স্মার্টফোন আজকালকার দিনে খুব জরুরি একটি গ্যাজেট হলেও অধিকাংশ স্মার্টফোনের আয়ু খুব বেশি হয় না। ফলে কয়েক বছর অন্তর নতুন ফোন কিনতে হয়। নতুন স্মার্টফোন কেনার সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা উচিত। সঠিক ফোন নির্বাচন করতে পারলে তাতে আখেরে আপনারই লাভ। স্মার্টফোন কেনার সময় কোন কোন বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে? আসুন জেনে নিই -
১. বাজেট
নতুন ফোন কেনার আগে আপনার বাজেট নির্ধারণ করা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। স্মার্টফোন বিভিন্ন দামে পাওয়া যায়। তাই আগে থেকেই একটি নির্দিষ্ট বাজেট ঠিক করে নিলে আপনার পছন্দের তালিকা ছোট করা সহজ হবে। মনে রাখবেন, সবচেয়ে দামি ফোনটিই সবসময় আপনার জন্য সেরা নাও হতে পারে।
২. অপারেটিং সিস্টেম
স্মার্টফোনের দু'টি প্রধান অপারেটিং সিস্টেম হল - অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস।
অ্যান্ড্রয়েড:
এটি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফোনে পাওয়া যায় (যেমন - স্যামসাং, ওয়ানপ্লাস, গুগল পিক্সেল)। অ্যান্ড্রয়েড অনেক বেশি কাস্টমাইজযোগ্য এবং এতে বিভিন্ন দামে অনেক বিকল্প পাওয়া যায়।
আইওএস:
এটি শুধুমাত্র অ্যাপল সংস্থার আইফোনে ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যবহার করা সহজ, খুবই সুরক্ষিত এবং অ্যাপল ইকোসিস্টেমের অন্যান্য ডিভাইসের সঙ্গে এর সংযোগ অনেক ভালো।
৩. প্রসেসর এবং পারফরম্যান্স
ফোনের গতি এবং পারফরম্যান্স নির্ভর করে প্রসেসর-এর ওপর। প্রসেসর যত শক্তিশালী হবে, ফোন তত দ্রুত কাজ করবে এবং মাল্টিটাস্কিং তত মসৃণ হবে।
অ্যান্ড্রয়েড ফোনের জন্য:
কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন, মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি, স্যামসাং এক্সিনস এবং গুগল টেনসর-এর মতো প্রসেসরগুলি ভালো পারফরম্যান্স দেয়।
আইফোনের জন্য:
অ্যাপলের এ-সিরিজ চিপগুলি (যেমন - এ-১৫, এ-১৬, এ-১৭ বায়োনিক) খুবই শক্তিশালী প্রসেসর।
৪. র্যাম এবং স্টোরেজ
র্যাম:
র্যাম যত বেশি হবে, ফোন তত দ্রুত অ্যাপ চালাতে এবং মাল্টিটাস্কিং করতে পারবে। সাধারণত ৬ জিবি থেকে ৮ জিবি র্যামের ফোনগুলি মসৃণ পারফরম্যান্স দেয়।
স্টোরেজ:
আপনি যদি অনেক ছবি, ভিডিয়ো, অ্যাপ বা ফাইল সংরক্ষণ করতে চান, তাহলে বেশি স্টোরেজ প্রয়োজন হবে। ১২৮ জিবি বা ২৫৬ জিবি স্টোরেজ এখনকার জন্য যথেষ্ট। কিছু ফোনে মাইক্রোএসডি কার্ড ব্যবহার করে স্টোরেজ বাড়ানোর ব্যবস্থা থাকে - যা একটি বাড়তি সুবিধা।
৫. ক্যামেরা
ক্যামেরা এখন স্মার্টফোনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এক্ষেত্রে যেগুলি খেয়াল রাখা দরকার, তা হল -
মেগাপিক্সেল:
শুধু মেগাপিক্সেল দেখে ক্যামেরা বিচার করা ঠিক নয়। মেগাপিক্সেলের পাশাপাশি অ্যাপারচার, সেন্সর সাইজ এবং ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যার-এর মানও দেখতে হবে।
মাল্টি-ক্যামেরা সিস্টেম:
আজকাল প্রায় সব ফোনেই একাধিক ক্যামেরা থাকে (যেমন - ওয়াইড, আল্ট্রা-ওয়াইড, টেলিফটো)। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ক্যামেরা সেন্সরগুলি দেখে নেওয়া ভালো।
৬. ডিসপ্লে
স্ক্রিন টেকনোলজি:
এএমওএলইডি বা ওএলইডি ডিসপ্লেগুলি সাধারণত এলসিডি ডিসপ্লের তুলনায় ভালো হয়। এগুলি উজ্জ্বল রং এবং গভীর কালো রং দেখাতে পারে।
রিফ্রেশ রেট:
৬০ হার্টজ থেকে ৯০ হার্টজ বা ১২০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট পর্যন্ত ডিসপ্লে পাওয়া যায়। ১২০ হার্টজ ডিসপ্লে স্ক্রল করা এবং গেম খেলার অভিজ্ঞতাকে অনেক মসৃণ করে তোলে।
৭. ব্যাটারি লাইফ
যদি আপনার দীর্ঘ সময় ঘরে ফোন ব্যবহার করার দরকার থাকে, তাহলে একটি বড় ব্যাটারি থাকা জরুরি। ৫০০০ mAh বা তার বেশি ব্যাটারির ফোনগুলি সাধারণত একদিনের বেশি চার্জ ধরে রাখতে পারে। এছাড়াও, ফাস্ট চার্জিং সুবিধা থাকলে তা চার্জ দেওয়ার সময়কে অনেক কমিয়ে দেয়।
৮. কানেক্টিভিটি এবং অন্যান্য ফিচার
৫জি:
যদি আপনার এলাকায় ৫জি পরিষেবা থাকে বা ভবিষ্যতে এই পরিষেবা আপনি ব্যবহার করতে চান, তাহলে ৫জি সাপোর্ট করে, এমন ফোন কেনাই ভালো।
এনএফসি:
এটি মোবাইল পেমেন্ট বা অন্যান্য ডিভাইসের সঙ্গে দ্রুত সংযোগের জন্য দরকারি।
জল-প্রতিরোধী রেটিং:
আইপি৬৭ বা আইপি৬৮ রেটিং থাকলে ফোনটি জল এবং ধুলো থেকে সুরক্ষিত থাকে।
হেডফোন জ্যাক:
অনেক নতুন ফোনে ৩.৫ মিমি হেডফোন জ্যাক থাকে না। যদি আপনার এটি প্রয়োজন হয়, তবে কেনার আগে দেখে নিন।
আপনার জন্য কিছু বাড়তি টিপস:
রিভিউ দেখুন:
ফোন কেনার আগে ইন্টারনেটে সেই মডেলের রিভিউ এবং ব্যবহারকারীদের মতামত দেখে নিন।
নিজের প্রয়োজন বুঝুন:
আপনি যদি প্রধানত গেম খেলতে বা ছবি তুলতে ফোনটি ব্যবহার করতে চান, তাহলে সেই অনুযায়ী শক্তিশালী প্রসেসর বা ভালো ক্যামেরার ফোন বেছে নিন।
বিক্রি পরবর্তী পরিষেবা:
যে ব্র্যান্ডের ফোন কিনছেন, তাদের সার্ভিস সেন্টার আপনার আশেপাশে আছে কিনা বা তাদের পরিষেবা কেমন, তা জেনে নেওয়া ভালো।
এই বিষয়গুলি মাথায় রাখলে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী একটি ভালো স্মার্টফোন কিনতে পারবেন।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।