প্রেজেন্টস্
Knowledge Partner
Fashion Partner
Wedding Partner
Banking Partner
Comfort Partner

বারাণসীর মণিকর্ণিকা! জায়গাটির নাম নিয়ে নেপথ্যের গল্পটি কী

মণিকর্ণিকা হল, শ্মশান ঘাট। এই ঘাটে পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম তো হয়ই, সারা বছর এটি আকর্ষণ করে পর্যটকদের। শুনুন তাঁর নামের নেপথ্যের কাহিনি।

অনিরুদ্ধ সরকার

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:৪৯

যুগ যুগ ধরে আমাদের সনাতন সভ্যতার সাক্ষী গঙ্গা নদী। আর এই নদীর তীরেই, বিশ্বের এক প্রাচীন শহর। অনেকে যাকে বলেন, ভারতের ‘আধ্যাত্মিক রাজধানী’, বারাণসী।বছরের যে কোনও সময়ই বারাণসীর গঙ্গায় নৌকা বিহার বেশ জনপ্রিয়। ঘন্টা খানেকের নৌকা বিহারে দেখে নেওয়া যায় ৮৪টি ঘাট।

দশাশ্বমেধ ঘাট, অসি ঘাট, দ্বারভাঙা ঘাট থেকে মণিকর্ণিকা ঘাট পর্যটকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিটি ঘাটকে ঘিরে কত শত বছরের গল্প। ইতিহাসের সেই সব গল্প শুনতে শুনতে আপনিও হারিয়ে যেতে পারেন সময়ের গোলকধাঁধায়।

বারাণসীর দুটি সব চেয়ে জনপ্রিয় ঘাটের একটি দশাশ্বমেধ এবং অন্যটি মণিকর্ণিকা। দশাশ্বমেধ বিখ্যাত মূলত সন্ধ্যারতি এবং স্নানের জন্য। তবে মণিকর্ণিকা হল, শ্মশান ঘাট। এই ঘাটে পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম তো হয়ই, সারা বছর এটি আকর্ষণ করে পর্যটকদের।

আজও প্রাচীন এই শহরে বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের মুখে একটা কথা প্রায়শই শোনা যায়, ‘‘বার্ধক্যের বারাণসী’’। নেপথ্যে রয়েছে হিন্দুশাস্ত্র ও পুরাণের একটি ধারণা যে, কাশীতে মৃত্যু হলে তার না-কি আর পুনর্জন্ম হয় না। সেই কারণে কাশীতে মৃত্যুবরণ করতে আসা মানুষজন থাকতে চান মণিকর্ণিকা ঘাটের আশেপাশে। প্রচলিত বিশ্বাস, মণিকর্ণিকা ঘাটে যাঁকে দাহ করা হয়, তাঁর কানে তারক মন্ত্র দেন স্বয়ং তারকেশ্বর মহাদেব।

জীবনের শেষ ক'টি দিন কাশী বিশ্বনাথের সান্নিধ্যে কাটানোর আশায় ধর্মপ্রাণ ভারতীয়দের অনেকেই আসেন বারাণসী। মণিকর্ণিকা ঘাটের কাছাকাছি কোনও বাড়ি অথবা ধর্মশালায় এসে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করেন অনেকে।

ধর্মবিশ্বাসীদের অনেক মত, বারাণসীতে মৃত্যু এখ উৎসব। কখনও নব্বই বছরের মৃত বৃদ্ধকে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে মণিকর্ণিকার শ্মশান ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়, আবার কখনও দেখা যায় কেউ মৃত্যুর পূর্বে প্রতিদিন ঈশ্বরের নাম-গানে অংশ নিচ্ছেন। যেন এখানে জীবন নয়, সবাই চান মহাদেবকে সাক্ষী রেখে চির মুক্তি পেতে, যা মোক্ষের সমান। মৃত্যই এখানে জীবনের কথা বলে।

হাজার হাজার বছর ধরে বারাণসীর এই মণিকর্ণিকা ঘাটে চিতার আগুন নেভেনি। পুরাণ অনুসারে, সত্য যুগে এই ঘাটেই মৃতদেহ সৎকার করেছিলেন রাজা হরিশচন্দ্র। এই ঘাটেই আদি শঙ্করাচার্যকে চন্ডালরূপে ছদ্মবেশী শিব দেখা দেন ও অদ্বৈততত্ত্ব বোঝান। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ কথামৃত অনুসারে, শ্রীরামকৃষ্ণ তীর্থ ভ্রমণ কালে এই ঘাট দর্শন করেছিলেন।

দশাশ্বমেধ ঘাট এবং সিন্ধিয়া ঘাটের মাঝে অবস্থিত এই মনিকর্ণিকা ঘাট। এর স্থাপনকে ঘিরে আছে হাজারও কাহিনি। পুরাণমতে, শিবের প্রলয় নৃত্যের সময় তার কানের অলংকার এখানে পড়েছিল এবং তখনই মণিকর্ণিকা ঘাট তৈরি হয়েছিল। সংস্কৃত ভাষায় কানের দুলকে ‘মনিকর্ণ'’ বলা হয়। আর এই ‘মনিকর্ণ’ শব্দ থেকে এই ঘাটের নাম হয় ‘মনিকর্ণিকা’।

কারও মতে, ভগবান বিষ্ণু শিব ও পার্বতীর স্নানের জন্য এই ঘাটেই একটি কুণ্ড বানিয়েছিলেন। স্নানের সময় পার্বতীর কানের দুল পড়ে যায় এখানে, সেই থেকে এর নাম হয় 'মণিকর্ণিকা'। আজও সেই কুন্ডটির দেখা মেলে।

কথিত, বারাণসীর এই ঘাটে পড়েছিল দেবীর চোখের একটি মণি, তাই এ রকম নাম! দিব্যচক্ষু সমগ্র বিশ্বকে দেখতে পায়, তাই দেবীর নাম এখানে বিশালাক্ষী। অনেকে বলেন, পঞ্চম শতাব্দীর গুপ্ত লিপিতে ঘাটটির উল্লেখ রয়েছে। স্কন্দপুরাণ অনুসারে, সব পবিত্র তীর্থে স্নানের চেয়েও মণিকর্ণিকায় স্নানের পুণ্য বেশি, এখানে স্নান সেরে কাশী বিশ্বনাথ দর্শন করতে হয়।

বারাণসীর এই মনিকর্ণিকা ঘাটে প্রতিদিন শতাধিক মৃতদেহ দাহ করা হয়। ফাল্গুন মাসে রঙ্গভরী একাদশীর পরের দিন বারাণসীর মণিকর্ণিকা ঘাটে মহাশ্মশাননাথ মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনার পর শুরু হয় প্রাচীন ‘চিতাভস্ম হোলি’ উৎসব। জলন্ত চিতা থেকে ছাই তুলে অঘোর সাধুরা তা মেখে নেন।

জনশ্রুতি,, এই চিতাভস্ম হোলি খেলতে মনিকর্ণিকা ঘাটে স্বয়ং মহাদেব আসেন। হোলি খেলতে কোনও রং নয়, শবদেহের ছাই গায়ে মেখে উৎসবে মেতে ওঠেন তিনি। বিভিন্ন মন্দিরের পুরোহিত থেকে অঘোর সাধু, কাপালিক, তান্ত্রিক, সাধারণ মানুষ সবাই এদিন মাখেন চিতাভস্ম।

বিশ্বাস, শিবের আশীর্বাদে দূর হয় মৃত্যুভয়। এমন হাজারও গল্পে ঠাসা বারাণসীর মণিকর্ণিকা। যার ইতিহাসের শেষ নেই। তাই অল্পেই ইতি টানতে হল।

কীভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে সরাসরি বেনারসের ট্রেন রয়েছে। কাছের বিমানবন্দর বারাণসী। সড়কপথে কলকাতা থেকে বেনারস ১১ ঘন্টার দূরত্ব।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

varanasi ghats Puja Travels Manikarnika Ghat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy