Advertisement
২৯ এপ্রিল ২০২৪
Letters to Editor

সম্পাদক সমীপেষু: ধর্ম ও রাজনীতি

বাংলায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি মিশেছে ভৌগোলিক, সামাজিক ও ঐতিহাসিক কারণে। ধর্মের ভিত্তিতে এখন আরও স্পষ্ট হয়েছে এক পক্ষকে সমর্থন ও অন্য পক্ষের ক্ষোভ।

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২৩ ০৬:০৫
Share: Save:

মণিরত্নমের পোন্নিয়ান সেলভান চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে গৌতম চক্রবর্তী ‘এই সব মণিমুক্তো’ (২১-৫) প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন বন্ধু বান্দিয়ার প্রতি শৈব রাজা সুন্দরচোলের প্রতিনিধি ছোট রাজকুমার অরুলমোজলির সংলাপ, “রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে কখনও মিশিয়ো না বন্ধু।” প্রশ্ন তোলা হয়েছে, বাঙালি কতটা জানে তামিল ধ্রুপদী সাহিত্যকে। বাঙালির তামিল সাহিত্য পড়া নিশ্চয়ই দরকার। তবে ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির দ্বন্দ্ব নিয়ে বাঙালি নিরন্তর পরীক্ষা করে গিয়েছে। এর ইতিহাস বিশাল, অনন্য ও অমূল্য। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে, খণ্ডিত বাংলায় বাঙালি তার পরীক্ষা দিয়েছে, এখনও পরীক্ষা দিয়ে চলেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাঙালির সাফল্য তার ব্যর্থতাকে বহুগুণ ছাপিয়ে গিয়েছে। বাংলায় সব ধর্ম ও তাদের বিভিন্ন ধারা মতামত প্রকাশ করে চলেছে। ধর্মীয় বিভিন্নতা, বিশেষ করে হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের গুরুত্ব স্বীকার করে অসাম্প্রদায়িকতার বাতাবরণ রাখার চেষ্টা করে চলেছে বাঙালি। ধর্মনিরপেক্ষতার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ ভারত রাষ্ট্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বাংলায় ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি মিশেছে ভৌগোলিক, সামাজিক ও ঐতিহাসিক কারণে। ধর্মের ভিত্তিতে এখন আরও স্পষ্ট হয়েছে এক পক্ষকে সমর্থন ও অন্য পক্ষের ক্ষোভ। ধর্মনিরপেক্ষ ভাবে তাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতার অভাব রয়েছে, তাই লেখকের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু তা বলে ধর্ম ও রাজনীতির অস্তিত্ব এবং মিশেলের বাস্তবতা অস্বীকার করা যায় না। বরং ধর্ম ও রাজনীতি, উভয়কে সহনশীল হয়ে ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে, যত দিন গণতন্ত্রে ধর্ম ও রাজনীতি, উভয়ের প্রয়োজনীয়তা থাকে।

সম্রাট, রাজা, সামন্ত, ভূস্বামীদের যুগ গিয়েছে, তবে স্বাধীন ভারতের রাজনীতিতে তা কিছুটা সংক্রমিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গানে বলেছেন— আমরা সবাই রাজা আমাদেরই রাজার রাজত্বে। কিন্তু সেখানে রাজা সবারে দেন মান, সে মান আপনি ফিরে পান। রাজার ধর্ম যা-ই হোক, প্রজার ধর্ম যা-ই হোক, মানুষের ধর্ম যা-ই হোক, যদি রাষ্ট্র সমাজের ধর্মনিরপেক্ষতাকে মান্যতা দিয়ে, সবার রাজনৈতিক অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখার সৎ প্রয়াস করে চলে, তা হলে যে কোনও প্রকার ‘ব্যত্যয়’ মানিয়ে নেওয়া যেতে পারে। ধর্মীয় উদারতার অনেক লক্ষণ এখনও আছে বাংলায়।

শুভ্রাংশু কুমার রায়

চন্দননগর, হুগলি

সাহিত্যে বৈচিত্র

‘এই সব মণিমুক্তো’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বাঙালি তামিল ক্লাসিক সাহিত্য তেমন করে জানে না। এ প্রসঙ্গে বলি, বাংলা হল ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীভুক্ত ভাষা, আর তামিল হল দ্রাবিড় গোষ্ঠীভুক্ত অন্যতম প্রাচীন ভারতীয় ভাষা। উভয় ভাষার ধ্বনি, রূপ এবং অন্বয়গত সম্পর্ক তেমন একটা নেই। যদিও ‘খাল’ বা ‘ঘড়া’-র মতো দ্রাবিড় গোষ্ঠীর বেশ কিছু শব্দ সংস্কৃত হয়ে বাংলায় এসেছে।

তামিল হল তামিলনাড়ুর (পূর্বতন মাদ্রাজ) সরকারি ভাষা। এই ভাষা ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফসিলিভুক্ত। বর্তমানে তামিলনাড়ু একটি সংহত ভাষাতাত্ত্বিক অবয়বে স্বীকৃত। তামিল প্রধানত দু’রকম, সাহিত্যে ব্যবহৃত তামিল এবং কথ্য তামিল। কথ্য তামিলে আবার যথেষ্ট উপভাষা-বৈচিত্র আছে। এমন উপভাষা-বৈচিত্র দেখা যায় প্রান্তিক ভাষাগুলিতেও। ভাষার ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব, এমনকি ভাষাতাত্ত্বিক অবয়ব-গঠনেও ব্রাহ্মণ এবং তথাকথিত নিম্নবর্ণের ভাষার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে।

তামিলে সাধু ভাষার সঙ্গে কথ্য ভাষার ব্যবধান যথেষ্ট। আসলে সাধু ভাষা গড়ে উঠেছে পূর্বী জেলাগুলির প্রাচীন ভাষাস্তরকে আশ্রয় করে— যা প্রধানত চেন্-তামিল ভাষার (৫০০ খ্রিস্টাব্দ) উদাহরণ। সাহিত্যে ব্যবহৃত সাধু ভাষা আবার দু’রকম, একটি সাধারণত পত্রপত্রিকায়, চিঠিপত্রে অথবা গ্রন্থে ব্যবহৃত হয়, আর অন্যটি ধ্রুপদী সাহিত্যের, প্রধানত কাব্যের ভাষা— যা প্রাচীন সাহিত্যেই মুখ্যত ব্যবহৃত হত। এই ভাষা প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে একটি নির্দিষ্ট রূপ পেয়েছে। মনে রাখতে হবে, তামিল ব্রাহ্মণরাই মূলত তামিল শব্দভান্ডারে সংস্কৃত শব্দের প্রয়োগ ঘটিয়ে এর আর্যীকরণ করেছিলেন। এখনকার সাধারণ শিক্ষিত তামিলরাও অষ্টাদশ শতকের তামিল সাহিত্য বুঝতে পারেন না। অন্য দিকে, কথিত তামিলের বিভিন্ন রূপও সাহিত্যের প্রয়োগে সীমাবদ্ধ।

দক্ষিণ ভারতে তামিল ভাষার পাশাপাশি তেলুগু, কন্নড় ইত্যাদি আঞ্চলিক ভাষায় কাব্য ও সাহিত্যচর্চায় নতুন ধর্ম-সম্প্রদায়গুলির কিন্তু বিশেষ অবদান ছিল। মূলত ধর্মদর্শন ও আচারকে কেন্দ্র করেই স্থানীয় ভাষার সাহিত্যগুলি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। শৈব নারায়ণ সাধকরা তামিল সাহিত্যে ভক্তিবাদের প্রচলন করেন। নাম্বি-আন্ডার-নাম্বি শৈব রচনাগুলিতে এগারোটি ‘তিরুমুরাই’ সংগ্রহ করেন। প্রথম সাতটির সঙ্কলন ‘তেবারম’ নামে পরিচিত, অষ্টমটির নাম ‘তিরুবাচকম্’। দশম তিরুমুরাই-এর লেখক তিরুমুল।

পেরিয়া পুরানম নামক তামিল গ্রন্থের লেখক শেক্কিতার ৬৩ জন শৈব সাধকের জীবনী লেখেন। এই নায়নার সাধকদের অনুসরণে কালক্রমে দক্ষিণ ভারতে ‘শৈব সিদ্ধান্ত’ নামক নতুন ধর্মমতের সৃষ্টি হয়। বিশিষ্ট শিবাচার্য উমাপতি এবং অরুনন্দি যথাক্রমে শিবজ্ঞান সিন্ধিয়ার এবং শিব প্রকাশম গ্রন্থে এই ধর্মসম্প্রদায়ের দর্শনতত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন। তবে ধর্মনিরপেক্ষ তামিল সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল চোল রাজাদের প্রশস্তিগুলি। জৈন কবি তিরুত্তব্ধদেব দশম শতকের প্রথম দিকে জীবক চিন্তামণি নামে একটি কাব্য রচনা করেন। এটি তামিল সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য হিসাবে গণ্য হয়। তামিল কাব্যের ‘ত্রিরত্ন’ রূপে অভিহিত হন কম্বন, কুট্টন ও উগলেন্দি।

চোলযুগে তামিল ভাষায় অভিধান, ব্যাকরণ, ছন্দ ইত্যাদি বিষয়েও বহু সাহিত্য রচিত হয়। তৃতীয় কুলোতুঙ্গের আমলে নন্নুল নামে একটি তামিল ব্যাকরণ লেখেন পবননন্দী। আনুমানিক দশম শতকের শেষ দিকে এটি রচিত হয়েছিল। বীর রাজেন্দ্রর শাসনকালে বুদ্ধমিত্র রচনা করেন অলঙ্কার বিষয়ক গ্রন্থ বীরসোলিয়ম্। জনৈক অজ্ঞাতনামা লেখক দণ্ডীর কাব্য অনুসরণে লেখেন দণ্ডীয় মঙ্গলম্ কাব্য। দশম শতকে আভাই নামক এক জন মহিলা কবির রচনা পাওয়া গিয়েছে। তাঁর প্রাপ্ত গ্রন্থগুলির নাম নাস্নুরকোভাই, অনন্ত মিলমলাই ইত্যাদি। তাঁর রচনার বিষয়বস্তু ছিল সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ, বিরহ-ভালবাসা, দ্বেষ-হিংসা ইত্যাদি মানবিক আবেগ ও অনুভূতি। এ কারণে তিনি ‘তামিল কাব্যের জননী’।

রমজান আলি

রাজবাড়ি, পূর্ব বর্ধমান

জয়ের ফর্মুলা

দেবাশিস ভট্টাচার্যের ‘জোটের জটে বাংলা’ (১৮-৫) শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলতে চাই, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সঠিক ভাবেই দাবি করছেন, বিজেপিকে হারাতে যে যেখানে ক্ষমতাবান, সেখানে তারা বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ুক। তাঁর কথা অনুযায়ী, কংগ্রেস কিংবা বামেদের এই বাংলায় লড়ার দরকার নেই। কারণ তৃণমূলের দাবি, বিজেপিকে হারাতে তারাই যথেষ্ট। অথচ, কর্নাটকে জয়ের পরে অধীর চৌধুরীরা আগামী লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেবেনই। সুতরাং তৃণমূল নেত্রী এ ক্ষেত্রে অন্য ভাবে ভাবতে পারেন।

প্রথম রাস্তাটি হল— তৃণমূল আর কংগ্রেস জোট। দ্বিতীয়টি হল ‘নো ভোট টু বিজেপি’ ফর্মুলা, যা কর্নাটকে ঘটেছে বলে মমতা ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন। দ্বিতীয় ফর্মুলাটি গ্রহণ করে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল ধারাবাহিক প্রচার করে গেলে এ রাজ্যে বিজেপির আসন হয়তো কমবে, তবে তার পরিবর্তে বাম আর কংগ্রেস শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তৃণমূল এই পথে কংগ্রেস ও বামকেও আহ্বান জানাতে পারে। এর ফলে তৃণমূল এটাও প্রমাণ করে দিতে পারবে যে, বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের কোনও গোপন বোঝাপড়া নেই।

সুদীপ মাইতি

কাঁথি, পূর্ব মেদিনীপুর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE