ছবি: অণুষ্কা শর্মার ইনস্টাগ্রামের সৌজন্যে।
অনুষ্কা শর্মা অভিনীত কোনও ছবি যদি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে, দায়টা কি বিরাট কোহালির হবে? উত্তর নিশ্চয়ই ‘না’। তা হলে বিরাট কোহালি ক্রিজে সাফল্য না পেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুষ্কা শর্মা ট্রোলড হবেন কেন?
অত্যন্ত কুরুচির পরিচায়ক এবং অত্যন্ত অন্যায় এই ট্রোলিং। আগেও হয়েছে, এই প্রথম বার নয়। বিরাট কোহালির পারফরম্যান্স খারাপ হলেই অনুষ্কাকে কটূক্তি হজম করতে হয়েছে। বিরাট নিজে তার প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু ‘ক্রিকেটপ্রেমীরা’ যে দমেননি, তা ফের বোঝা গেল। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে প্রথম ইনিংসে বিরাট ৫ রানে আউট হতেই অনুষ্কার ‘কু-প্রভাব’ নিয়ে হইচই শুরু হয়ে গেল।
অনুষ্কা শর্মা এবং বিরাট কোহালির মধ্যে কী ধরনের সম্পর্ক থাকে, অনুষ্কা শর্মা এবং বিরাট কোহালি পরস্পরকে বিয়ে করবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত অবশ্যই তাঁরা দু’জনেই নেবেন। এ নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে না। কিন্তু ভারতের ক্রিকেট ‘অনুরাগীদের’ অনেকেই মনে করেন, বিরাট-অনুষ্কার সম্পর্কের বিষয়ে, তাঁদেরও অনেক কথা বলার আছে। এই সব ক্রিকেট ‘অনুরাগীরা’ এমনটাও বিশ্বাস করেন যে, ক্রিকেটের ময়দানে বিরাটের ব্যর্থতার দিনগুলোই তাঁদের মুখ খোলার জন্য আদর্শ দিন।
এই মানসিকতা সত্যিই দুর্বোধ্য। ক্রিকেট যে অনিশ্চয়তার খেলা, সে তো সকলেই জানেন। আজ সাফল্য, কাল ব্যর্থতা লেগেই থাকে ক্রিকেটে। বিরাট-অনুষ্কার সম্পর্ক কি কোনও ভাবে বিরাটের ক্রিকেট দক্ষতাকে নিয়ন্ত্রণ করে? তা যদি করে, তা হলে বিরাটের সাফল্যের কৃতিত্বও নিশ্চয়ই অনুষ্কার। তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পরে বিরাট যতগুলি ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছেন, তার চেয়ে অনেক বেশি ম্যাচে তো বিরাট চোখ ধাঁধানো সাফল্য দেখিয়েছেন। তা হলে সে কৃতিত্ব নিশ্চয়ই অনুষ্কার। সে সব দিনে অনুষ্কার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও প্রশংসা তো দেখা যায়নি! কিন্তু বিরাট ব্যর্থ হলেই অনুষ্কার জন্য ট্রোলিং বরাদ্দ। এই সীমাহীন অসভ্যতা বন্ধ হওয়া খুব দরকার।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
এ দেশে ‘বেটি বচাও, বেটি পঢ়াও’ কর্মসূচি পালন করতে হয় এখনও। এ দেশে এখনও নারীকে মর্যাদার চোখে দেখা মানেই তাঁর মধ্যে মা অথবা বোনকে খুঁজে পাওয়া। এ দেশে বা এ সমাজে নারীর মর্যাদা সংক্রান্ত আলোচনা মূলত নারী দিবসের জন্যই প্রাসঙ্গিক। অতএব অনুষ্কার সঙ্গে জমকালো পরিণয় আর বহুচর্চিত মধুচন্দ্রিমা সেরে ক্রিকেট মাঠে ফেরার পর বিরাট কোহালি যদি একটা ইনিংসে বা একাধিক ইনিংসে বড় স্কোর করতে ব্যর্থ হন, তা হলে নারীসঙ্গের ‘কু-প্রভাব’ নিয়ে তুমুল চর্চা শুরু হবেই।
আরও পড়ুন
৫ রানে আউট বিরাট, টুইটারে ট্রোল্ড অনুষ্কাও
আসলে এ সমাজে দিবসগুলো পালিত হয়, শপথগুলো নয়। ঘটা করে নারী দিবস পালন করি আমরা। কিন্তু সে ‘পালন’ অনুষ্ঠানিকতাতেই সীমাবদ্ধ থাকে, সংকল্পটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না। নারীর সম্মান বা নারীর মর্যদার কথা আমরা বড় মুখ করে বলি। কিন্তু নারীর মর্যাদা আসলে কী, সে উপলব্ধি অধিকাংশেরই নেই। জগতের সব নারীর মধ্যে মা আর বোনকে খুঁজে পাওয়াই হল নারীকে সম্মান করা— অধিকাংশের কাছেই ধারণাটা এই রকম সম্ভবত। কিন্তু নারী-পুরুষের সম্পর্কটা যে শুধু মা বা বোনের সঙ্গে সন্তান বা ভাইয়ের সম্পর্ক নয়, নারী-পুরুষ যে আরও অনেক রকম ভাবে পরস্পরের পরিপূরক, যে নারীকে মা-বোনের চোখে দেখা সম্ভব নয়, তাঁরও যে সুনির্দিষ্ট সম্মান প্রাপ্য, সে কথা বুঝতেই শেখেননি অনেকে। অনুষ্কার ট্রোলড হওয়া তাই বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়, একটা নিন্দনীয় সামাজিক প্রবণতার নির্লজ্জ প্রতিফলন এই ট্রোলিং।
বিরাট কোহালি পাঁচ রানে আউট হওয়ার পর অনুষ্কা শর্মাকে নিয়ে যে ধরনের চর্চা শুরু হয়েছে, সেই ধরনের চর্চার মাধ্যমে আমরা বার বার প্রমাণ করে দিই, আমাদের যাবতীয় অগ্রগতি আপাতদৃষ্টির। সভ্যতা এগোচ্ছে। কিন্তু সেই অগ্রগতির উপলব্ধিটাকে ধারণ করার মতো শক্তিশালী এখনও হয়ে ওঠেনি সমাজের অনেকটা অংশই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy