প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

বিষাদের রেশ নয়, বিজয়ার পরই দুর্গাপুজোয় মাতে উত্তরবঙ্গের এই অঞ্চল! কোন রূপে পূজিত হন দেবী?

মহিষাসুর বধের পর ক্লান্ত হয়ে দেবী দুর্গা নাকি আশ্রয় নিয়েছিলেন রাজবংশী কৃষকের বাড়িতে!

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:২২
সংগৃহীত চিত্র।

সংগৃহীত চিত্র।

উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার-সহ রাজবংশী অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় দুর্গাপুজো শেষ হওয়ার পরও আনন্দের আবহ থেকে যায়। কারণ, এই সমস্ত এলাকায় বিজয় দশমীর ঠিক পরই শুরু হয় ভান্ডানি পুজো। যেখানে দেবী দুর্গা পূজিতা হন এক ভিন্ন রূপে! এই আঞ্চলিক উৎসবটি মূলত রাজবংশী কৃষকদের দ্বারা পালিত হয় এবং এটি তাঁদের কৃষি ও সমৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।

ভান্ডানি দেবীর স্বরূপ

ভান্ডানি দেবীর রূপে বেশ কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যা তাঁকে মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গা থেকে আলাদা করে তুলেছে। যেমন -

দ্বিভুজা ও ব্যাঘ্রবাহিনী: দেবী ভান্ডানি সাধারণত দ্বিভুজা (দু'টি হাতবিশিষ্ট) এবং তাঁর বাহন ব্যাঘ্র (বাঘ), সিংহ নয়। যদিও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু জায়গায় দেবীর রূপে পরিবর্তন এসেছে। যেমন - কোথাও তিনি চতুর্ভুজা হয়েছেন বা তাঁর বাহন সিংহ হয়েছে। এই দেবী সাধারণত রক্তিম বর্ণা এবং পশ্চিম মুখে অধিষ্ঠান করেন।

পরিবার-সহ উপাসনা: দেবী তাঁর দুই পাশে লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক ও সরস্বতী-সহ সপরিবার পূজিতা হন।

মহিষাসুর অনুপস্থিত: এই পুজোয় মহিষাসুর থাকে না। কারণ, দেবী এখানে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে পূজিতা হন না।

পুজোর সময়কাল ও উদ্দেশ্য

সময়কাল: শারদীয়া দুর্গাপুজোর দশমীর পর - অর্থাৎ - একাদশী তিথি থেকে এই পুজোর সূচনা হয়। এটি কোথাও এক দিনের পুজো, আবার কোথাও লক্ষ্মীপুজো বা লক্ষ্মী পূর্ণিমা পর্যন্ত চলে। রাজবংশী সমাজের পুরোহিত, যিনি 'দেউসি' নামে পরিচিত, তিনি একাদশীর ভোরে নৈবেদ্য সাজিয়ে পুজো শুরু করেন।

পুজোর উদ্দেশ্য: ভান্ডানি দেবীকে মূলত শস্য ও প্রাচুর্যের দেবী হিসাবে গণ্য করা হয়। কৃষকরা ভাল ফসল, শস্যের প্রাচুর্য, এবং পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধির আশায় এই পুজো করে থাকেন। ভান্ডানি শব্দটি 'ভাণ্ডার' (শস্যভাণ্ডার) থেকে এসেছে বলে মনে করা হয়। যা এই কৃষি-নির্ভর পুজোর উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অনেক গবেষকের মতে, ভান্ডানি প্রকৃত অর্থেই কৃষির দেবী।

ভান্ডানি পুজোর প্রচলন - লোককথা বনাম গবেষকদের মতামত:

ভান্ডানি পুজোর প্রচলন নিয়ে রাজবংশী সমাজে একাধিক লোককথা প্রচলিত আছে। যেমন-

কৈলাসে ফেরার পথে বিশ্রাম: একটি জনপ্রিয় জনশ্রুতি অনুযায়ী - দশমীর দিন মহিষাসুরকে বধ করে দেবী দুর্গা যখন কৈলাসে ফিরছিলেন, তখন তিনি উত্তরবঙ্গের বনাঞ্চল দিয়ে যেতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তখন রাজবংশী কৃষকরা গ্রাম্য বধূ বেশে থাকা দুর্গাকে নিজেদের পর্ণকুটিরে আশ্রয় দেন এবং তাঁর যত্ন করেন। গ্রামবাসীর এই আথিথেয়তায় তুষ্ট হয়ে দেবী তাঁদের শস্যের ভাণ্ডার পূর্ণ থাকার বর দেন। সেই থেকেই উমা ভান্ডানি দেবী রূপে পূজিতা হয়ে আসছেন বলে বিশ্বাস করা হয়।

বনদুর্গা ও বন্যপ্রাণী থেকে রক্ষা: ভান্ডানি দেবীর অপর নাম 'বনদুর্গা'। এক দল গবেষকের মতে, ডুয়ার্সের বনাঞ্চলে এক সময় ভালুকের (যা স্থানীয় কামতাপুরী বা রাজবংশী ভাষায় 'ভান্ডি' নামে পরিচিত) উপদ্রব খুব বেশি ছিল। এই হিংস্র প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা পেতে মানুষ যে দেবীর আরাধনা শুরু করে, তা-ই পরে ভান্ডানি নামে পরিচিতি পায়। এই মত অনুযায়ী, ভান্ডানি শব্দটি 'ভান্ডি' (ভালুক) শব্দ থেকে এসেছে।

শস্যের দেবী: গবেষকদেরই একাংশের মতে, ভান্ডানি আদতে মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত কৃষিভিত্তিক সমাজের লোকদেবী। যিনি শস্য ও প্রাচুর্যের প্রতীক। ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির প্রভাবে পরে তাঁকে দুর্গা বা বনদুর্গার অন্য রূপ হিসাবে কল্পনা করা হয়। প্রায় ২০০ বছর আগে এই দেবীর কোনও মূর্তি ছিল না। পরে মূর্তির প্রচলন হয়।

উৎসব ও ঐতিহ্য: ভাণ্ডানি পুজো কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে। জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি ব্লকের বার্নিশ গ্রাম এবং ধূপগুড়ি ব্লকের ভান্ডানি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এই পুজো অত্যন্ত জনপ্রিয়। শতবর্ষের বেশি সময় ধরে এই পুজো হয়ে আসছে। এই উৎসব উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যা একই সঙ্গে দেবীর প্রতি ভক্তি এবং শস্য-সম্পদের প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।

‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy