Advertisement
১০ মে ২০২৪

কোনও কিছুই ‘নেই’, হাসপাতাল নিয়ে রিপোর্ট

এ যেন আক্ষরিক অর্থেই নেই-রাজ্য। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সব কিছুই প্রয়োজনের তুলনায় কম। কলকাতার রফি আহমেদ ডেন্টাল কলেজ এবং হাসপাতাল সম্পর্কে এমনটাই রিপোর্ট দিল ডিসিআই (ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া)।

সৌভিক চক্রবর্তী
লকাতা শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:১৪
Share: Save:

এ যেন আক্ষরিক অর্থেই নেই-রাজ্য। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সব কিছুই প্রয়োজনের তুলনায় কম। কলকাতার রফি আহমেদ ডেন্টাল কলেজ এবং হাসপাতাল সম্পর্কে এমনটাই রিপোর্ট দিল ডিসিআই (ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া)।

ডেন্টাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া দেশ জুড়ে সমস্ত ডেন্টাল মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে নজরদারি চালায়। অক্টোবরে ডিসিআইয়ের তরফ থেকে আর আহেমদ ডেন্টাল কলেজ পরিদর্শনে এসেছিলেন দুই সদস্য। তাঁদের পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করেই আর আহমেদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়েছে ডিসিআই। আর তাতেই আরও এক বার সামনে এসেছে বেহাল পরিকাঠামো।

কী কী ‘নেই’-এর কথা জানাচ্ছে ওই রিপোর্ট?

রিপোর্টে প্রথমেই উল্লেখ রয়েছে, ইন্ট্রাওরাল এক্স-রে ইউনিট, বায়োপসি কিট, আল্ট্রাসনিক ক্লিনার, বায়োমেট্রিক মেশিনের মতো বিভিন্ন প্রযোজনীয় যন্ত্র যথেষ্ট পরিমাণে নেই। সব মিলিয়ে নেই-এর সংখ্যাটা প্রায় দেড়শোর কাছাকাছি। এবং যে সব যন্ত্র রয়েছে সেগুলির ক্ষেত্রে এইআরবি (অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি বোর্ড) নির্দেশিত তেজস্ক্রিয়তা সংক্রান্ত নিয়মাবলী মানা হয় না। যা থেকে চিকিসক ও রোগী, দুইয়েরই ঝুঁকি রয়েছে।

এ তো গেল যন্ত্র। স্নাতকোত্তরে নেই ১২ জন শিক্ষক। নেই ৩৭ জন অশিক্ষক কর্মচারীও। কলেজের গ্রন্থাগারটির অবস্থাও তথৈবচ। দীর্ঘ দিন ধরে কোনও গ্রন্থাগারিক নেই। দীর্ঘ অব্যবহার ও অযত্নে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে বহুমূল্য সব বই। গ্রন্থাগার জুড়ে উইপোকার অবাধ আস্তানা। শুধু তা-ই নয়, ২০০৬ সালের পরে আর কোনও গবেষণাপত্রও প্রকাশিত হয়নি এখান থেকে।

রিপোর্টে জানানো হয়েছে, আর আহমেদ কলেজের হস্টেলের অবস্থা খুবই খারাপ। দীর্ঘ দিন ধরেই হস্টেলের রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। রীতিমতো বসবাসের অযোগ্য এবং অস্বাস্থ্যকর জায়গাতেই থাকতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। এ ছাড়াও ডেন্টাল কলেজের অন্যতম প্রয়োজনীয় সামগ্রী ডেন্টাল চেয়ারগুলিও বেহাল। মোট ১৩৯টি চেয়ারের মধ্যে অর্ধেকেরও বে‌শি চেয়ার জং ধরে কবেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নেই কোনও চলমান ডেন্টাল ভ্যানও।

তবে ডিসিআইয়ের রিপোর্টটি সম্প্রতি সামনে এলেও পড়ুয়াদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই এই অবস্থায় রয়েছে আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ। বার বার এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তাঁরা কোনও ব্যবস্থা নেননি। পড়ুয়ারা জানান, শিক্ষকের অভাবে ক্লাস হয় অনিয়মিত। যথেষ্ট শিক্ষাকর্মী না থাকায় আটকে যায় বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ। লাইব্রেরির অভাবে দামী বই বাইরে থেকে কিনে পড়তে অনেক সমস্যা হয়। আর হস্টেলের খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে সব কিছুর অবস্থা শোচনীয়। নিয়মিত পরিষ্কারের অভাবে জমে থাকে জঞ্জাল। আর তা থেকেই ছড়ায় ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো রোগ।

কলেজের ছাত্র অভিষেক হালদার বলেন, ‘‘ডিসিআই তো এখন রিপোর্ট দিল। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে আমরা যে কতটা কষ্ট করে রোগীদের পরিষেবা দিয়েছি সে আমরাই জানি। কর্তৃপক্ষকে বার বার জানিয়েও লাভ হয়নি। এখন এই রিপোর্ট পেয়ে যদি কিছু হয়।’’

কিন্তু ছাত্রদের অভিযোগের উত্তরে কর্তৃপক্ষ কী বলছেন?

আর আহমেদ কলেজের সুপার তপন গিরি বলেন, ‘‘এই রিপোর্ট পেয়ে আমরা স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি। পড়ুয়াদের সঙ্গেও কথা বলেছি। পরিকাঠামোগত কিছু ত্রুটি ছিল। সেগুলি যাতে দ্রুত ঠিক করা যায় তার চেষ্টা চলছে।’’

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ডিসিআইয়ের রিপোর্টে যে যে সমস্যার কথা বলা হয়েছে সে নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আর আহমেদ কলেজের পরিকাঠামোগত উন্নতির জন্য বেশ কিছু টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ধীরে ধীরে সব ঠিক করে দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE