Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

সৃঞ্জয়কে জেরা, চ্যালেঞ্জ কুণালের

বুধবার সাত ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আবার ডেকে পাঠানো হল তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বসুকে। একই সঙ্গে এ দিন জেরার পরে ফের তলব করা হয়েছে তৃণমূল নেতা সমীর চক্রবর্তীকেও। এমন দিনে দুই তৃণমূল নেতাকে দ্বিতীয় বার হাজির হওয়ার নির্দেশ দিল সিবিআই, যে দিন আরও এক বার শাসক দলের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন কুণাল ঘোষ।

সিবিআই দফতরে সৃঞ্জয় বসু ও সমীর চক্রবর্তী। বুধবার।  ছবি: শৌভিক দে।

সিবিআই দফতরে সৃঞ্জয় বসু ও সমীর চক্রবর্তী। বুধবার। ছবি: শৌভিক দে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:২৮
Share: Save:

বুধবার সাত ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আবার ডেকে পাঠানো হল তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বসুকে। একই সঙ্গে এ দিন জেরার পরে ফের তলব করা হয়েছে তৃণমূল নেতা সমীর চক্রবর্তীকেও। এমন দিনে দুই তৃণমূল নেতাকে দ্বিতীয় বার হাজির হওয়ার নির্দেশ দিল সিবিআই, যে দিন আরও এক বার শাসক দলের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন কুণাল ঘোষ।

চার দিন আগে সিবিআই দফতরের সামনে বলেছিলেন, সারদা মিডিয়া থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সুবিধা যদি সব থেকে বেশি কারও কাছে পৌঁছে থাকে, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিচারকের সামনেও বলেছিলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে আমার ও সুদীপ্ত সেনের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হোক। বুধবার ফের তৃণমূলের সাসপেন্ডড সাংসদ কুণাল দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এক চিঠিতে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে লিখেছেন, “দলে যদি ১ শতাংশ সততা, স্বচ্ছতা, সাহস থাকে, তা হলে বিবৃতির যুদ্ধের বদলে তদন্ত কমিশন ডাকুন। সেখানে আমাকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দিন।”

কুণালের দাবি, দলের মধ্যে যাঁরা বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে জড়িত নন, যাঁরা সারদা থেকে টাকা নেননি, এমন সব নেতা-নেত্রীদের নিয়ে কমিশন গড়া হোক। এর জন্য দলকে ৭২ ঘণ্টা সময়ও দিয়েছেন তিনি।

কুণালের এই ‘চ্যালেঞ্জ’ যে দলের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছে, তা আড়ালে মেনে নিয়েছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশ। বিশেষ করে কুণাল এমন সময়ে এই ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়েছেন, যখন দলের সহ-সভাপতি রজত মজুমদার ধৃত, সাংসদ সৃঞ্জয় বসু এবং বিধাননগর পুরসভার তৃণমূল চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তীর স্বামী সমীর চক্রবর্তীকে ডেকে জেরা করেছে সিবিআই। নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্তকারীদের নানা তথ্য জোগাচ্ছেন কুণাল ও আসিফ।

দলের নেতাদের প্রতিক্রিয়াতেই এই অস্বস্তি স্পষ্ট। পার্থবাবু বলেন, “সাংবাদিক কুণাল ঘোষকে চিনতাম। কিন্তু জেলবন্দি কুণালকে আমি চিনি না এবং তাঁর কথার জবাব দেওয়ার দরকার আছে বলে মনে করি না। কারণ, এ সব তো তাঁকে দিয়ে বলানো হচ্ছে। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।” পার্থবাবুর পাশে বসে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “বামপন্থী দলে কমিশন হয়। কিন্তু ডানপন্থী পার্টিতে এ সব হয় না। আর দলে কমিশন বসিয়ে আমরা তো কাউকে জেল-জরিমানা করতে পারব না!”

বিরোধীরা অবশ্য কুণালের এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়েনি। এ দিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, “পার্থবাবু বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কমিশন বসানোর ক্ষমতা হবে না। কারণ, সারদা-তৃণমূল চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। কে কাকে দেখবে?” বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ-র মন্তব্য, “দলের সর্বোচ্চ নেতা-নেত্রীকে বাদ দিয়ে পার্থবাবুর কাছে কুণাল দলীয় তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন। অর্থাৎ কুণাল বুঝিয়ে দিয়েছেন, পার্থবাবুর ওপরে যাঁরা আছেন তাঁরাও সারদা-কাণ্ডে জড়িত।”

কুণাল এক সময় যে সংবাদপত্রে কাজ করেছেন, এ দিন তার সম্পাদক সৃঞ্জয়কে সকাল সাড়ে আটটা থেকে সল্টলেকে সিবিআই দফতরে জেরা করে সিবিআই। কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রের খবর, কুণাল এবং সৃঞ্জয় দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের কাছ থেকে কবে, কত টাকা তাঁরা নিয়েছেন, তার বিস্তারিত তথ্য জানতে চান সিবিআই অফিসারেরা।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ২০১৩ সালের ৬ এপ্রিল সুদীপ্ত যে চিঠি সিবিআইকে লিখেছিলেন, সেখানে তাঁর অভিযোগ ছিল, শেষ দু’বছরে তাঁর কাছ থেকে ২০ কোটি টাকা নিয়েছেন সৃঞ্জয়বাবু। সেই টাকা তিনি চেক-এ দিয়েছেন। তা ছাড়াও অনেক সময় অনেক কারণ দেখিয়ে সৃঞ্জয়বাবু নগদ টাকা নিয়েছেন তাঁর কাছ থেকে। এ সমস্ত কথাই জেরার মুখে সিবিআই অফিসারদের জানিয়েছেন সুদীপ্ত। তাঁকে ও কুণালকে জেরা করার পরে এই সব তথ্য খতিয়ে দেখেই সিবিআই এ দিন ডেকে পাঠিয়েছিল সৃঞ্জয়বাবুকে। সিবিআই সূত্রের আরও খবর, অভিযোগ উঠেছে, ২০১১ সালে ওডাফাকে যে দু’কোটি দিয়ে দলে নিয়েছিল মোহনবাগান, সেই টাকাও সুদীপ্তর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছিল। এ নিয়েও প্রশ্ন করা হতে পারে।

সুদীপ্ত-র অভিযোগ, এক সময়ে তাঁর সারদা সংস্থার বিরুদ্ধে নিয়ম করে আক্রমণ শানিয়েছিলেন কুণাল। সেই আক্রমণ করা হয়েছিল সৃঞ্জয়বাবুর বাংলা দৈনিকের মাধ্যমেই। আর তখনই সুদীপ্ত স্থির করেন, তিনি নিজে সংবাদমাধ্যম কিনবেন। এর কয়েক দিনের মধ্যেই চ্যানেল টেন কেনার প্রস্তাব নিয়ে ব্যবসায়ী শান্তনু ঘোষ তাঁর কাছে আসেন। সুদীপ্ত লিখছেন, “ওই চ্যানেল কেনাটা আমার বড় ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।” সুদীপ্ত-র অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি চ্যানেল কেনার পরেই তাঁর সঙ্গে সমঝোতায় চলে আসেন কুণাল এবং সৃঞ্জয়বাবু। লিখিত চুক্তি হয় যে, প্রতি মাসে সৃঞ্জয়বাবুর বাংলা দৈনিককে ৬০ লক্ষ টাকা করে দেবেন সুদীপ্ত। সারদা-কর্তার দাবি, ঠিক হয়েছিল, সারদার বিভিন্ন ব্যবসায় যাতে সমস্যা না হয়, তার দায়িত্ব নেবে ওই সংবাদপত্র গোষ্ঠী। সেই চুক্তি মারফতই ঠিক হয়েছিল, কুণালকে মাসিক ১৫ লক্ষ টাকায় সারদার মিডিয়া ব্যবসার ‘সিইও’ এবং অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে মাসে ২০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ব্যবসার ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ করা হবে। সুদীপ্তর অভিযোগ, মাত্র একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন মিঠুন। এ দিন সৃঞ্জয়বাবুকে ডেকে এ সমস্ত অভিযোগই খতিয়ে দেখছে সিবিআই।

এ দিন জেরার পরে সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে সৃঞ্জয়বাবু বলেন, “সারদার সঙ্গে আমাদের চুক্তি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন সিবিআই অফিসারেরা। আমি ওঁদের সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।”

সমীরবাবুকে প্রায় চার ঘণ্টা জেরা করে সিবিআই। সারদা-কর্তা ধরা পড়ার পরে তাঁর ‘চ্যানেল টেন’-এ বিনিয়োগ করেছিলেন সমীরবাবু। এ দিন জেরার পরে তিনি বলেন, “আমি কারও কাছ থেকে টাকা নিইনি। উল্টে ১ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা দিয়ে গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে এ বছরের মে পর্যন্ত চ্যানেল টেন চালিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE