থিম পুজোর ভিড়ে আজও যে গুটিকয় পুজো মণ্ডপে সাবেক প্রতিমা দেখা যায়, বা বনেদি বাড়িগুলিতে যেখানে পুজো হয় সেখানে দেবী মূর্তির সঙ্গে আরও একটি জিনিস লক্ষ্য করা যায়। কী বলুন তো? চালচিত্র। যদিও বর্তমান সময় এর চাহিদা, জনপ্রিয়তা দুই হারাচ্ছে, তবুও একটা সময় এর রমরমা ছিল। কিন্তু আদতে কী এই চালচিত্র?
চালচিত্রের একটি সুন্দর ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘উৎসব’ ছবিতে। সেখানেই মৃৎশিল্পীর চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতাকে বলতে শোনা যায়, “বাড়ির চাল থেকে নাম হল চালচিত্তির... বাড়ির চাল বলো, মন্দিরের চাল বলো, ওই একটা ছাদ আর কী! তার তলায় মা দুগ্গা চার ছেলেমেয়ে নিয়ে বাস করেন।”
চালচিত্র আদতে দুর্গা প্রতিমার উপর বা পিছন দিকে যে অর্ধবৃত্তাকার পটভূমি দেখা যায় সেটি। এখানে মূলত নানা দেবী, দেবতার কাহিনি আঁকা থাকে। বাঁশ এবং খবরের কাগজ ব্যবহার করে বানানো হয় চালচিত্র। তার পর আঁকা হয়। ফুটে ওঠে শিব, পার্বতী, কালী, চণ্ডী, দশমহাবিদ্যা সহ নানা দেব দেবীর ছবি।
চালচিত্র মূলত চার রকমের হয়, মার্কিনি চাল, বাংলা চাল, মঠচৌড়ি চাল এবং টানাচৌড়ি চাল। এই চারটির মধ্যে মার্কিনি চাল সবথেকে বেশি জনপ্রিয়। বাগবাজার সর্বজনীনে এই মার্কিনি চাল দেখা যায়। এখানে মূলত দেবী প্রতিমার দুই দিকে দুটো থাম থাকে, আর দুই পাশ থেকে অর্ধচন্দ্রাকার চাল থাকে। বাংলা চালের সঙ্গে এর ফারাক হল, বাংলা চালে এই থাম দুটো থাকে না।
অন্যদিকে টানাচৌড়ি চালে থাকে কার্নিশ মতো একটি আকার। সঙ্গে থাকে তিনটি চূড়া। মঠচৌড়ি চালে প্রতিমার মাথায় অর্ধেক চাঁদের মতো তিনটি খোপ থাকে। মনে হয় যেন ঢেউ খেলে গিয়েছে দেবীর মাথায়।
বাংলায় মূলত দুই ধরনের প্রতিমা দেখা যায় বিষ্ণুপুর রীতির প্রতিমা এবং কংসনারায়ণ রীতির প্রতিমা। এর মধ্যে কংসনারায়ণ রীতির প্রতিমার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এই চালচিত্র। তবে বর্তমানে এর চাহিদা ব্যাপক হারে কমেছে।
কলকাতার বুকে লিবার্টি সিনেমা হল এবং গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশনের মাঝে যে আদিত্য মল্লিক লেন রয়েছে সেখানেই নির্মাণ করা হয় চালচিত্র। বলা যেতে পারে এটিই চালচিত্রের পীঠস্থান শহরের বুকে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।