Advertisement
২৮ এপ্রিল ২০২৪

জামাত নেতাকে ছাড়াতেই হানা, দাবি ঢাকার

ফাঁসির আসামি জামাতে ইসলামি নেতা মির কাসেম আলিকে জেল থেকে মুক্ত করাটাও গুলশনের জঙ্গি হানার অন্যতম লক্ষ্য ছিল বলে মনে করছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।

মির কাসেম আলি

মির কাসেম আলি

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৬
Share: Save:

ফাঁসির আসামি জামাতে ইসলামি নেতা মির কাসেম আলিকে জেল থেকে মুক্ত করাটাও গুলশনের জঙ্গি হানার অন্যতম লক্ষ্য ছিল বলে মনে করছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। হোলি আর্টিজান বেকারির জঙ্গি হামলা নিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি নয়াদিল্লিকে যে প্রাথমিক তথ্য দিয়েছে, তাতে এই সন্দেহের কথা জানানো হয়েছে। ঢাকার দাবি—পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। ভারতীয় গোয়েন্দা এবং গুপ্তচর সংস্থাগুলি এখন সেই তথ্যের বিশ্লেষণ করছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ নয়াদিল্লিকে জানিয়েছে, প্রাথমিক ভাবে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই পাঁচ জঙ্গিকে পাকিস্তানের বালুচিস্তানে দু’মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এর পরে চট্টগ্রাম হয়ে তাদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাইল্যান্ড থেকে এসেছিল জঙ্গিদের অস্ত্র। বিদেশিদের পণবন্দি করে মির কাসেম আলিকে মুক্ত করার পাশাপাশি সেনাদের বিদ্রোহে উস্কানি দেওয়াও উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গিদের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘ধনকুবের মির কাসেমকে মুক্ত করাটা লক্ষ্য হয়ে থাকতে পারে। যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে এখন একমাত্র তাঁর ফাঁসিই কার্যকর হওয়া বাকি। এই ফাঁসি আটকাতে নানা রকম চক্রান্ত চলছে। গোয়েন্দারা মনে করছেন, সাম্প্রতিক জঙ্গি তৎপরতাও তার অঙ্গ হতে পারে।’’

কে এই মির কাসেম আলি?

একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়ে খুনি আল বদর বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন চট্টগ্রামে তৎকালীন ছাত্রনেতা এই মির কাসেম। পরে জামাতে ইসলামির নেতা হন তিনি। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জিয়াদ আল মালুমের কথায়, ‘‘মির কাসেম ছিলেন জামাতের খাজাঞ্চি।’’ ১৯৮৩ সালে তিনি ইসলামি ব্যাঙ্ক স্থাপন করে তার প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান হন। কেয়ারি গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করে তার ১০টি কোম্পানির মাথাতেও ছিলেন কাসেম। টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনের রুটে তাঁর পাঁচটি বিলাসবহুল প্রমোদতরী চলে। বেশ কয়েকটি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ওষুধ কোম্পানির মালিক ইবনে সেনা ট্রাস্টেরও সদস্য তিনি। নয়া দিগন্ত নামে একটি দৈনিক পত্রিকা ও দিগন্ত টেলিভিশনেরও তিনি মালিক ছিলেন। সরকারি হিসেবে সব মিলিয়ে মির কাসেমের সম্পদের পরিমাণ অন্তত ১৪ হাজার কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক আদালতে নিজের বিচার প্রক্রিয়া চলার সময়ে মির কাসেম বিশ্বের নামী-দামি আইনজীবীদের নিয়োগ তো করেছিলেনই, বিচার বন্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রচারের জন্য বিপুল অর্থ নিয়োগ করে মার্কিন লবিস্টও নিয়োগ করেছিলেন। তাঁর ফাঁসির রায়ের পরে পাকিস্তানের আইনসভায় বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। তুরস্ক সরকারও ফাঁসি রদ চেয়ে ঢাকার কাছে সরকারি ভাবে আবেদন করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন বিদেশ দফতর থেকেও কাসেমের ফাঁসি রদ চেয়ে সওয়াল করা হয়েছিল।

বাংলাদেশের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি জানতে পেরেছে, হাসিনা সরকারকে ফেলে দেওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার ছক হিসাবে জঙ্গিগোষ্ঠীর হাতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা পৌঁছেছে। এই হামলার পিছনে সেই টাকাও থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ঢাকা।

বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের দাবি, শুক্রবার রাতে জঙ্গি হানা চলার সময়ে করাচি এবং মধ্য এশিয়ার মধ্যে কয়েক হাজার ফোন কল গিয়েছে। পাশাপাশি দুবাই, সিরিয়া থেকেও ওই সময় ঢাকায় অজস্র ফোন এসেছে এবং গিয়েছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দারা মনে করছেন, পণবন্দি অবস্থায় করাচি, আরব এবং ঢাকার মধ্যে অজস্র ফোনালাপ থেকেই স্পষ্ট হচ্ছে কোন কোন দেশ এই ঘটনার নেপথ্যে কলকাঠি নেড়েছে।

এ ছাড়া বেশ কিছু নির্দিষ্ট তথ্যও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে এসেছে। ওই পাঁচ জঙ্গির কাছেও আরব থেকে সরাসরি ফোন আসছিল। গুলশন-বনানী এলাকার ফোন পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিল সেনাবাহিনী। তার পরেও দেখা যায় ওই বেকারিতে কয়েকটি স্যাটেলাইট ফোন সক্রিয় রয়েছে। জঙ্গিরা স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে আরবের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। জঙ্গিরা সেনাবাহিনীর অফিসারদেরও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। বলেছিল, তা হলে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশে শরিয়ত আইন প্রতিষ্ঠা করা হবে।

ঢাকার পাঠানো ডশিয়ারে বলা হয়েছে, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার লন্ডনবাসী ছেলে তারেক জিয়ার ফোনও ১ জুলাই সারারাত ব্যস্ত ছিল। তাঁর ফোন থেকেও ঢাকা, করাচি ও আরবে কথা বলার প্রমাণ মিলেছে। গোয়েন্দাদের দাবি, তাঁর এক খাস চাকরের নামে নথিভুক্ত ফোনে সেই রাতে কথা বলছিলেন তারেক জিয়া।

বাংলাদেশ যে তথ্য পাঠিয়েছে তা বিশ্লেষণ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীও গুলশন হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে পাকিস্তান যোগের ব্যাপারে একমত। জঙ্গিরা শেখ হাসিনার উপর প্রাণঘাতী হামলার চেষ্টা করছে বলেও ভারতীয় গোয়েন্দারা জেনেছেন। এক
গোয়েন্দা কর্তার কথায়,‘‘বাংলাদেশে আগুন জ্বললে আমাদেরও তার আঁচ পোয়াতে হবে। তাই সতর্ক থাকতে হচ্ছে নয়াদিল্লিকে।’’ তিনি জানান, ঢাকাকে জঙ্গি দমনে সব রকম সহায়তা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jamaat leader bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE