জঙ্গলেই ছিল শালকো নামের এক গ্রাম। এই গ্রামের নামেই দেবী পরিচিত হন শালকো কালী রূপে।
০৫১০
হঠাৎই গ্রামে দেখা দেয় কলেরার মহামারি। গ্রামের বহু মানুষ মারা যান। যাঁরা বেঁচে যান, তাঁরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেলেন নতুন আশ্রয়ের সন্ধানে। এর পরে গ্রামটি জনশূন্য হয়ে পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
০৬১০
তবে যে মানুষগুলি জীবন বাঁচাতে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হলেন, তাঁরা দেবীকে ভুলতে পারেননি। শোনা যায়, দেবীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনেক চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু বেদি ছেড়ে তিনি কিছুতেই নড়তে চাননি। দেবীর এই একগুঁয়েমিই তাঁর মহিমা– তাই গ্রামবাসীরা বুঝলেন, এই স্থানই মায়ের প্রিয়।
০৭১০
আজও কালীপুজোর সময়ে সেই বিস্মৃত গ্রামের পুরনো বাসিন্দারা এবং তাঁদের উত্তরসূরিরা ফিরে আসেন জঙ্গলে।
০৮১০
চাঁদা তুলে দেবীর জন্য মন্দির গড়ার চেষ্টা হয়েছিল এক বার। কিন্তু বারবার আসা নানা বাধা-বিপত্তি তাঁদের বুঝিয়ে দেয়, দেবী সেই পঞ্চমুণ্ডীর আসন ও বেদিটি ছেড়ে অন্য কোথাও থাকতে চান না।
০৯১০
তাই এখন কেবল টিনের ছাউনি দিয়ে বেদিটিকে রক্ষা করা হয়। গভীর অমাবস্যার রাতে, এই আঁধারেই চলে শালকো কালীর পুজো।
১০১০
পুজো হয় আলোর উৎসবে অন্ধকারের ভিতরে লুকিয়ে থাকা এক অন্য আলোয়। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।