নেতা: দার্জিলিঙের জজবাজারে মোর্চার সদর দফতরে বিনয় তামাং।
২০১৯ সালের মার্চ। দার্জিলিঙে সরকারি টুরিস্ট লজের ঠিক পাশেই একটি অভিজাত হোটেলের ছোট্ট ঘরে ‘ওয়ার রুম’ খুলেছিলেন তিনি। সামনে রাশি রাশি কাগজে ছক কেটে এলাকা ধরে ধরে ‘নোট’। সেগুলির মধ্যেই তিনি তখন বাঁচতেন।
দু’বছর পরে কিন্তু ছবিটা পুরো বদলে গিয়েছে। দার্জিলিঙের জজবাজারে মোর্চার নিজের দফতরে বসে বিনয় তামাং বলেন, ‘‘এখন তথ্য রাখার পুরো কাজটাই করছে আইটি (তথ্যপ্রযুক্তি) কর্মীরা।’’ তাঁর ব্যাখ্যা থেকে উঠে আসে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য। তিনি জানান, ‘প্রেসিডেন্টস ইলেকশন কন্ট্রোল রুম’ বা পিইসিআর নামে একটি শাখা তৈরি হয়েছে দলে। তাতে কাজ করছেন ১৩১ জন। তাঁরা মূলত তরুণ প্রজন্মের লোকজন।
কী ভাবে কাজ হচ্ছে? বিনয় জানান, মাঠেঘাটে ঘুরে তিনি ও তাঁর দল যেসব তথ্য সংগ্রহ করছেন, সেগুলি গুছিয়ে রাখছেন এই আইটি কর্মীরা। সেই তথ্যভাণ্ডার দেখে বিনয়রা ঠিক করছেন, পরের কৌশল কী হবে। যেমন? বিনয় বলেন, ‘‘ধরুন, আমাদের কারও কোনও বক্তৃতা পছন্দ হল না স্থানীয়দের। সেই বক্তৃতার প্রতিক্রিয়া জেনে নিলাম। সেই তথ্য পাঠানো হল আইটি টিমের কাছে। পরে সেগুলির খুঁটিনাটি তথ্য দেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি, পরের পদক্ষেপ কী হবে। বক্তৃতার কোনও অংশ মানুষের পছন্দ না হলে সেটাও বদলানো হচ্ছে।’’
পাহাড়ে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ভোটের প্রচার এর আগে হয়েছে কিনা সন্দেহ। এই নতুন প্রক্রিয়া বিনয়দের কিছুটা হলেও সুবিধা করে দেবে বলে মনে করছেন অনেকেই। হঠাৎ আইটি-তে কেন? বিনয়ের দাবি, এই ভোটে তাঁদের সব থেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী আরএসএস। তারা আগে ব্লক ধরে কাজ করত। এরপর মণ্ডল ধরে, এখন পাড়ায় পাড়ায় ঢুকে গিয়েছেন সঙ্ঘের কর্মীরা। ফলে বিজেপির পদ্ম ঢুকে পড়ছে পাহাড়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ‘‘এর সঙ্গে লড়াই করতে গেলে আইটি সেল না খুলে উপায় নেই,’’ বলছেন বিনয়।
বিনয়দের এই আধুনিক কৌশলের উল্টো দিকে রয়েছেন বিমল গুরুং, যিনি নিজের পুরনো আবেগকে নতুন করে উস্কে দিতে চষে ফেলছেন গ্রামের পর গ্রাম। যে গুরুং আগে সন্ধ্যার মধ্যে ঘরে ঢুকে পড়ছেন, তিনি এখন গভীর রাত অবধি পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে ছোট ছোট বৈঠক করে চলেছেন।
অঙ্ক, আধুনিকতা এবং পুরনো আবেগ— টক্করে কে জিতবে? পাহাড়ের লোকজনেরা মুচকি হেসে বলছেন, ‘‘দেখা যাক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy