১. অরু ভ্যালি - অনন্তনাগ জেলার এক বেশ জনপ্রিয় অথচ ভিড়ভাট্টাহীন উপত্যকা হল অরু। পহেলগাঁও থেকে অরু-র দূরত্ব মাত্র ১২ কিলোমিটার। আবার অরু থেকে লিদ্দর নদীর দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। বরফে ঢাকা পর্বত শৃঙ্গ, পাহাড়ি ঝরনা, হ্রদ আর সবুজ প্রকৃতির ভক্ত হলে এখানে ঘুরে আসুন। এখানে নানা ধরনের ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। কোলহোই হিমবাহ এবং তরসর হ্রদ ট্রেকিংয়ের বেস ক্যাম্প হয় এখানেই।
এ ছাড়াও লিদ্দরওয়াত, বিশনসর-কিশনসর এবং কঙ্গনের বেস ক্যাম্পও এখানে হয়ে থাকে। কোলহোই কাশ্মীর উপত্যকার বৃহত্তম হিমবাহ। কাশ্মীরের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট কোলাহোইয়ের কাছেই অবস্থিত। এর কাছাকাছি হোটেল, রেস্তরাঁ সব পেয়ে যাবেন। অরু উপত্যকা অরু নদীর তীরে অবস্থিত। নদীর নামানুসারেই এই স্থানের নাম অরু উপত্যকা। গোটা জায়গাটাই বেশ নিরিবিলি।
২. গুরেজ - সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় আড়াই হাজার মিটার উঁচুতে অবস্থিত কাশ্মীরের আরেক অপূর্ব সুন্দর গ্রাম গুরেজ। বন্দিপুর থেকে গুরেজের দূরত্ব প্রায় ৮৬ কিলোমিটার এবং রাজধানী শ্রীনগর থেকে দূরত্ব প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। গোটা গ্রাম বরফে মোড়া পাহাড় দিয়ে ঘেরা। গ্রামের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়েছে কৃষ্ণগঙ্গা নদী। গ্রামের জঙ্গলে স্নো লেপার্ড এবং বাদামি ভাল্লুকের দেখা মেলে। কাশ্মীরের অন্যতম সেরা পর্যটনস্থল হলেও ভিড় বড় একটা হয় না। নভেম্বর থেকে মে মাস এখানে প্রচুর তুষারপাত হয়। রাজদান পাস বরফে পুরোপুরি ঢাকা পড়ে যায়।
ফলে ওই সময় গ্রামে পৌঁছনো খুব মুশকিল। মে মাসের পর থেকে রাস্তাঘাট স্বাভাবিক হতে শুরু করে। গুরেজ পর্যটনকে আকর্ষণীয় করে তুলতে কাশ্মীর পর্যটন দফতরের তরফে গুরেজ হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু হয়েছে। অপূর্ব সুন্দর এই গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন, তেমনই সুন্দর সেখানকার সবুজ অরণ্য। কৃষ্ণগঙ্গা নদীতে মাছ ধরার আনন্দই আলাদা। আলু এবং ভুট্টার ক্ষেতগুলিও এখানে অপূর্ব সুন্দর। এখানকার হাব্বা খাতুন শৃঙ্গের সৌন্দর্য দারুণ জনপ্রিয়।
৩. লোলাব ভ্যালি - কাশ্মীরের আরেক অপূর্ব সুন্দর অপরিচিত উপত্যকা হল লোলাব। এখানকার আপেল, আখরোট, পিচ, চেরি এবং অর্কিডের বাগান দেখে মন ফুরফুরে হয়ে যায়। এ ছাড়াও পাহাড়ি হ্রদ, প্রস্রবণ, ধান খেতের দৃশ্যও অসাধারণ। লোলাব গড়ে উঠেছে কালারুস, পোতনাই এবং ব্রুনাই নামের তিনটে অচেনা উপত্যকার সংমিশ্রণে। বন্দিপুর থেকে লোলাব উপত্যকাকে পৃথক করেছে অপূর্ব সুন্দর নাগমার্গ তৃণভূমি। এখানকার লাহওয়াই নদীর তীর একটি আকর্ষণীয় স্থান।
কথিত, লোলাব থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে অবস্থিত লালপুর গ্রামে মহর্ষি কাশ্যপ বাস করতেন। ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও তীর্থক্ষেত্র হিসেবেও এই উপত্যকার মূল্য অনেক। গোটা গ্রামটা খুব নিরিবিলি। লোলাব উপত্যকার লাভনাগ এবং গৌরী প্রস্রবণের সৌন্দর্য অসাধারণ। এর জল অতি স্বচ্ছ। লোলাব উপত্যকার ঘন অরণ্যে বাস করে কালো ভাল্লুক, তুষার লেপার্ড, বুনো ছাগল, কাশ্মীরী হরিণ আরও কত কী!
৪. তুলেইল ভ্যালি - কাশ্মীরের আরেক অপূর্ব সুন্দর অচেনা স্থান হল তুলেইল উপত্যকা। গুরেজ থেকে এর দূরত্ব বেশ কম। তাই যে দিন গুরেজ ঘোরার পরিকল্পনা করবেন, সেদিনই তুলেইল ঘুরে আসতে পারেন। গুরেজ থেকে বরনাই, চকওয়ালি, কাশপত, জারগাই পেরিয়ে পুরানি তুলেইল গ্রামে পৌঁছনো যায়। গোটা গ্রামটা ছবির মতো সুন্দর। গ্রামের বাড়িগুলি একটি আরেকটির সঙ্গে যুক্ত। গ্রীষ্মকালে এই উপত্যকা ফুলে-ফুলে ভরে ওঠে। ছবি তোলার জন্য আদর্শ সময়।
এখানে খুব ভাল ট্রাউট মাছ পাওয়া যায়। গ্রামের মধ্য দিয়েই সাদা মেঘেরা উড়ে বেড়ায়। তুলেইল গ্রাম সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। তাই এখানে প্রবেশের জন্য ভারতীয় সেনার বিশেষ অনুমতি লাগে। দাওয়ার পুলিশ স্টেশন থেকে তুলেইল গ্রামে প্রবেশের অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হয়। তুলেইল ঘোরার সেরা সময় গ্রীষ্মকাল। সম্পূর্ণ নিরিবিলিতে গ্রীষ্মের অবসর যাপন করতে চাইলে তুলেইল উপত্যকাকে নিজের কাশ্মীর ভ্রমণের তালিকায় অবশ্যই রাখুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy