ভরসা: নতুন ম্যাচ উইনার হতে পারেন পাণ্ড্য। ছবি: এএফপি।
একটা কথা আমি খুব বিশ্বাস করি। থামতে জানা একটা শিল্প। সবাই এই জিনিসটা জানে না। ভারতীয় ক্রিকেটে এ রকম ঘটনা প্রচুর আছে, যেখানে ক্রিকেটারদের কেরিয়ার খুব অপ্রীতিকর অবস্থায় থেমে গিয়েছে। অথচ নিজে থেকে সরে গেলে মাথা উঁচু করে যেতে পারত।
আগের দিনই খবরের কাগজে রাহুল দ্রাবিড়ের কথাগুলো পড়ছিলাম। আমি রাহুলের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং যুবরাজ সিংহের উত্তরসূরি খোঁজার সময় চলে এসেছে। আর দু’বছর বাদেই বিশ্বকাপ। সে কথা মাথায় রেখে নতুন প্রজন্মকে তৈরি করে নিতে হবে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভারতের যে টিমটা গিয়েছে, তার একটা ব্যাপার আমাকে খুব অবাক করেছে। দলে তিন জন উইকেটকিপারের উপস্থিতি। সেই ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ড সফরে তিন জন কিপার ছিল ভারতের। ফারুখ ইঞ্জিনিয়ার ওই সময় ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলছিল। ওকে ডেকে নেওয়া হয়। এ ছাড়া ছিল সৈয়দ কিরমানি এবং পোচিয়া কৃষ্ণমূর্তি। তার পর এ বার দেখলাম ক্যারিবিয়ানে গিয়েছে তিন জন কিপার— ধোনি, দীনেশ কার্তিক, ঋষভ পন্থ। কেন কার্তিককে নিয়ে যাওয়া হল আমার মাথায় ঢুকছে না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজেও কার্তিক টুরিস্ট হিসেবেই থেকে যাবে।
নির্বাচকদের উচিত ২০১৯ বিশ্বকাপের কথা ভেবে দল তৈরি করা। সেখানে কার্তিক তো আসেই না, এমনকী ধোনি বা যুবরাজও আসে না।
আরও পড়ুন: কোচ-ক্যাপ্টেন বেসুরে বাজলে কী হয় অতীতেও দেখেছে টিম ইন্ডিয়া
প্রথমে ধোনির কথায় আসি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ধোনিকে যে জন্য সবাই মনে রাখবে, সেটা হল ফিনিশার হিসেবে ওর ভূমিকা। কিন্তু সেই ফিনিশার ধোনি এখন অতীত। ৪০ ওভারের আগে ব্যাট করতে নামলে ও প্ল্যান করতে পারছে না কী ভাবে ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে সেটা খুব ভাল করে বোঝা গিয়েছে। আবার ৪০ ওভারের পরে নামলে খুব দ্রুত রান তুলতে পারছে না। একশোর বেশি স্ট্রাইক রেট এখন খুব কম ম্যাচে উঠছে ধোনির। কিপিংটা অবশ্য একই রকম আছে। কিন্তু সেটার রেখচিত্রও আর ওপরে উঠবে না।
প্রশ্ন: ভারতীয় দলে আর কত দিন দেখা যাবে যুবরাজ সিংহকে? পোর্ট অব স্পেনের অনুশীলনে।
ভারতীয় ক্রিকেটের সৌভাগ্য বলতে হবে, ফিনিশার হিসেবে আর এক জন প্লেয়ার কিন্তু উঠে এসেছে। হার্দিক পাণ্ড্য। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনালে ও নিজের প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছে। আইপিএলের বেশ কয়েকটা ম্যাচেও দুর্দান্ত ফিনিশ করেছে। হার্দিক কিন্তু ছ’নম্বরে নেমে ধোনির কাজটা করে দিতে পারে।
ধোনির উত্তরসূরি হিসেবে দু’জন উইকেটকিপারের কথা বলব। এক জন ঋষভ। অন্য জন, ঋদ্ধিমান সাহা। এই মুহূর্তে ভারতের তো বটেই, বিশ্বেরও অন্যতম সেরা কিপার ঋদ্ধি। আর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ব্যাটটাও ও খারাপ করে না। আইপিএলে সেটা আমরা বার বার দেখেছি।
কিন্তু প্রশ্ন হল, ধোনির মতো মেগাস্টার নিজে থেকে না সরলে কী হবে? ভারতীয় ক্রিকেটে এটা একটা দীর্ঘ দিনের সমস্যা। মনে আছে, আমি তখন জাতীয় নির্বাচক ছিলাম। ১৯৯৩-৯৪ সালের কথা। কপিল দেব তখন একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে গিয়েছে। উইকেট পাচ্ছে না, কিন্তু অবসরও নিচ্ছে না। অথচ আমাদের হাতে তখন রয়েছে টগবগে জাভাগাল শ্রীনাথ। ওকে খেলাতে পারছি না। আমরা তখন নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানকে (গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ) বললাম, কপিলকে গিয়ে অবসর নেওয়ার কথা বলতে। ভারতের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজেই ওর অবসরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বোর্ড থেকে ফেয়ারওয়েলের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। কিন্তু কপিল নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে গিয়ে অবসর নিল। তার পর থেকে শ্রীনাথও চুটিয়ে খেলা শুরু করল।
যুবরাজের কথায় বলব, সেই পুরনো যুবি আর নেই। ও এখন পাঁচ-ছ’টা ম্যাচ খেলে এক-আধটায় হয়তো পঞ্চাশ করবে। আমি বলব, ভারতের এই টিমটায় যুবরাজের বিকল্পও আছে। যুবি মিডল অর্ডারে চার-পাঁচ নম্বরে ব্যাট করে। সে জায়গার জন্য মণীশ পাণ্ডে আছে, ঋষভও আসতে পারে। এমনকী অজিঙ্ক রাহানে ওপেন না করলে ওকেও মিডল অর্ডারে ভাবা যায়। কিন্তু যাকেই সুযোগ দেওয়া হোক না কেন, দেখতে হবে তাকে যেন একটু বেশি সময় ধরে সুযোগ দেয় নির্বাচকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy