Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পচা খাবারের পরে এসি বিকল প্রিমিয়াম ট্রেনে

যেতে-আসতে বিপত্তি প্রিমিয়াম ট্রেনে! বুধবার রাতে বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়া আসার পথে প্রিমিয়াম এক্সপ্রেসে যাত্রীদের একাংশের বরাতে জুটেছিল নষ্ট রুটি, পচা মাংস। সেই পচা খাবার খেয়ে ট্রেনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

যেতে-আসতে বিপত্তি প্রিমিয়াম ট্রেনে!

বুধবার রাতে বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়া আসার পথে প্রিমিয়াম এক্সপ্রেসে যাত্রীদের একাংশের বরাতে জুটেছিল নষ্ট রুটি, পচা মাংস। সেই পচা খাবার খেয়ে ট্রেনের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। শুক্রবার হাওড়া থেকে বেঙ্গালুরুর পথে ওই ট্রেনের যাত্রীরা ফের পড়লেন বিপত্তিতে। এ বার একটি কামরায় বাতানুকূল যন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়ায় ট্রেনের মধ্যে দমবন্ধ করা পরিস্থিতি তৈরি হল।

ট্রেনটি ছাড়ার আগেই হাওড়া স্টেশনে যাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করে দেন। তাঁদের অভিযোগ, কোনও মতে জোড়াতালি দিয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র মেরামত করে প্রায় দু’ঘণ্টা দেরিতে ট্রেনটিকে হাওড়া থেকে রওনা করিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ছাড়ার কিছু পরেই একই কামরার বাতানুকূল যন্ত্রগুলি ফের বিকল হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা এ বার সাঁতরাগাছি স্টেশনে জোর করে ট্রেনটিকে থামিয়ে দেন। প্রায় এক ঘণ্টা ট্রেন আটকে রাখার পরে রেল-কর্তৃপক্ষ ওই ট্রেনে একটি নতুন কামরা জুড়ে দেন। এর ফলে সব মিলিয়ে প্রায় সওয়া তিন ঘণ্টা দেরিতে রওনা হয় প্রিমিয়াম ট্রেনটি।

বিমান-ভাড়ার কাছাকাছি টাকা দিয়ে প্রিমিয়াম ট্রেনের টিকিট কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের। টিকিটের ভাড়ার সঙ্গে ধরা থাকছে খাবারের দামও। কিন্তু সেই খাবার রাখার ‘ফ্রিজ’ বা ‘হটবক্স’ খারাপ হয়ে রয়েছে ট্রেনটির অনেক কামরাতেই। ফলে যাত্রীদের জন্য তোলা খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বুধবার রাতে পচে যাওয়া খাবার দেওয়া হয়েছিল অনেক যাত্রীকেই। সেই খাবার খেয়ে সারা রাত বমি, পায়খানা করেছেন অনেকে। আবার বহু যাত্রীই পচা খাবার মুখে না-তুলে সারা রাত কার্যত অভুক্ত থেকেছেন। হাওড়ায় পৌঁছে বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা অভিযোগ করেন, সাধারণ ট্রেনের কয়েক গুণ ভাড়া নিলেও প্রিমিয়াম ট্রেনে পরিষেবা দেওয়ার মতো কোনও পরিকাঠামোই তৈরি করা হয়নি। শুধু ভুক্তভোগী যাত্রীরাই ক্ষোভ উগরে দেননি। রেলকর্তাদেরও একাংশ অভিযোগ করেন, বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা রেলের পুরনো কামরা জুড়ে ভোটের আগে কোনও মতে এই ট্রেন চালু করে দেওয়া হয়েছে।

রেলকর্তাদের ওই অভিযোগ যে অতিরঞ্জিত ছিল না, শুক্রবার হাওড়া থেকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার প্রিমিয়াম ট্রেনে বি-২ কামরার বাতানুকূল যন্ত্র বিকল হওয়ার ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। রেল সূত্রের খবর, ট্রেনটি হাওড়া থেকে ছাড়ার কথা ছিল সওয়া ১টায়। হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে ওই কামরার যাত্রীরা দেখেন, বাতানুকূল যন্ত্রগুলি কাজ করছে না। ফলে প্রচণ্ড গরমে পুরো কামরাতেই দমবন্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কোনও ভাবে যদি বা সেই সব যন্ত্র মেরামত করা হল, ট্রেন ছাড়ার পরেই সেগুলো ফের গেল বিগড়ে। বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা সাঁতরাগাছিতে ট্রেন আটকে দাবি জানান, ওই কামরা পাল্টে না-দিলে তাঁরা ট্রেনটি ছাড়তে দেবেন না। বাধ্য হয়েই রেলকর্তারা অন্য একটি কামরা এনে ট্রেনটিতে জুড়ে দেন। বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ সেটি আবার যাত্রা শুরু করে।

যাত্রীরা প্রশ্ন তুলেছেন, সব চেয়ে বেশি ভাড়ার ট্রেনে বুধবার রাতে পচা খাবার দেওয়ার ঘটনায় রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম সংস্থা (আইআরসিটিসি)-র উপরে দায় চাপিয়ে দিয়েছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা। কিন্তু শুক্রবারের এই বাতানুকূল যন্ত্র বিভ্রাটের দায় কার উপরে বর্তাবে? যন্ত্র ঠিক চলছে কি না, এটা দেখার দায়িত্ব তো রেল-কর্তৃপক্ষেরই। কী বলবেন তাঁরা?

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার জানান, বুধবারের পচা খাবার কেন দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। জেনারেল ম্যানেজার ওই ঘটনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছেন। এ দিন বাতানুকূল যন্ত্র দফায় দফায় খারাপ হল কেন, তা-ও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

premium trains
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE