পুজোয় যতই 'সিটি অব জয়' আলোর মালায় সেজে, রূপ বদলে মোহময়ী উঠুক না কেন, অনেকেরই এই সময় 'মন বসে না শহরে, ইট পাথরের নগরে' দশা হয়। তাই বাক্স, প্যাঁটরা গুছিয়ে পড়েন পরিবার সমেত, বা বন্ধুদের সঙ্গে। অথবা একাই। আপনিও কি সেই দলেই পড়েন? পুজোর ছুটিকে পুরোদমে উপভোগ করতে বেড়াতে যাচ্ছেন, তাও ঘাটশিলায়? জেনে নিন কীভাবে ট্রিপ সাজাবেন।
কী কী ঘুরে দেখবেন?
রাত মোহনা: ঘাটশিলা এলে, বিশেষ করে এই সময় রাত মোহনা না দেখলে দারুণ মিস করবেন। নাম রাত মোহনা হলেও এই জায়গার সূর্যাস্ত দেখার মতো, অবর্ণনীয় সুন্দর। শান্ত সুবর্ণরেখার পাশে বসেই অনেকটা সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়।
ধারাগিরি জলপ্রপাত: এই জলপ্রপাতে আসতে কিছুটা ট্রেক করতে হয়। মেঠো পথ পেরিয়ে এই ছোট্ট ঝর্নার মনোরম দৃশ্য মন ভাল করতে বাধ্য। সঙ্গে আশেপাশের জঙ্গলের দৃশ্য, নানা রকম পাখি, তাদের ডাক সবটা মিলিয়েই প্রকৃতির খুব কাছাকাছি যেন পৌঁছিয়ে যাওয়া যায়।
বুরুডি লেক: ধারাগিরি যাওয়ার পথেই এই লেক পড়ে। পথের দুধারের দৃশ্য চোখ জুড়াতে বাধ্য। বিশেষ করে এক লেকের কাছে এসে তার নীল বিপুল শান্ত জলরাশি যেন আদতেই শহুরে জীবনে অভ্যস্ত চোখের জন্য আরাম।
নারওয়া জঙ্গল এবং নদী: রূপান্তরিত শিলার মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে এই নদী। বন্ধুদের গ্রুপ, এমনকি পরিবারের সঙ্গে গেলেও এখানে চাইলে মন খুলে স্নান করতে পারেন। যদিও পোশাক বদলানোর ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হলেও, নারওয়া নদীকে দেখে নিজেকে আটকে রাখা বড়ই মুশকিলের কাজ! নদীর দুই পাশে রয়েছে ঘন শাল, পিয়ালের জঙ্গল। সেই জঙ্গুলে রাস্তার অপরূপ শোভা যেন সমস্ত ক্লান্তি দূর করে দেয়।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি: ঘাটশিলা আসবেন আর গৌরী কুঞ্জ ঘুরে যাবেন না তাই হয় কখনও? ফলে একবারের জন্য হলেও বাংলার এই বিশিষ্ট লেখকের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে ঘুরে আসা চাই-ই চাই।
আরও পড়ুন:
কী ভাবে ঘুরবেন, কী কী করবেন?
ঘাটশিলা বেড়ানোর জন্য দুটো দিনই যথেষ্ট। প্রথম দিন সকাল সকাল ইস্পাত বা জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে উঠে পড়ুন। তাহলেই মোটামুটি ৯-৯.৩০ টার মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছিয়ে যাবেন। এছাড়াও একাধিক ট্রেন রয়েছে ঘাটশিলা আসার জন্য। আর যদি নিজেদের গাড়ি বা বাইক থাকে তবে তো কথাই নেই! গাড়ি করেই রওনা দিয়ে দিন, আসার পথে পথে দুইধারের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে, আড্ডা, গান-গল্পের মাঝেই দেখবেন গন্তব্যে পৌঁছিয়ে গিয়েছেন। পথে দেখে নিতে পারবেন লোধাশুলির জঙ্গল।
দুপুর দুপুর হোটেলে চেক-ইন করে দুপুরের ভূরিভোজ সেরে বিশ্রাম নিতে পারেন নইলে আশেপাশের কিছু জায়গা ঘুরে নিতে পারেন যেমন রঙ্কিনী মন্দির, ফুলডুংরি। থাকার জন্য বিভিন্ন দামের হোটেল পেয়ে যাবেন। এসি, নন এসি সমস্ত ধরনের থাকার জায়গাই রয়েছে। দাম মোটামুটি ১০০০ থেকে শুরু।
পরের দিন কতজন টিমে আছেন সেই অনুযায়ী গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। ঘুরে আসুন বুরুডি লেক, ধারাগিরি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি। পথে কোথাও দুপুরের খাবার সেরে বেরিয়ে পড়ুন আরেকদিকে। চলে যান রাত মোহনা, নারওয়া জঙ্গল, নারওয়া নদী, গালুডি ব্যারেজ। পরদিন ব্রেকফাস্ট সেরে গাড়ি নিয়ে বা ট্রেনের সময় অনুযায়ী ব্যাগ নিয়ে প্রাণের শহরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ুন পুজোর ছোট্ট ছুটি কাটিয়ে। এই সফর প্ল্যান করলে দুদিন যেমন পুজোর হইচই উপভোগ করতে পারবেন, তেমন ঘোরাও হবে।
এখানে এলে সাঁওতালি নাচ আর পাতায় পোড়ানো মাংস চেখে দেখতে কিন্তু একদম ভুলবেন না! তবে আর কী? হাতে তো মাত্র কয়েকটা দিন, চটপট প্ল্যান সেরে ফেলুন!
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।