Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Assembly Election 2021

WB Election Result: মৃত্যুমিছিলের অভিজ্ঞতা ভুলে বিধিভঙ্গের বিজয় উৎসব

শয্যার হাহাকার রোজের অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ালেও সব দূরত্ব-বিধি ভুললেন নেতা-দাদারা।

বে-হুঁশ: কোভিড-বিধি উড়িয়ে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের জমায়েত এবং বাইক মিছিল। প্রায় কারও মুখেই ছিল না মাস্ক। রবিবার, হাওড়ায়।

বে-হুঁশ: কোভিড-বিধি উড়িয়ে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের জমায়েত এবং বাইক মিছিল। প্রায় কারও মুখেই ছিল না মাস্ক। রবিবার, হাওড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০২১ ০৫:২৮
Share: Save:

‘মানুষের জয়’-এর দিনে মানুষেরই বিধি মানার বোধ থাকবে না কেন? কেন কর্মী-সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না কোনও পক্ষই? অতিমারিতে কাবু শহরে বিশাল জমায়েত দেখেও কেন দর্শকের ভূমিকায় থাকবে নির্বাচন কমিশন বা পুলিশ?

তৃণমূলের বাংলা দখলে রাখার হ্যাটট্রিকের মধ্যে এই প্রশ্নগুলোই বিঁধল রবিবার। অভিযোগ, ফল ঘোষণার আগে থেকেই শুরু হওয়া জয়োল্লাসে মানা হল না করোনা-বিধি। শয্যার হাহাকার রোজের অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ালেও সব দূরত্ব-বিধি ভুললেন নেতা-দাদারা। মনে রইল না মাস্ক পরার কথাও। চলল আবির ও রং খেলা। তারস্বরে বক্স বাজিয়ে নাচ দেখে বোঝার উপায় রইল না যে, অতিমারি পরিস্থিতি চলছে। সচেতন নাগরিক থেকে চিকিৎসকেরা প্রশ্ন তুললেন, “জয়ের উৎসবে মৃত্যুমিছিল ভুলে থাকা যাবে তো? কবে আমরা বিধি পালনের বোধ দেখাব?”

দুপুরে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের ছবি ছিল আঁতকে ওঠার মতো। মানুষের ভিড়ে রাস্তা তখন পুরো বন্ধ। বেশির ভাগেরই মাস্ক নেই। দূরত্ব-বিধি নিয়ে কথা বলা অবান্তর। রং মেখে নাচতে থাকা সেই জনতাকে সরাতে কার্যত হিমশিম খায় পুলিশ। থানার তরফে বার বার জায়গা ফাঁকা করার ঘোষণা করা হলেও তা শুনতে দেখা যায়নি কাউকেই। একই রকম অবস্থা হয় গড়িয়া, নাকতলা, টালিগঞ্জ, বাঘা যতীন, যাদবপুর এলাকার। যে কেন্দ্রে যিনি জয়ী হয়েছেন, সঙ্গীদের নিয়ে তাঁকেই বেরিয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বিকেলে সব চেয়ে ভিড় ছিল হাজরা মোড় এলাকায়। অভিযোগ, রাস্তা আটকে বক্স বাজিয়ে নাচ দেখেও দর্শকের ভূমিকায় ছিল পুলিশ। দীর্ঘক্ষণ বাসের অপেক্ষায় থাকা সুগত ঘোষ বললেন, “আমরাই ভোট দিয়ে জিতিয়েছি, আর তার জন্য আমাদেরই ভুগতে হবে?” রাস্তায় নাচ দেখা গিয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালের সামনেও। সেখানেই দাঁড়ানো সুমিতা সরকার বললেন, “এখনও হুঁশ নেই? এইমাত্র বাবাকে ভর্তি করিয়ে বেরোলাম। ভাবুন তো, আমাদের কেমন লাগে!”

জমায়েত আটকানো হয়নি পানিহাটির ভোট গণনা কেন্দ্র গুরুনানক কলেজের বাইরেও। ধানকল মোড়ের কাছে একটি ক্লাবে ভিড় করে নাচ চলতে থাকে। নাচ চলে বি টি রোড আটকেও। পুলিশ পিকেটের সামনেই আবির খেলে নাচতে ব্যস্ত এক ব্যক্তির মন্তব্য, “জানি জমায়েত বারণ। কিন্তু আনন্দ ধরে রাখতে পারলাম না। দোল থেকে আবির জমিয়ে রেখেছিলাম।”

হাওড়াতেও এ দিন ফল ঘোষণার আগেই নিবড়া মোড়ে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক আটকে নাচানাচি চলে। দুপুরের পরে করোনাকে তুড়ি মেরে রাস্তায় নামে মানুষের ঢল। হুড খোলা জিপে ‘খেলা হবে’ গানের সঙ্গে নাচ আর মাস্কহীন বাইকবাহিনীর দখলে চলে যায় জি টি রোড থেকে বটানিক্যাল গার্ডেন এলাকার একাধিক রাস্তা। বিধাননগরে আবার দেদার বাজিও পোড়ানো হয় বলে অভিযোগ।

বিকেল গড়াতেই শহরের রাস্তায় বাড়ে মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য। স্রেফ পতাকা লাগিয়ে পুলিশের সামনে দিয়েই এক বাইকে চার জন বা তিন জন বেরিয়ে গিয়েছেন। এমনই এক চালকের দাবি, “এমন ভোট শেষ কবে দেখেছে শহর? প্রচুর চাপ ছিল। তার পরে এমন জয়ের উচ্ছ্বাস করোনাও আটকাতে পারে না।”

কোনও তরফেই যে আটকানোর চেষ্টা করা হয়নি, তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে লালবাজারের দেওয়া হিসেবেও। ভিড়ে বেপরোয়া উৎসব দেখা গেলেও কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে, মাস্ক না পরার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে মাত্র ১৯০ জনের বিরুদ্ধে। গ্রেফতারির সংখ্যা শূন্য!

তবু যেন স্বস্তিতে গিরিশ পার্কের বাসিন্দা সুনয়না গুহর মতো অনেকেই। তিনি বললেন, “অন্তত কাল থেকে তো আর এ সব হবে না! সেটা ভেবেই শান্তি। অন্তত এ বার যদি করোনার সংক্রমণ কমে!” কিন্তু এ দিনের উৎসবের খেসারত দিতে হবে ক’জনকে, জানা নেই কারওরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE