মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-র প্রতিনিধিরা পরিদর্শনে এলে অন্য হাসপাতালের শিক্ষক-চিকিৎসক, শয্যা, যন্ত্রপাতি এমনকী ঘরও ভাড়া করার অভিযোগের নজির আগে ছিল। এ বার ‘কনে দেখাতে’ জুনিয়র ডাক্তারদের ‘ডেমনস্ট্রেটর টিউটর’ সাজতে বাধ্য করার অভিযোগ উঠল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এবং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সেই অভিযোগ আনলেন জুনিয়র ডাক্তারদেরই একাংশ।
হাসপাতালের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিদের (পিজিটি) একাংশের দাবি, এত দিন এমসিআই-এর প্রতিনিধিরা হাসপাতালের পরিকাঠামো দেখতে এলে তাঁদের চোখে ধুলো দিতে অন্য মেডিক্যাল কলেজ থেকে শিক্ষক-চিকিৎসক ধার করে এনে দেখানো হত। এ বার আর জি করেরই বিভিন্ন বিভাগের পিজিটি-দের এমসিআইয়ের সামনে ডেমনস্ট্রেটর টিউটর হিসেবে দেখানো হয়েছে। গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর এই ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁদের অভিযোগ।
ক্ষুব্ধ পিজিটি-দের ওই অংশের বক্তব্য, ‘‘আমাদের শাঁখের করাতের দশা। কলেজে কর্তৃপক্ষ ও সিনিয়রদের কথা মেনে না নিলে স্নাতকোত্তরে পাশ করা বা হাসপাতালে কাজ করা দুষ্কর হবে, আবার তাঁদের কথা মেনে এমসিআই-এর কাছে লিখিত ভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পরে তা ফাঁস হয়ে গেলে রেজিস্ট্রেশনই বাতিল হয়ে যেতে পারে।’’ তাঁদের কথায়, ‘‘সব সময়ে বলির পাঁঠা হিসেবে আমাদেরই এগিয়ে দেওয়া হয়। এমসিআই তো সম্প্রতি মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো নিয়ে নিয়ম অনেক শিথিল করেছে। ২০০ জন পড়ুয়ার জন্য এখন ১৬৭ জন শিক্ষক হলেই হয়। তার পরেও কেন স্বাস্থ্য দফতর পরিকাঠামো ঠিক করছে না বা যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষক চিকিৎসকের ব্যবস্থা করছে না? আমরা ধরা পড়ে গেলে কী হবে?’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এমবিবিএস পাশ করলেই ডেমনস্ট্রেটর টিউটর হওয়া যায়। কিন্তু ডেমনস্ট্রেটর টিউটর নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে আলাদা প্যানেল তৈরি করতে হয়। অনেক সময়ে ইন্টারভিউও নেওয়া হয়। এমসিআইয়ের প্রতিনিধিরা মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনে এলে এই ডেমনস্ট্রেটরদের নিয়োগপত্র, পে-স্লিপ দেখতে চাইতে পারেন। সাধারণ পিজিটি-দের ডেমনস্ট্রেটর হিসেবে দেখানো হলে এমসিআই-এর নিয়মে তা অপরাধ। এর জন্য ওই কলেজে ভর্তির অনুমতি বাতিল হতে পারে, পাশাপাশি নকল ডেমনস্ট্রেটর এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের ঘাড়েও শাস্তির খাঁড়া নামতে পারে।
আর জি করের জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশের অভিযোগ, অ্যানাটমিতে চার জন ডেমনস্ট্রেটর টিউটর দরকার। আছেন এক জন। তিন জন পিজিটি-কে ওই বিভাগে অস্থায়ী ডেমনস্ট্রেটর হিসেবে দেখানো হয়েছে। একই ভাবে বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে চার জন ডেমনস্ট্রেটর দরকার, আছেন দু’জন। সেখানে দু’জন পিজিটি-কে ডেমনস্ট্রেটর হিসেবে দেখান কর্তৃপক্ষ। কমিউনিটি মে়ডিসিনে প্রয়োজনীয় পাঁচ জন ডেমনস্ট্রেটর-এর মধ্যে দু’জন রয়েছেন। সেখানে অস্থায়ী ডেমনস্ট্রেটর হিসেবে দেখানো হয়েছে তিন জন পিজিটি-কে। হাসপাতালের এক প্রবীণ শিক্ষক-চিকিৎসকও অভিযোগ করেন, ‘‘ভুল তথ্য জানানো হয়েছে এবং তাতে সংশ্লিষ্ট পিজিটি, বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যক্ষ সই করেছেন। এমসিআই আসল শংসাপত্র ও নথি দেখতে চাইলেই কেলেঙ্কারি হয়ে যেত!’’
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল এবং রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় দু’জনেই ঝাঁঝিয়ে ওঠেন। শুদ্ধোদনবাবুর জবাব, ‘‘কিছু ভুল জানানো হয়নি। যদি এমসিআই কিছু ভুল পায়, সেটা ওরা আর আমরা বুঝে নেব।’’ আর সুশান্তবাবুর উক্তি, ‘‘সাংবাদিকেরা আগেও অনেক চেষ্টা করেছেন, যাতে এ রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলির ছাত্র-ভর্তির অনুমোদন বাতিল হয়। তাঁরা আগেও সফল হননি, এ বারেও হবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy