Advertisement
১৯ মে ২০২৪

দিদির বিরুদ্ধে শুধুই বক্তৃতা, চাপে বিজেপি

আজ, সোমবার দ্বিতীয় দফার ভোটের আঠারো ঘণ্টা আগে কলকাতায় এসে দিদিকে দশে শূন্য দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সেই সঙ্গে রিপোর্ট কার্ডে যেন লাল কালিতে লিখে দিলেন, ঐতিহাসিক সুযোগ পেয়েও পাঁচ বছরে বিকল্প উন্নয়নের মডেল সামনে রাখতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:০৬
Share: Save:

আজ, সোমবার দ্বিতীয় দফার ভোটের আঠারো ঘণ্টা আগে কলকাতায় এসে দিদিকে দশে শূন্য দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সেই সঙ্গে রিপোর্ট কার্ডে যেন লাল কালিতে লিখে দিলেন, ঐতিহাসিক সুযোগ পেয়েও পাঁচ বছরে বিকল্প উন্নয়নের মডেল সামনে রাখতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, বল্গাহীন দুর্নীতিতে দম বন্ধ হয়ে এসেছে রাজ্যের। ‘সুশাসনের অভাবেই’ মাথাচাড়া দিয়েছে সিন্ডিকেট রাজ।

জেটলি শহরে এসেছিলেন বিজেপির প্রচারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসাবে তাঁর পরিচয় তো তাতে চলে যায় না। বরং সেই সুবাদে তাঁর কাছে হাতের তালুর মতোই এ রাজ্যের অর্থনৈতিক দুর্দশার ছবিটা চেনা। মূলত সেটা সামনে রেখেই জেটলি এ দিন বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকারের কাছে মানুষের বিপুল প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তারা আগের জমানাকেই অনুসরণ করেছে। সেই সঙ্গে দুর্নীতির আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে বাংলা। আগে যা ছিল লোকাল কমিটি, এখন সেটাই সিন্ডিকেট।’’

পরে আনন্দবাজারের সঙ্গে আলাপচারিতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। বলেন, আসলে দিদির জমানায় অশুভ চক্রে আটকে গিয়েছে বাংলা। এক সময় অসুস্থ রাজ্য ছিল যে মধ্যপ্রদেশ, তারাও এখন শিল্পে এগোচ্ছে। কারণ, উন্নয়নের মডেল সামনে রাখতে পেরেছে তারা। দিদি পারেননি। তাই শিল্প আসেনি। কর্মসংস্থানও হয়নি। এই অবস্থায় বেকারদের একাংশ ঝুঁকেছে সিন্ডিকেটের দিকে। শাসক দল তাদের ভোটের সময়ও ব্যবহার করছে। তবে সিন্ডিকেট মানেই লাভের বখরা নিয়ে সংঘর্ষ, খুনোখুনি ও কালো কারবার। আরও পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলা।

দিদির বাংলাকে এ ভাবে যখন জেটলি পড়ে ফেলেছেন, তখন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কাছে স্বাভাবিক প্রত্যাশা ছিল দাওয়াইয়েরও। তাই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সিন্ডিকেটে কম বেশি কয়েক হাজার কোটি টাকার কারবার চলছে। এ সবই কালো টাকায় হচ্ছে। সিন্ডিকেটের এই সমান্তরাল অর্থ ব্যবস্থাকে কি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী আয়করের আওতায় আনার কথা ভাবছেন? তা ছাড়া সিন্ডিকেটের টাকায় চলছে রাজনৈতিক দল। তাদের উপরেও কি এ জন্য কর ধার্য করার কথা ভাবছেন তিনি? জবাবে অবশ্য গোল গোল জবাব দেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। বলেন, ‘‘যে কোনও আর্থিক লেনদেনই করযোগ্য। সেখানে কোনও ছাড় নেই। আয়কর দফতর নিশ্চয়ই সেটা দেখছে।’’

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এই জবাব শুনে অনেকেই হতাশ হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, সিন্ডিকেট দমনে দিদি কিছু করেননি। কেন্দ্রও হাত তুলে নিলে শুধু ‘বক্তৃতা’ শুনে লাভ কী? এ ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘মোদী-জেটলিরা মানুষকে বোকা বানাতে চাইছেন। দিদি-মোদী আঁতাত চলছে। নারদ সিডি ফাঁস হওয়ার পর দিনই জেটলির সঙ্গে দেখা করেন শাসক দলের এক নেতা। তার পরই নারদ কেলেঙ্কারি আর রাজ্যসভায় এথিক্স কমিটির কাছে গেল না’’ একই মত বাম নেতাদেরও। তাঁদের বক্তব্য, কালো টাকা উদ্ধার ও দুর্নীতি দমন যদি মোদী সরকারের অগ্রাধিকারের কর্মসূচি হতো, তা হলে সারদা তদন্ত থমকে যেত না। নারদ কাণ্ডেও এত ক্ষণে তদন্তে নেমে পড়া উচিত ছিল কেন্দ্রের।

মোদী-দিদি বোঝাপড়ার বার্তায় রাজ্য বিজেপি কিছুটা চিন্তায়। তাদের এ-ও আশঙ্কা, এতে বিজেপির ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেই কারণে গত কয়েক দিনে কখনও মোদী, কখনও অমিত শাহ এবং এ দিন জেটলি এসে প্রবল আক্রমণাত্মক হয়েছেন দিদির বিরুদ্ধে। তবে এই নেতাদের কথায় কাজে ফারাক থাকায় সব কিছুর পরেও তাল কেটে যাচ্ছে।

শুধু জেটলিই নন, রাজ্যসভায় কংগ্রেসের উপ দলনেতা আনন্দ শর্মাও এ দিন অনুন্নয়ন এবং দুর্নীতি নিয়ে আক্রমণ শানিয়েছেন দিদির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘‘মমতার আমলে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা পেয়েছে। তৃণমূল নেতৃত্ব দলীয় স্তরে নারদ-কাণ্ডের তদন্ত করবেন বলেছেন। অর্থাৎ, যারা দুর্নীতি করেছেন, তাঁরাই তদন্ত করবেন! এ তো ভোটারদের বিবেচনা বোধকে অপমান করা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016 mamata bandopadhyay bjp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE